আমার জ্ঞানত এই প্রথম উইম্বলডনে বছরের এই দুটো সপ্তাহে টেনিসই একমাত্র উপপাদ্য থাকছে না। অসাধারণ ঘাসের কোর্টগুলোয়, লন্ডনের বাতাসে এ বার জুড়ে রয়েছে আসন্ন অলিম্পিক। আমি অলিম্পিক ভিলেজ ঘুরে এসেছি। অনবদ্য ব্যবস্থাপনা দেখে আমি মুগ্ধ। লন্ডন শহরটা সম্পর্কে আমার প্রেমের কথা সবার জানা। উইম্বলডনে নিজের চিরস্মরণীয় সাফল্যের জন্য। কিন্তু বিশ্বাস করুন, লন্ডনকে কিছু দিন পর থেকে দুর্ধর্ষ অলিম্পিক শহর হিসেবেও মনে রাখতে হবে। আর তার ঠিক আগে যদি একটা জমজমাট উইম্বলডন হয়, তা হলে কথাই নেই!
ছেলেদের সিঙ্গলসের কথায় প্রথমেই মনে পড়ছে সব খেলাধুলোর সেই আপ্তবাক্যটাগত বারের চ্যাম্পিয়নকে কখনও মুছে ফেলো না। যেটা শনিবার রাতে ইউরো কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেন বুঝিয়ে দিয়েছে। উইম্বলডনে জকোভিচ সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। ফেডেরার বা নাদালকে ওদের শীর্ষস্থানে থাকার সময় কোর্টে যেমন সাবলীল আর নিখুঁত দেখাত, বিশ্বের এক নম্বর জকোভিচকেও এখন সে রকম লাগছে। দু’সপ্তাহ আগে ফরাসি ওপেন ফাইনালে ক্লে কোর্ট সম্রাট নাদালের কাছে জকোভিচের হার দেখে ওকে অন্য সারফেসে বিচার করাটা মস্ত ভুল হবে।
ওর পিছনেই আছে নাদাল। এখনও নিজের দিনে রাফা অপরাজেয়। তা ছাড়া রোলাঁ গারোয় ফাইনালে জকোভিচকে হারানোর পর ওর ভেতর নিশ্চয়ই বিশ্বাস জন্মেছে যে, শীর্ষ বাছাইকে হারিয়ে গ্র্যান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা ওর ভেতর এখনও আছে। স্বভাবতই সমগ্র ব্রিটেন অ্যান্ডি মারের জন্য গলা ফাটাবে। কিন্তু মারের সবচেয়ে বড় সমর্থকও স্বীকার করবে যে, ওর হাতে সময় খুব কমে আসছে। নিজেকে গ্র্যান্ড স্লাম ট্রফি হাতে দেখার জন্য। বরং আমার আবেগের বিচারে এখনও উইম্বলডনে ফেভারিট ফেডেরার। কিন্তু এ নিয়ে কোনও তর্ক হতে পারে না যে, গত দু’বছরে ওর খেলার ধার নিম্নমুখী। ৩১ বছর বয়সেও গ্র্যান্ড স্লাম সেমিফাইনাল খেলেছে প্যারিসে। কিন্তু ওর সেরা সময়ে যে অস্ত্রের ওপর রজার বিরাট ভরসা রাখত, সেই সার্ভিসে আর ধারাবাহিকতা নেই। তবে উইম্বলডন ওর প্রিয়তম গ্র্যান্ড স্লাম। সামনের এক পক্ষকাল রজারকে তাই দুর্দান্ত মোটিভেটেড দেখার আশা নিয়ে থাকলাম। টেনিসের এই চার মহামূর্তির বাইরে একমাত্র সঙ্গা-র দিকে নজর রাখা যেতে পারে। তবে গ্র্যান্ড স্লামে ‘গ্যাং অব ফোর’-কে টপকানো সঙ্গা-র পক্ষে প্রচণ্ড কঠিন।
মেয়েদের ড্র নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা বরং শক্ত। তবে গত বারের সঙ্গে এ বারের ড্রয়ে একটাই পার্থক্য। শীর্ষ বাছাই শারাপোভার মধ্যে তুমুল আত্মবিশ্বাসের প্রত্যাবর্তন। মাশা গত উইম্বলডন ফাইনালে যার কাছ হেরেছিল, সেই কিভিকোভাকে হারিয়েই ফরাসি ওপেন জিতে লন্ডনে এসেছে বলে টগবগ করছে। গত কয়েক বছর ধরে মেয়েদের সার্কিটে একজন ধারাবাহিক চ্যাম্পিয়নের অভাব মাশা দূর করতে পারে লন্ডনেই। ও যাকে সরিয়ে এক নম্বর হয়েছে সেই আজারেঙ্কার খেলার মধ্যে আমি মানসিক কাঠিন্য দেখার আশায় থাকব উইম্বলডনে। আর নজর রাখব সামান্থা স্তোসুরের দিকে। মেয়েটার খেলায় সব সময় জেতার একটা-না-একটা উপায় বের করে ফেলার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। আর এই একই ক্ষমতা আছে বলে সেরেনা উইলিয়ামসকে আমি কখনও পুরো মুছে ফেলব না। ‘ক্লাস’ কেন আর কী কারণে চিরস্থায়ী তার জ্বলন্ত উদাহরণ সেরেনা। আমি জানি ও পুরো ফিট নয়। কিন্তু এই দু’সপ্তাহের মধ্যে সেটা হয়ে যেতে পারলে সেরেনা চমকে দিতে পারে। |