তৃণমূলের ব্লক সম্মেলনে গণ্ডগোল ধুবুলিয়ায়
ফের মন্ত্রীর সামনেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল।
গত ১০ এপ্রিল বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের বর্ধিত সভায় মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সামনেই দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ বার রবিবার নদিয়ার ধুবুলিয়ার মুক্তমঞ্চে কৃষ্ণনগর ২ ব্লক সম্মেলনে মঞ্চে কে কে থাকবেন, তা নিয়ে বিতর্ক গড়াল হাতাহাতিতে। ঘটনাস্থলে তখন উপস্থিত ছিলেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও দলের জেলা সভাপতি পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। মঞ্চের চেয়ার টেবিল উল্টে দেওয়া হয়। দলের পতাকা থেকে লাঠি খুলে নিয়ে দুই গোষ্ঠীর লোকজন একে অপরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দলের মহিলাকর্মীরাও আক্রান্ত হন। এক মহিলা কর্মীর হাত কেটে গিয়েছে। তাঁকে ধুবুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। তাঁর হাতে চারটি সেলাই করতে হয়েছে। পরে অবশ্য সম্মেলন আবার শুরু হয়। তবে পুণ্ডরীকাক্ষবাবু বলেন, “তেমন বড় কোনও গণ্ডগোল হয়নি। কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরও কোনও প্রশ্ন নেই।”
ব্লক সম্মেলনে হাতাহাতি। —নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই দিন সভা শুরু থেকেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চাপানউতোর চলছিল। কৃষ্ণনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মণি ঘোষ সম্মেলন মঞ্চে উঠতে গেলে তাকে বাধা দেন ওই ব্লক তৃণমূল সভাপতি শিবশঙ্কর দত্ত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উত্তেজনা ছড়ায়। শুরু হয় হাতাহাতি। এরই মধ্যে শিবশঙ্করবাবু সম্মেলনে গণ্ডগোল করার অভিযোগে মণি ঘোষকে ছ’বছরের জন্য দল থেকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করে দেওয়া হল বলে মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করে দেন। এরপরে গণ্ডগোল চরম আকার নেয়। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বকুল দাস তখনই হাতে আঘাত পান। বকুলদেবী বলেন, “ওরা মণিদাকে প্রচণ্ড অপমান করছিল। দল থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করার কথাও ঘোষণা করে দেয়। আমরা তার প্রতিবাদ করতে যেতেই আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রচণ্ড মারধর করতে শুরু করে দেয়। আমার হাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে।” তবে এই ব্যাপারে কোথাও কোনও অভিযোগ হয়নি। মন্ত্রী উজ্জ্বলবাবু বলেন, “ছুরি দিয়ে কাউকে আঘাত করা হয়নি। আমাদের ওই মহিলা কর্মী একটি পাখার উপরে পড়ে যান। তারপরেই তাঁর হাত কেটে গিয়েছে।”
মণিবাবুর দাবি, “মন্ত্রীর সমর্থনে শিবশঙ্করবাবু ব্লকে উপদলীয় কোন্দল তৈরি করছেন।” তাঁর বক্তব্য, “আমাদের পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে দল পরিচালনা করা হচ্ছে। বিষয়টি জেলা সভাপতিকে জানানোর জন্য মঞ্চে উঠতে গেলে আমাকে বাধা দেওয়া হয়। আমাকে অপমান করা হয়। তখনই কর্মীরা খেপে যান।” শিবশঙ্করবাবুর পাল্টা দাবি, “পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মণিবাবু কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে বারবার সাবধান করা হয়েছে। সেই কারণেই তিনি সিপিএমের লোকজনদের এনে সম্মেলনে গণ্ডগোল করলেন।” মণিবাবু অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, “আমরা সাংসদ তাপস পালের ঘনিষ্ঠ বলেই আমাদের এ ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।” উজ্জ্বলবাবু অবশ্য বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। অমি সকলকে নিয়েই চলি। সম্মেলনে পাঁচ হাজার কর্মী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তো কোনও বিভেদ ছিল না। দু’চার জন অন্য কথা বললেও সেটা খুবই সামান্য বিষয়। এখানে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।” সাংসদ তাপসবাবু এই দিন সভায় ছিলেন না। পরে তিনি ফোনে বলেন, “সাংসদ হওয়ার পর থেকে আমি সকলকে সঙ্গে নিয়েই চলি। সকলেই আমার ঘনিষ্ঠ। শেষ কথা বলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” তবে তিনি বলেন, “কাউকে মঞ্চে উঠতে না দেওয়াটা ঠিক নয়। কারণ দলটা সকলেরই।” সাসপেন্ড করার প্রসঙ্গে পুণ্ডরীকাক্ষবাবু জানিয়েছেন, “কেউ মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলেছে। তবে এই ভাবে কাউকে সাসপেন্ড করা যায় না।” গণ্ডগোলে তাদের নাম জড়ানোর প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এসএম সাদি বলেন, “এটা তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.