দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকেছে প্রায় সাত দিন আগে। মেঘ-ছায়ায় সপ্তাহ গড়ানোর পরে অবশেষে একটা সম্পূর্ণ বৃষ্টিভেজা দিন পেল কলকাতা। রবিবারের মহানগরে পুরোদস্তুর ‘রেনি ডে’র আমেজ।
এ দিন ভোরে কলকাতার ঘুম ভেঙেছে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির শব্দে। তার পরে দিনভর দফায় দফায় বৃষ্টি কখনও জোরে, কখনও ঝিরঝিরিয়ে। এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কলকাতায় ৪০ মিলিমিটারের বেশি রেকর্ড করেছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস, তাদের হিসেবে যা চলতি মরসুমে সর্বাধিক। এমন ‘ভরপুর’ বর্ষা কি এখানে আপাতত কয়েক দিন চলবে?
আলিপুর অবশ্য তেমনটা মনে করছে না। বরং উল্টোটাই বলছে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, যার দৌলতে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বর্ষা-ভাগ্য শেষমেশ খুলল, বঙ্গোপসাগরের সেই ঘূর্ণাবর্ত ক্রমশ উত্তরবঙ্গের দিকে সরে যাচ্ছে। আর যাওয়ার পথেই তা এ দিন কলকাতা ও আশপাশে বৃষ্টি নামিয়ে গেল। ঘূর্ণাবর্তের সৌজন্যে কলকাতা সাময়িক ভাবে ভরা বর্ষার স্বাদ পেলেও আলিপুরের পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণাবর্ত সরে যাওয়ার দরুণ আজ, সোমবার থেকে কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি কমে আসবে। অন্য দিকে ফের ঝেঁপে বৃষ্টি নামবে উত্তরবঙ্গে।
গত সাত দিনে কলকাতা ও আশপাশে আশানুরূপ বৃষ্টি না হলেও ঝাড়খণ্ডের নিম্নচাপ-অক্ষরেখা ও বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্তের যুগলবন্দিতে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় ভারী বর্ষণ হয়েছে। নিম্নচাপ-অক্ষরেখার সুবাদে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ঝাড়খণ্ডেও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। তার জেরে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের নদীতে-নদীতে জল বেড়েছে। যে কারণে রাজ্য সরকার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন নদীর জলস্তরে নজরদারি চালাতে বলেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলিকে। |
সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এ দিন মহাকরণে জানান, শনিবার রাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টির পরে বিভিন্ন নদীতে কী হারে জল বেড়েছে, সে দিকে নজর রাখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিন সকালেই প্রাথমিক একটা রিপোর্ট সেচ দফতর মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে। “সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক, মহকুমাশাসক-সহ প্রশাসনের কর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও।” বলেন মানসবাবু। সেচ-সূত্রের খবর: গত কয়েক দিনে ঝাড়খণ্ডে তুমুল বৃষ্টি হওয়ায় সুবর্ণরেখার জল ভাল রকম বেড়েছে। কেশিয়ারি-নয়াগ্রামের কাছে কয়েকটা ছোট সেতুও ভেঙে গিয়েছে। তবে মৌসম ভবনের খবর: ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমশ কমে আসারই সম্ভাবনা। আবহবিদেরা এ-ও বলছেন, চলতি মরসুমে সারা দেশে মোটামুটি স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে বটে, কিন্তু তাতে সামঞ্জস্য থাকছে না। যেমন, উত্তরবঙ্গ-সিকিম যেখানে ৫৮% বাড়তি বৃষ্টি পেয়েছে, সেখানে গত সপ্তাহ পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি প্রায় ২৬%!
এবং বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি স্থলভূমিতে ঢোকার পরে উত্তরবঙ্গ অভিমুখী হয়ে পড়ায় এই অসামঞ্জস্য বাড়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে আলিপুর। উত্তরবঙ্গে আরও জোরদার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে রাজ্য প্রশাসনকে ইতিমধ্যে হুঁশিয়ার করেছে তারা। কিন্তু উত্তরবঙ্গে ফের অতিবৃষ্টি হলেও দক্ষিণবঙ্গকে ঘাটতির বোঝা নিয়েই চলতে হবে বলে আবহবিদদের আশঙ্কা। |