রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরে ‘আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারে’ ফের কলকাতায় আসবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয় কি না, তা দেখতে প্রণববাবুর সেই ‘আনুষ্ঠানিক প্রচার-সফরে’র জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ বারের রাজ্য সফর সেরে রবিবার দিল্লি ফিরে যাওয়ার আগে কলকাতায় তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’দের কাছে প্রণববাবু জানিয়েছেন, বিধানসভা ও সংসদে প্রতিনিধি রয়েছে, এমন সব
দলের কাছেই তাঁকে ভোট দেওয়ার জন্য তিনি আবেদন জানাবেন। তবে কবে আবার কলকাতায় আসবেন, তা এখনও চূড়ান্ত করেননি। রবিবার প্রণববাবু কলকাতা ছাড়ার আগেই রাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে সমর্থনের
জন্য ফের তৃণমূলের কাছে
আবেদন জানানো হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে।
রাজ্যের মন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, “এর পরে প্রণবদা যে দিন প্রচারে আসবেন, সে দিন আমাদের সকলকে থাকতে বলেছেন।” এ বারের সফরে প্রণববাবুর সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর কথা হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা এ দিন বলেন, “প্রণবদা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারে এলে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কথা হতেই পারে।”
মমতার কাছে প্রণববাবু এর আগে নিজে আবেদন করেছেন তাঁকে সমর্থনের জন্য। শনিবারও তৃণমূল নেত্রীর উদ্দেশে পরোক্ষে বার্তা দিয়েছেন। আর এ দিন প্রণববাবু কলকাতা ছাড়ার কিছু ক্ষণ আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য সরাসরিই আবেদন করেছেন, “রাজনৈতিক বিবেচনা থাকবেই। তা নিয়েই বাংলা থেকে উঠে আসা যোগ্যতম ব্যক্তি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করতে বাংলার সব রাজনৈতিক দলকংগ্রেস, তৃণমূল, বামপন্থী দলগুলি এগিয়ে আসুক, সেটাই অনুরোধ।” প্রণববাবু কংগ্রেসেরই প্রার্থী। বামপন্থী দু’টি দল সিপিএম
এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ইতিমধ্যে তাঁকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে, প্রদীপবাবুর এই অনুরোধ যে মূলত শরিক তৃণমূলের কাছেই, তা স্পষ্ট। |
প্রণববাবুর পক্ষে না-দাঁড়ালেও তৃণমূল নেতৃত্ব এখনও বিজেপি-সমর্থিত পি এ সাংমাকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেননি। সাংমাকে আগামী দিনে যাতে এ রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি সমর্থন না-জানায়, সেই আবেদনও জানিয়ে রেখেছেন প্রদীপবাবু। বলেছেন, “সাংমাকে এ রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক দল এখনও সমর্থন না-করায় রাজ্যেরই ভাল। ভবিষ্যতেও যে তারা
সাংমাকে সমর্থন করবে না, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
শুক্রবার রাতে প্রণববাবু কলকাতায় এসেছিলেন এবং পরের দিনই গিয়েছিলেন বীরভূমের মিরিটিতে তাঁর গ্রামের বাড়িতে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটাই ছিল প্রণববাবুর শেষ কলকাতা সফর। বেলুড় মঠে এ দিন পুজো দিয়ে রাজভবনে যান তিনি। মধ্যাহ্ন ভোজের আসরে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা প্রণববাবুর কথা হয়। রাজভবন থেকে ঢাকুরিয়ায় তাঁর বাড়িতে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদেকর প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, টাকার অবমূল্যায়ন নিয়ে তিনি যথেষ্ট ‘উদ্বিগ্ন’।
মানসবাবু ছাড়াও প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান ও অন্য
নেতৃবৃন্দ এ দিন প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করতে যান। পরে মানসবাবুরা বিমানবন্দরেও যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে প্রণববাবুকে আনুষ্ঠানিক ‘বিদায়’ জানাতে। দিল্লিতে আজ, সোমবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি থেকেও প্রণববাবুকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর মনোনয়ন পেশ করার কথা বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
রাজভবনে যাওয়ার আগে এ দিন সকালে ‘ব্যক্তিগত সফরে’ গিয়ে বেলুড় মঠে এক ঘণ্টা কাটিয়েছেন প্রণববাবু। সঙ্গে ছিলেন তাঁর পুত্র তথা নলহাটির বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও ব্যক্তিগত সচিব প্রদ্যোৎ গুহ।
বেলুড় মঠ সূত্রের খবর, এ দিন প্রথমে রজনীগন্ধার মালা পরিয়ে প্রণববাবুকে স্বাগত জানান রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ। প্রণববাবু মূল মন্দিরে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণদেব ও সারদার অস্থিতে পুষ্পার্ঘ দেন। সেখানেও তাঁকে শ্রীরামকৃষ্ণের ‘প্রসাদি মালা’ পরানো হয়। এর পরে স্বামী বিবেকানন্দের বাসগৃহ, সারদাদেবীর মন্দির ও স্বামীজির সমাধিস্থল ঘুরে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দের বাসগৃহে যান। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ অধ্যক্ষ স্বামী প্রভানন্দ।
রামকৃষ্ণ মঠ মিশনের সহ-সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ জানান, স্বামী আত্মস্থানন্দের সঙ্গে প্রণববাবুর কয়েক দশকের বেশি সময় ধরে পরিচয়। দু’জনের আলাপচারিতায় এ দিন সেই সব স্মৃতি বারবার উঠে এসেছে। ১৯৮২ সালে গাইঘাটায় বন্যা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণববাবু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর নির্দেশে সাহায্যের জন্য কিছু অর্থ মঞ্জুর করেন। সেই টাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তৎকালীন সহ-সম্পাদক স্বামী আত্মস্থানন্দের মাধ্যমে ত্রাণকাজে লাগানো হয়েছিল। তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে প্রণববাবুর সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রণববাবু সেই ঘটনাও এ দিন স্বামী আত্মস্থানন্দকে মনে করিয়ে দেন। রামকৃষ্ণ মঠ মিশনের তরফে স্বামী শুভকরানন্দ জানান, গত পয়লা বৈশাখই প্রণববাবুর বেলুড় মঠে আসার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি আসতে পারেননি। স্বামীজির সার্ধ-শতবর্ষ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত জাতীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে ও ‘ব্যক্তিগত ইচ্ছা’তেই তিনি এ দিন বেলুড় মঠ দর্শনে গিয়েছিলেন। তাঁকে বেলুড় মঠের তরফে শ্রীরামকৃষ্ণের ‘প্রসাদি ধুতি ও চাদর’ উপহার দেওয়া হয়েছে। |