চেক নিয়ে নিলেই ভাল হত, ‘অন্য সুর’ শোনাল সিঙ্গুর
‘অন্য সুর’ শোনা যাচ্ছে সিঙ্গুরে। সুরটা ক্ষীণ, তবু রয়েছে।
সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষি-খেতমজুরদের সরকারি সাহায্য মাসে ১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার টাকা হবে বলে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণে ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জমিহারা পরিবারের এক বধূ বলে ফেললেন, “জমির দামের চেক নিয়ে নিলেই বোধ হয় আরও ভাল হত!” অনিচ্ছুক চাষি-পরিবারের মধ্যে এই সুর তো আগে শোনা যায়নি! তবে কি হতাশা ক্রমেই গ্রাস করছে তাঁদের? হতাশা আছে। সে জন্যই জমি-বিতর্ক সরকার আদালতের বাইরে মিটিয়ে ফেলুক, এমন চিন্তাও ঘুরপাক খাচ্ছে কারও কারও মনে। কারণ, প্রতিপদে অনিচ্ছুক চাষিরা বুঝতে পারছেন, আইনি লড়াই যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই ঝাপসা হবে জমি ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা।
এ দিন বিকেলে বেড়াবেড়ির বাসিন্দা কল্পনা দাস তাই বললেন, “সংসারে এগারোটা পেট। ৬০০-৭০০ টাকা তো সপ্তাহে মুদির দোকানেই লাগে। গলা পর্যন্ত দেনায় ডুবে আছি।” কল্পনাদেবীদের বিঘা ছ’য়েক জমি টাটাদের প্রকল্প এলাকায় গিয়েছে। মধ্যবয়সী এই মহিলার কথায়, “এখন মনে হচ্ছে, চেক নিয়ে নিলেই ভাল হত। ভাবছি, প্রশাসন বললে চেক নিয়েই নেব। এ ভাবে আর সংসার চালানো যাচ্ছে না।’’ কিন্তু সরকার তো মাসে মাসে দু’হাজার টাকা দেবে বলেছে। মাস দেড়েক কেটে গেলেও পূর্ব-ঘোষণা মতো মাসে এক হাজার টাকা আর্থিক অনুদান এখনও পাননি কল্পনাদেবীরা। এ দিন অনুদান বাড়ানোর ঘোষণা শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “মন্দের ভাল হল। কিন্তু প্রতি মাসে দেবে তো?”
ভাবছি, প্রশাসন বললে চেক
নিয়েই নেব। এ ভাবে আর সংসার
চালানো যাচ্ছে না। গলা পর্যন্ত
দেনায় ডুবে আছি।
কল্পনা দাস
দু’হাজার টাকায় কিছু সুরাহা হয়
তো হবে। কিন্তু সরকার আদালতের
বাইরে গিয়ে কোনও ব্যবস্থা
করতে পারে না?
হারাধন দাস
এই প্রশ্নটা আরও অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বেড়াবেড়িরই অনিচ্ছুক চাষি হারাধন দাস বলেন, “সংসারের এমন হাল, ছেলের বউটাকেও এখন দিনমজুরিতে পাঠাতে হচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে লড়াই চলছে। আর পারছি না। দু’হাজার টাকায় কিছুটা সুরাহা হয় তো হবে, কিন্তু সরকার কি আদালতের বাইরে গিয়ে কোনও ব্যবস্থা করতে পারে না?”
সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, বর্তমানে হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না অবশ্য সরকারি ঘোষণায় উজ্জীবিত। বললেন, “অনেকে সরকারকে দোষারোপ করছে বটে, কিন্তু আমরা দেখিয়ে দিতে চাই, তৃণমূল অনিচ্ছুক চাষি-খেতমজুরদের পাশেই আছে।” শনিবার থেকেই সিঙ্গুরে ফের আন্দোলনের তোড়জোড় শুরু করছে তৃণমূল। ওই দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মিছিল হবে সেখানে। কিন্তু দু’হাজার টাকা মাসিক ভাতা-সংক্রান্ত সরকারি ঘোষণায় সিঙ্গুরে তেমন উচ্ছ্বাস চোখে পড়ল কই? বেচারামের দাবি, “বিকেলের দিকে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সকলে এখনও ভাল মতো খবর পাননি। আমরা যেমন ওঁদের পাশে আছি, অনিচ্ছুক চাষি-খেতমজুররাও আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে প্রস্তুত।” সরকারি ঘোষণাকে ‘সাধুবাদ’ দিয়েও সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “সমস্যার মূলে যাওয়ার চেষ্টাই তো দেখছি না! এই শুনছি মিটিং-মিছিল হবে। সে সব কার বিরুদ্ধে? জমি সমস্যার সমাধানে সদিচ্ছা চাই।” সরকারি সেই ‘সদিচ্ছার’ দিকেই এখন তাকিয়ে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষি-পরিবারগুলি। কাশীনাথ দাসের ১৫ কাঠা জমি প্রকল্প এলাকার মধ্যে গিয়েছে। বাকি ১১ কাঠা জমিতে টুকটাক চাষবাস করেন। হতাশ গলায় বললেন, “আগে সিঙ্গুরের জমিতে যত ফসল ফলত, তাতে শহরের লোক সিঙ্গুরের উপরে নির্ভর করত। এখন আমাদেরই বাজার থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে পটল কিনে খেতে হয়!” অনিচ্ছুকদের হতাশার আঁচ পাচ্ছে প্রশাসনও। এ দিনই সিঙ্গুর ব্লক অফিসে বৈঠকে বসেন জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন। ছিলেন সিঙ্গুরের বিধায়ক তথা কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, বেচারাম মান্না। জেলাশাসক জানান, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ চলছে। তা দ্রুত শেষ হবে। তার পরেই মিলবে সরকারি অনুদানের টাকা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.