হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের দেখা মেলে না। দালাল চক্রের রমরমায় অতিষ্ঠ রোগীর বাড়ির লোকজন। অহরহ অন্যত্র ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় রোগীদের। কালনা মহকুমা হাসপাতাল নিয়ে মাঝে-মধ্যেই ওঠে এমন সব অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল ঘুরে দেখলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরাতে তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। আর পরিদর্শনের সময়ে হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখে ওই দলের নেতৃত্বে থাকা হুগলির সাংসদ রত্না দে নাগ বলেই ফেললেন, “এ সব কী হচ্ছে!”
বিকেল পর্যন্ত কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ কালনায় পৌঁছয় ওই প্রতিনিধি দল। হাসপাতাল সুপারের কার্যালয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মী, স্থানীয় বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে সেই বৈঠক। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে সাংসদ কাজকর্মের নথিপত্র দেখতে চান। দুই শল্য চিকিৎসক গত দু’মাসে মাত্র তিনটি অস্ত্রোপচার করেছেন দেখে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। চক্ষু বিভাগেও অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কম কেন, তা জানতে চান তিনি। চক্ষু চিকিৎসক পরিকাঠামোগত নানা সমস্যার কথা জানান। বৈঠকে উঠে আসে প্যাথলজি বিভাগের নানা সমস্যার কথাও। এই বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক নিজের ইচ্ছে মতো আসা-যাওয়া করেন বলেও অভিযোগ ওঠে। সাংসদ সুপারের কাছে চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের ‘ভাল কাজ না করার’ ব্যাখ্যা চান। সুপার অভিরূপ মণ্ডল সাফ জানান, চিকিৎসকদের অনেকে তাঁর কথা শোনেন না। শো-কজ করলেও তার উত্তর দেন না। এ ছাড়া চিকিৎসকের অভাব-সহ হাসপাতালের পরিকাঠামো গত নানা সমস্যার কথা জানান তিনি। বৈঠকে উপস্থিত কালনার এসিএমওএইচ সুভাষচন্দ্র মণ্ডলও সাংসদের কাছে পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান। |
বৈঠকের পরে রত্নাদেবী হাসপাতাল ঘুরে দেখতে বেরোন। আর তখনই নানা ওয়ার্ডের পরিস্থিতি দেখে চোখ কপালে ওঠে তাঁর। প্রথমে জরুরি বিভাগে হাজির হন তিনি। ফাঁকা ঘরে টেবিলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিল তুলো, গজ-সহ নানা সরঞ্জাম। ডাকাডাকির পরে খোঁজ মিলল এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর। রত্নাদেবী জরুরি বিভাগের যন্ত্রপাতি দেখতে চাওয়ায় তিনিই আলমারি থেকে বের করলেন ছুরি-কাঁচির একটি বাক্স। সাংসদ জানতে চাইলেন, আলাদা ভাবে কেন সব যন্ত্র সাজিয়ে রাখা হয় না। সদুত্তর মিলল না।
হাসপাতালের নানা ওয়ার্ডে যাওয়ার সময়ে উৎসুক বেশ কিছু মানুষজন সাংসদ-সহ ওই প্রতিনিধি দলের পিছু নেন। রত্নাদেবী বারণ করা সত্ত্বেও তাঁরা ভিতরে ঢুকতে চান। বিরক্ত সাংসদ হাসপাতালের রক্ষীকে ধমক দেন, “আপনি কী করছেন? নিজের কাজ ঠিক করে করুন।” এর পরে পুরুষ শল্য বিভাগ, রন্ধনশালা, মেডিসিন বিভাগ, শিশু বিভাগ, অপারেশন থিয়েটর ঘুরে দেখে বিশেষজ্ঞ দলটি। বন্ধ রন্ধনশালা ও অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন রত্নাদেবী। মাঝে তাঁর পথ আটকে দাঁড়ান এক দল মহিলা। তাঁরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। যাঁরা আছেন তাঁরা ঠিক মতো দেখেন না। এই হাসপাতালে আসা বা না আসার মধ্যে কোনও তফাত নেই বলে দাবি করেন তাঁরা।
পরিদর্শন সেরে ফেরার সময়ে পুরুষ শল্য বিভাগের বারান্দায় সাংসদ দেখেন, হাতে স্যালাইনের নল লাগানো এক রোগী হেঁটে যাচ্ছেন। স্যালাইনের বোতল ধরে পাশে পাশে চলেছে আর এক জন। এ দৃশ্য দেখেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন রত্নাদেবী। সুপারকে তিনি বলেন, “এ সব কী হচ্ছে? এ ভাবে রোগীদের ছাড়া হচ্ছে কেন?” কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেন সুপার।
হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে অবশ্য রত্নাদেবী কোনও কথা বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “যা জিজ্ঞাসা করার, বিধায়ককে করুন।” তিনি হাসপাতাল ছাড়ার পরে কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, “সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে গেলেন ওঁরা। হাসপাতালের উন্নয়নের ব্যপারে নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি, এ বার কিছু হবে।” |