ম্যাচটা টাইব্রেকারে যাওয়ার কথাই নয়। অনেক আগেই ম্যাচটা শেষ করে দেওয়ার কথা ইতালির। সব দিক দিয়ে তারা আধিপত্য দেখাল। পাসিং, বল পজেশন, গোলের সিটার তৈরিসব জায়গায় পির্লোদের তুলনায় পিছিয়ে ছিল রুনিরা।
ইতালি নব্বই মিনিটে জেতা ম্যাচটা জিতল টাইব্রেকারে ৪-২। ইতালির গোল করলেন বালোতেলি, পির্লো, নচেরিনো। ইংল্যান্ডের জেরার ও রুনি। ইতালির মন্তেলিভো শুরুতে বাইরে মারার পরে মনে হয়েছিল, ভাগ্য ইংল্যান্ডের দিকে। কিন্তু অ্যাসলে ইয়ং বারে মারল। অ্যাশলে কোলের কিক আটকে দিল বুঁফো। এত দাপট দেখিয়ে ইতালি না জিতলে খারাপই হত। জার্মানি নিশ্চয়ই ওদের নিয়ে চিন্তায় থাকবে।
এত বড় বড় নাম দু’দলে এত মিস পাস কেন করবে? যে রকম সুযোগ দু’টো টিমই পেল তার থেকে গোল হবে না! রুনি আর বালোতেল্লি যা সব গোলের সুযোগ নষ্ট করল সেগুলো তো ক্ষমার অযোগ্য। দক্ষতার কি এতটাই অভাব?
আমার উত্তর, হ্যা। দক্ষতায় ইতালি ও ইংল্যান্ড এই ইউরো-র স্পেন বা জার্মানির থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে। এক সময়ে ইতালি লিগের রমরমা ছিল। যে রকম এখন চলছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের। কিন্তু ক্লাবগুলো তো অন্য দেশ থেকে ভাল ভাল ফুটবলার ভাড়া করে দল বোঝাই করছে। তাই নিজেদের দেশে প্রতিভাবান ফুটবলারের অভাব থেকেই যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বড় টুর্নামেন্টে। পড়েছে এই ম্যাচেও। তাই ম্যাচটা টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়াল।
একটা দল— ইংল্যান্ড শুধু উঁচু বলে খেলেছে। আর অন্য দল— ইতালি সুযোগ বেশি পেলেও ওদের খেলায় নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব ছিল যথেষ্ট। প্রথমেই জনসন ছোট বক্স থেকে একা গোলকিপারকে পেয়ে গোল করতে পারল না। বুফোঁ খুব সুন্দর বাঁচাল। পরে রুনি ওই জায়গা থেকেই হেড করল ক্রসবারের উপর দিয়ে। |
উল্টো দিকে আবার গোল নষ্টের প্রদর্শনী করে গেল বালোতেলি। ওকে নিয়ে এত কথা চলছে। আমি কিন্তু একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি-- ও মাথা দিয়ে ফুটবল খেলে না। ওর অস্ত্র গায়ের জোর। একা গোলকিপার হার্ট সামনে। গোললাইন থেকে প্রায় ১৪-১৫ গজ এগিয়ে, বড় স্ট্রাইকার সেই গোল মিস করবে? এ ছাড়াও ও ছোট বক্স থেকেও সুযোগ নষ্ট করেছে। বিরতির আগে এবং পরেও। সামনে থেকে গোলকিপারের শরীরে মারল কয়েক বার।
আধুনিক ফুটবলে মাঝমাঠে কী রকম খেলা কার্যকর, তার দু’রকম ছবি দেখা গিয়েছে স্পেন আর জার্মানির খেলায়। ইংল্যান্ডের মাঝমাঠ নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল। রক্ষণ ছাড়া ওদের কোনও কাজ ছিল না। তা-ও কোনও ট্যাকল করতে দেখলাম না। শুধু শরীর দিয়ে বল আটকাল। সিজার প্রান্দেলির ইতালি আবার বল পজেশন বেশি রাখছিল। পাসের সংখ্যাও ছিল ইংরেজেদের তুলনায় অনেক বেশি। সে তুলনায় রুনিদের চেষ্টা ছিল কম। কিন্তু দু’দলেরই একটা সমস্যা লক্ষ্য করলাম। মাঝমাঠে গিয়ে মিস পাস। যেটা ইংল্যান্ডই বেশি করছিল।
ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ডে রুনির দোসর ওয়েলবেক আবার বেশি দৌড়তেই চায় না। ঠিক সময়েই ওকে তুলল কোচ রয় হজসন। ওয়েলবেকের বদলি ক্যারলকে সে ভাবে কিছুই করতে দেখলাম না। বিরতির পর ইংল্যান্ড ইতালির বক্সে এল হাতেগোনা কয়েক বার। দু’বার জেরারের ফ্রি-কিকও নিল। কিন্তু বাঁক খাওয়ানো সেই বলে মাথা ছোঁয়াতেই পারল না কেউ। এক কথায় ইংরেজরা হতশ্রী ফুটবল উপহার দিল।
এই ম্যাচ দেখে একটা কথা বলতে পারি। ইতালি জিতলেও তার দৌড় সেমিফাইনাল পর্যন্তই। তার বেশি নয়। ফাইনালে জার্মানিই যাবে। |