|
|
|
|
প্রশ্ন সিপিএমের অন্দরে |
সভায় গরহাজির লোকাল কমিটির সদস্যরাই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পার্টি কংগ্রেসের সাংগঠনিক রিপোর্ট নিয়ে জেলা স্তরে আলোচনার পর এ বার জোনাল স্তরে আলোচনাসভা শুরু হয়েছে। কিন্তু সেখানে দলের লোকাল কমিটির একাংশ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সিপিএমের অন্দরে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ৩৩টি জোনাল কমিটির মধ্যে অধিকাংশ এলাকায় এই সভা হয়েও গিয়েছে। সভায় মূলত লোকাল কমিটির সদস্য ও শাখা সম্পাদকদের থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দলের নির্দেশ ‘অমান্য’ করে একাংশ লোকাল কমিটির সদস্য সভায় অনুপস্থিত থাকছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কেন এই পরিস্থিতি? জেলা নেতৃত্বের মতে, বিভিন্ন এলাকায় এখনও সন্ত্রাস চলছে। তাই একাংশ সদস্য সভায় আসছেন না। এলে তাঁদের উপর আক্রমণ আরও তীব্র হতে পারে। তবে দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যপাটের ক্ষমতা হারানোয় বিভিন্ন এলাকায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও তীব্র হতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে দলের কর্মসূচিতে।
রবিবার খড়্গপুর গ্রামীণ জোনাল কমিটি এলাকায় এই আলোচনাসভা হয়। সিপিএমের দলীয় সূত্রে খবর, সভায় ২৪০ জন কর্মীর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তবে দেড়শোর কিছু বেশি কর্মী উপস্থিত হন। সতকুইয়ে জোনাল কমিটির কার্যালয়ে এই সভা হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিশ্বনাথ দাস, জেলা কমিটির সদস্য কীর্তি দে বক্সী, জোনাল সম্পাদক কমল পলমল প্রমুখ। খড়্গপুর গ্রামীণ জোনাল কমিটির মধ্যে মোট ৭টি লোকাল কমিটি রয়েছে। প্রতিটি কমিটির সদস্যদের কাছে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য ‘নির্দেশ’ পৌঁছেছিল। কিন্তু একাংশ সদস্য সেই নির্দেশ ‘অমান্য’ করেই সভায় অনুপস্থিত থেকেছেন। কেন এই পরিস্থিতি? স্থানীয় নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন এলাকায় এখনও সন্ত্রাস চলছে। দলীয় কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। তাই কয়েকজন আসতে পারেননি। জোনাল সম্পাদক কমল পলমল বলেন, “বিভিন্ন এলাকা থেকে ২-৫ জন করে কমরেড আসেননি। এটা বড় ব্যাপার নয়।” বস্তুত, জোনাল সম্মেলন- পর্বে খড়্গপুরের এই এলাকাতেই দলের মধ্যেকার ‘অনৈক্য’ প্রকাশ্যে এসে পড়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শেষমেশ জেলা সম্পাদক দীপক সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।
একই অবস্থা মেদিনীপুরেও। শনিবার মেদিনীপুর শহর জোনাল কমিটি এলাকায় এই আলোচনাসভা হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, সভায় প্রায় ২০ জন লোকাল কমিটির সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। মীরবাজারে কৃষক-ভবনে এই সভা হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজয় পাল, জেলা কমিটির সদস্য অপরেশ ভট্টাচার্য, শহর জোনাল সম্পাদক কীর্তি দে বক্সী প্রমুখ। মেদিনীপুর শহর জোনাল কমিটির মধ্যে ৬টি লোকাল কমিটি রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও প্রতিটি কমিটির সদস্যদের কাছে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ পৌঁছেছিল। জোনাল সম্পাদক কীর্তি দে বক্সী বলেন, “বৃষ্টির জন্য কয়েকজন আসেননি। এ নিয়ে হইচইয়ের কী আছে?” অনুপস্থিত সদস্যদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হবে? জোনাল সম্পাদক এ নিয়ে মন্তব্য করেননি। তবে সূত্রের খবর, দলের নির্দেশ ‘অমান্য’ করে যাঁরা আলোচনা সভায় আসেননি, তাঁদের কাছ থেকে কৈফিয়ত তলব করা হবে। পরে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের নির্দেশ মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। প্রায় ৪ মাস আগে সিপিএমের জেলা সম্মেলন হয়েছে। তার আগে লোকাল, জোনাল স্তরের সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলন থেকে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে একাংশ লোকাল কমিটির সদস্য নির্দেশ ‘অমান্য’ করতে শুরু করায় দলের অন্দরেও নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত ২৩ মে মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ হলে সিপিএমের এক আলোচনা সভা হয়। মূলত ৩ টি বিষয়ের উপর এখানে আলোচনা হয়েছিল। এক, রাজনৈতিক প্রস্তাব। দুই, রাজ্য সম্মেলন ও পার্টি কংগ্রেসের সাংগঠনিক রিপোর্ট। এবং তিন, মতাদর্শগত দলিল। পার্টি কংগ্রেসের সাংগঠনিক রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা সভা এ বার জোনাল স্তরেও শুরু হয়েছে। চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে এই সভা শুরু হয়েছে। চলবে ২৭ তারিখ পর্যন্ত। আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন রয়েছে। তার আগে দলীয় সভায় খোদ লোকাল কমিটির সদস্যদের অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে এখন সিপিএমের অন্দরেও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিড়ম্বনায় পড়েছেন জেলা নেতৃত্ব। যদিও তাঁদের বক্তব্য, গত এক বছর ধরে নানা প্রতিকূলতা, চক্রান্ত ও আক্রমণ মোকাবিলা করেই কমরেডদের এগোতে হচ্ছে। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে জোনাল ও লোকাল স্তরে ধৈর্য সহকারে রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আলোচনা সভায় দলের নির্দেশ মেনে সকলে উপস্থিত থাকবেন, এটা আশা করাও অনভিপ্রেত। |
|
|
|
|
|