পরিচয়হীন যুবকের আশ্রয় সরকারি হাসপাতাল |
শরীরের নানা জায়গায় ক্ষত নিয়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা বছর বাইশের যুবকটিকে প্রায় দু’বছর আগে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন কয়েক জন। পৌঁছে দিয়েই অবশ্য তাঁরা চলে যান। গুরুতর অসুস্থ এক জনকে চিকিৎসা না করে ফেরানোর কথা ভাবেননি ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ভর্তি করে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। ওষুধপত্রেরও ব্যবস্থা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই। একটু সুস্থ হওয়ার পরেও অবশ্য যুবকটি নিজের নাম-ঠিকানা জানাতে পারেননি। কথা বলতেই যে পারেন না। |
ঘাটাল হাসপাতালে মেহেবুব। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
যুবকটির নার্ভের সমস্যাও ধরা পড়ে মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসায়। অথচ নার্ভের অসুখের চিকিৎসা-পরিকাঠামোই যে নেই এখানে! চিকিৎসকেরা যে অন্যত্র ‘রেফার’ করবেন, অজ্ঞাত নাম-পরিচয়ের যুবককে কেই-বা নিয়ে যাবেন? অন্যত্র পাঠানোও যায়নি। বাড়ি কোথায়---জানতে না পারায় ফেরানো যায়নি সেখানেও। অতএব, ২০১০-এর সেই ১ সেপ্টেম্বর থেকেই ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালই ঠিকানা ওই যুবকের। ঘরবাড়ি হয়ে ওঠা হাসপাতালই তাঁর নামকরণ করেছেমেহেবুব। হাসপাতালের সুপার-নার্স-কর্মীরা, অন্য রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রাই আজ ওই যুবকের বন্ধু-পরিজন। সকালে টিফিন করানো থেকে স্নান, দুপুর-রাতের খাওয়া---সব কিছুরই দেখভাল করেন হাসপাতালের এক কর্মীর স্ত্রী।
একমাথা চুল, ফর্সা, প্রায় ৫ ফুট উচ্চতার যুবকটি নার্ভের সমস্যায় ইদানীং হাঁটাচলাও তেমন করতে পারেন না। কথা বলতে না পারলেও অবশ্য ইঙ্গিতে অনেক কিছুই বুঝিয়ে দেন। হাসপাতালের সুপার অনুরাধা দেবের দুঃখ, “এখনও যদি ছেলেটার নার্ভের সমস্যার ঠিকঠাক চিকিৎসা শুরু করা যেত, হয়তো অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠত। কিন্তু আমাদের এখানে যে পুরো পরিকাঠামো নেই।” সুপার জানান, স্থানীয় থানা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দফতরের উপরমহলেও সব কিছু জানানো হয়েছে। যুবকটির নাম-পরিচয় এবং ঠিকানা জানারও সব রকমের চেষ্টা চলছে। এত দিনে মায়া পড়ে যাওয়া ছেলেটিকে কাছছাড়া করতে গেলে কষ্ট হবে মেনেও নার্স-কর্মীরাও চান, ঘরে ফিরুন তাঁদের মেহেবুব। বাড়ির লোকের যত্নে সেরে উঠুন, সুস্থ জীবন পান। |