|
নদী, শহরকে
ভালবাসুক সকলে |
|
১৬ জুন, শনিবার শিলিগুড়িতে হাসমি চক লাগোয়া পূর্ত দফতরের বাংলোর কনফারেন্স হলে আনন্দবাজারের
পাঠকদের মুখোমুখি হন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। মহাবীরস্থান থেকে মহানন্দা,
চম্পাসারি থেকে ফুলেশ্বরী এলাকার দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়।
অনুষ্ঠানের বাছাই প্রশ্নোত্তরের প্রথম পর্ব আজ প্রকাশিত হল। |
|
যানজটে জেরবার শিলিগুড়ির মানুষ। হিলকার্ট রোডে হাঁটা দায়। কোর্ট মোড় থেকে মহানন্দা সেতু, সেবক মোড় থেকে পানিট্যাঙ্কি মোড় পর্যন্ত উড়ালপুল করা যায় না?
রতন বিশ্বাস, লেখক ও গবেষক
যানজটটা সত্যিই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা কমাতে নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বৈঠক হয়ে থাকে। উড়ালপুল তৈরির বিষয়টা বড় মাপের পরিকল্পনায় থাকা দরকার। পরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। |
|
মহানন্দার করুণ পরিস্থিতি। খাটাল উচ্ছেদ করা গেল না। পাড়ে কাছে থাকা বসতির অবর্জনা বর্ষায় জলে মেশে। মৃত প্রাণীও নদীতে ভাসতে দেখা যায়। এই দূষণ থেকে নদীকে মুক্ত করতে কী ভাবছেন? পাড়ে গাছ লাগালে ভাল হত। যাঁরা নদী দিনের পর দিন দূষিত করে চলেছেন, তাঁরা কী শিলিগুড়িকে ভালবাসেন? এ নিয়ে সন্দেহ হওয়া কী অযৌক্তিক?
অনিমেষ বসু, মুখপাত্র, ন্যাফ
একা পুরসভা পারবে না। মহানন্দাকে বাঁচাতে সকলের সাহায্য জরুরি। একসময়ে খাটাল উচ্ছেদ নিয়ে পুরসভা উদ্যোগী হয়। খাটাল মালিকেরা সমস্ত ওয়ার্ড থেকে আন্দোলনে নামেন। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, অনেকের অন্যত্র জমি থাকলেও খাটাল সরাচ্ছেন না। সে জন্য খাটাল উচ্ছেদের কাজ থমকে যায়। আমরা আবার নদী লাগোয়া এলাকার কাউন্সিলরদের সাহায্য চাইব। আশা করি খাটাল উচ্ছেদে সাহায্য মিলবে। না হলে খাটাল মালিকরা শিলিগুড়ির ভাল চান কি না সেই প্রশ্নে গোটা শহরের পরিবেশপ্রেমীরা আরও সরব হতেই পারেন। সত্যি বলতে কি আমিও মহানন্দায় মৃত গরু পড়ে থাকতে দেখি। এটা আর বরদাস্ত করা যাবে না। মহানন্দার নদীখাত গভীর করাটা খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ করব। আরও একটা বিষয়ে জানিয়ে দিই, শ্মশানঘাটে তৃতীয় চুল্লি হবে। সেখানে বাগান করা হবে। ক্যানেল কেটে ঘাটের কাছে জল আনার ব্যবস্থা করা হবে। নাগরিকদের আমার অনুরোধ, শিলিগুড়িকে ভালবাসুন। মহানন্দাকে বাঁচাতে একজোট হোন। |
|
ফুলেশ্বরীর এমন হাল কেন? নদীর পাড়ে দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। জোড়াপানি নদীরও বেহাল দশা। ফুলেশ্বরীকে বাঁচানোর উপায় কী?
মহুয়া চৌধুরী, সংস্কৃতি কর্মী
ফুলেশ্বরী, জোড়াপাড়ির খাত খুঁড়ে গভীর করতে পারলে ভাল হয়। ড্রেজিং করার ক্ষেত্রে যে যন্ত্র ব্যবহার হয় তার একদিনের ভাড়া ১৬ হাজার টাকা। সেই ব্যয় করার ক্ষমতা পুরসভার নেই। এর পাশাপাশি মহানন্দা, জোড়াপানি, ফুলেশ্বরী পঞ্চনইকে এক করে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানকে বাস্তবায়িত করার জন্য এসজেডিএ-কে বলা হবে। |
|
|
সঞ্চালনায় ছিলেন কিশোর সাহা। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
ইসকন মন্দির রোডে আমার বাড়ি। এলাকায় মশার উপদ্রবে থাকা যায় না। কেউ বাড়িতে এলে মশার জন্য থাকতে চান না। ছেলে মশারি টাঙিয়ে পড়ে। নিকাশি কাজ করে না। জল দাঁড়িয়ে থাকে। কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
সামসুল আলম, শিক্ষক
মশা দমনের কাজ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। মশা মারার যে তেল ব্যবহার করা হত তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নতুন যে তেল ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে মশা মরছে না। বাড়িগুলিতে অবশ্য স্প্রে করা হচ্ছে, ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে কী করা যায় দেখছি। |
|
নর্দমা এক সময় পাকা ছিল না। জল মাটিতে শুকিয়ে যেত। কিন্তু এখন নর্দমার ঢাল ঠিক নেই। এটা ঠিক করা জরুরি। যথেষ্ট বাস্তুকার নেই নাকি?
জয়ন্ত ভৌমিক, ক্রিকেট প্রশিক্ষক
এটাও একটা সমস্যা। শিলিগুড়ি কর্পোরেশন হলেও সেই মতো কর্মী আধিকারিক নেই। বাস্তুকারের সংখ্যা কম। দু’জন মাত্র বিই ইঞ্জিনিয়র আছেন। একজন এগজিকিউটিভ এবং এক জন সহকারি বাস্তুকার। বাকিরা সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র। বরো অফিসের আধিকারিকের স্থায়ী পদ নেই। শহরে ৫ লক্ষর বেশি জনসংখ্যা। ৪৭ টি ওয়ার্ডের কাজ তাদের পক্ষে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। বিল্ডিং বিভাগে ৩ জন বাস্তুকার। প্ল্যান পাশ করাতে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। পরিকাঠামো না বাড়ালে মুশকিল। নর্দমার ঢাল ঠিক নেই ঠিকই। তবু কী করা যায় দেখব। ইঁদুরের উৎপাতে বহু নর্দমা নষ্ট হচ্ছে। |
|
গুরুঙ্গবস্তি, প্রধাননগর, চম্পাসারিতে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। বাসিন্দারাও বিক্রেতার কাছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চাইছেন।
সুপর্ণা সেন, শিক্ষিকা
আমরা নজরদারি বাড়াব। বাসিন্দাদেরও আরও সচেতন হওয়ার অনুরোধ করব। মহাবীরস্থানেও কিছু ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। বিষয়গুলি ডেপুটি মেয়রকে বলেছি। কাজও হচ্ছে। ঘোঘোমালিতে ব্যবহার হচ্ছিল। বন্ধ করা হয়েছে। |
|
শহরের অনেক জায়গাতেই নর্দমার জল স্থির। কোথাও আবার নিকাশির জল কোথায় যাচ্ছে তার ঠিক নেই। নিকাশির সুষ্ঠু পরিকল্পনা কবে হবে?
মীনাক্ষী ঘোষ, শিক্ষিকা
ঠিক বলেছেন। আগে নর্দমা হলেও জল যাতে যায় সেই ব্যবস্থা অনেক জায়গাতেই হয়নি। ৬,৭,৮, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জল ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গড়িয়ে ওই এলাকাকে ভাসায়। ভূগর্ভস্থ নিকাশির ব্যবস্থা করা দরকার। সেই জন্য অনেক টাকাও চাই। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। |
|
শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত পার্ক নেই। যে পার্ক রয়েছে সেখানে খেলার সরঞ্জাম নেই। ২ থেকে ৩টি ওয়ার্ড মিলে একটা পার্ক হলে ভাল হয়।
অর্ঘ্য চক্রবর্তী, ছাত্র
শিলিগুড়ি শহরে পার্ক নেই তা নয়। ছেলেমেয়েদের সূর্যসেন পার্কে নিয়ে যান। সেখানে বোটিং, ট্রয় ট্রেনের ব্যবস্থা করা হবে। সুব্রত সঙ্ঘের পার্ক রয়েছে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রিকোণ পার্কে খেলনা লাগানো হয়েছে। শহরে নতুন করে পার্ক তৈরির জায়গার অভাব রয়েছে। |
|
জলপাইগুড়ি বাড়ছে। সার্কিট বেঞ্চও হবে। শহর কবে কর্পোরেশন হবে?
নীহার মজুমদার, চিত্রশিল্পী।
জলপাইগুড়িতে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। পরিষেবার মান বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। পুরসভার আওতায় আশেপাশের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারাও আসতে চাইছেন। জলপাইগুড়ি পুরসভাকে কর্পোরেশনে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করিয়েছি। প্রশাসনের তরফে শহর ও লাগোয়া পঞ্চায়েতের বিশদ বিবরণ সংবলিত রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে জলপাইগুড়ি কর্পোরেশন হতে খুব বেশি দেরি হওয়ার কথা নয়। আশা করি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ওই কাজটি তাড়াতাড়ি করার ব্যাপারে সাহায্য করবে। কর্পোরেশন যাতে দ্রুত হয়, সে জন্য জলপাইগুড়ির সব স্তরের বাসিন্দাদের আরও সরব হতে হবে। |
|
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনের জের |
৮ জুন জলপাইগুড়ি পুরসভায় আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু।
জলপাইগুড়ি শহরের নানা সমস্যা, সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। পাঠকদের তরফে শহরের
যান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে
পুর-উদ্যোগ গ্রহণের আর্জি জানানো হলে স্পষ্ট আশ্বাস দেন চেয়ারম্যান। ১৯ দিনের
মাথায়
বুধবার শহরের যান নিয়ন্ত্রণে
ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ‘সবুজ বাহিনী’ নামাল
পুরসভা। বিশেষ প্রশিক্ষণ
প্রাপ্ত সবুজ বাহিনীর সদস্যরা যান নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবেন। |
মোহন উবাচ |
শহরবাসীদের আর্জি শুনেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যানজটের বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছে। পুরসভার তরফে পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া শহরবাসীকে আপাতত কিছুটা স্বস্তি দিতে সবুজ বাহিনী নামানো হয়েছে। |
|
ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
খুব ভাল হয়েছে। এ ভাবে দ্রুত পদক্ষেপ করা হলে সব ধরনের সমস্যারই সমাধান সম্ভব। তনুশ্রী পাল, সংস্কৃতিকর্মী
আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ায় ভাল লাগছে। এত দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য পুরসভার চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ।
অর্পণা বাগচী, প্রধান শিক্ষিকা
পুরসভার চেয়ারম্যানকে বিশেষ অভিনন্দন জানাই। এর ফলে নাগরিকদের ভোগান্তি অনেক কমবে। সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী, সম্পাদক, জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার |
(চলবে)। |
|