এক অসহায় বিধবাকে কাজ দেওয়ার নাম করে রাজস্থানে ‘পাচার’ করার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থানার পুলিশ। ধৃত রঞ্জিত গোস্বামীর বাড়ি ওই থানারই গোবিন্দপুর গ্রামে। গত শুক্রবার রাত্রে ওই বিধবার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রঞ্জিতকে ধরে। পুরুলিয়া আদালত রঞ্জিতকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘমুণ্ডির একটি গ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলার বিয়ে হয়েছিল বারো-তেরো বছর আগে বলরামপুর থানা এলাকার বাঘাডি গ্রামে। বছর দুয়েক আগে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে ওই মহিলা তাঁর বছর দশেকের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মায়ের কাছে থাকতে শুরু করেন। দিনমজুরি করে মা-মেয়ে সংসার চালাতেন।
মায়ের কাছে থাকলেও শ্বশুরবাড়িতে মাথা গোঁজার মতো ছোট একটি ঘর রয়েছে ওই বিধবার। বর্ষার আগে সেই ঘর সংস্কারের জন্য কিছু টাকা নিয়ে দিন পনেরো আগে বাড়ি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাঘাডি রওনা দেন। তাঁর মায়ের অভিযোগ, “রওনা হওয়ার পর দিন সন্ধ্যায় মেয়ের ফোন আসে আমার ছেলের মোবাইলে। ‘কেমন আছিস’ জানতে চাওয়ায় কেউ ওর কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। মেয়ে কোথায় জানতে চাওয়ায় ওই লোকটা বলে আড়শায় আছে, ভাল আছে। তখনই আমার সন্দেহ হয় শ্বশুরবাড়ির বদলে মেয়ে আড়শায় কেন যাবে।” বৃদ্ধা পুলিশকে জানিয়েছেন, দিন তিনেক পরে তাঁর মেয়ে পড়শির মোবাইলে ফোন করে জানান তিনি রাজস্থানে নিয়ে গিয়েছে রঞ্জিত গোস্বামী। তাঁকে ৮০ হাজার টাকায় ওখানে বিক্রি করে দেওয়া হযেছে। প্রতিবেশী মায়ের সঙ্গে ওই বিধবার কথা বলিয়ে দেন। মাকে ওই বিধবা বলেন, তিনি একদম ভাল নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেন ওঁকে উদ্ধার করা হয়।
এর পরেই রঞ্জিতের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ওই বিধবার মা। তদন্তে এখনও পর্যন্ত পুলিশ জেনেছে, ওই বিধবা বর্তমানে রাজস্থানের কোটা জেলার একটি গ্রামে রয়েছেন। তাঁকে উদ্ধারের জন্য ধৃতকে নিয়ে পুলিশ রাজস্থানে যাবে। পুলিশ জানিয়েছে, ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়া ও নারী পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে ধৃতের বিরুদ্ধে। যদিও রঞ্জিতের দাবি, “আমি ওকে (ওই বিধবা) বিক্রি করিনি। ও স্বেচ্ছায় গিয়েছে।” বাঘমুণ্ডি ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি শশীপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “এই ঘটনায় পুলিশের তদন্ত করে কড়া পদক্ষেপ করা দরকার। একই সঙ্গে দেখা দরকার, এই চক্রে এলাকার আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা।” |