নয়াদিল্লির পরে এ বার বিমল গুরুঙ্গের গন্তব্য কলকাতা। আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন গুরুঙ্গের নেতৃত্বাধীন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
মহাকরণ সূত্রের খবর, আজ বিকেল ৩টে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুঙ্গদের দেখা করার কথা। ওই বৈঠকের পরে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) গঠনের ভোটে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে মোর্চার অবস্থান আরও কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে বলে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা আশা করছেন। মোর্চার তরফে এ দিন কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্য জানান, কেন্দ্রের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ভোটে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে গুরুঙ্গ আগেই ‘সুর নরম’ করেছেন। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই কথা বললে, তা মেনে নেওয়ার বিষয়টি তাঁদের ‘গুরুত্ব দিয়ে’ ভাবতে হবে। রাজ্যের তরফে পাহাড়ের বিষয়গুলি যে শীর্ষ কর্তারা দেখভাল করছেন, তাঁরাও ওই বৈঠক ‘ফলপ্রসূ’ হবে বলেই আশাবাদী। কারণ, নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম জিটিএ ভোটে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করলে, তা সরাসরি প্রত্যাখ্যানের রাস্তায় হাঁটেননি গুরুঙ্গ। রাজ্য সরকারও যে মোর্চাকে ভোটে যোগ দিয়ে জিটিএ গড়ে পাহাড়ে উন্নয়ন-প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার অনুরোধ করবে, তা নিয়ে সরকারি কর্তাদের অনেকেরই সংশয় নেই। এমতাবস্থায় শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ নিয়ে আপত্তি জানালেও কেন্দ্র ও রাজ্যের অনুরোধের বিষয়টি সামনে রেখে ‘পাহাড়ের উন্নয়নের স্বার্থে ভোটে যেতে হচ্ছে’ বলার সুযোগও মোর্চার সামনে থাকবে।
মোর্চা সূত্রেই জানা গিয়েছে, আরও দু’টি বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জিটিএ ভোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন গুরুঙ্গরা। প্রথমত, জিটিএ ভোটের পরে তারা ক্ষমতা দখল করলে (যে ব্যাপারে গুরুঙ্গ প্রত্যয়ী) জিটিএ-তে রাজ্যপাল মনোনীত ৫ সদস্যের ব্যাপারেও তাদের মতামত নেওয়া হবে বলে নিশ্চিত হতে চাইছে মোর্চা। দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি পাহাড়ে তৃণমূল সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে করতে শুরু করায় মোর্চার বিরোধী শিবিরের একাংশ তাতে সামিল হচ্ছে। মোর্চা নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, জিটিএ ভোটে তৃণমূল প্রার্থী দিলে, মোর্চা বিরোধীদের একাংশ তাদের সমর্থন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিছু আসনে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে মোর্চাকে। সেই ‘পরিস্থিতি’ যাতে না হয়, তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সেই প্রসঙ্গও তুলতে চান মোর্চা নেতৃত্ব।
বস্তুত, জিটিএ ভোটে যাওয়ার পক্ষে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ আগে থেকেই সওয়াল করছেন। মোর্চা অন্দরের খবর, গত রবিবার দার্জিলিঙে জিমখানা হলে দলীয় সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির যে ১০ জন নেতা বক্তব্য পেশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ৮ জনই ভোটে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবুও রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে এখনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি গুরুঙ্গ। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক প্রবীণ নেতা বলেন, “বিশদে বলছি না। এটা বলতে পারি, দলের সভাপতি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন।” |