ঝুঁকি সামলে লগ্নির জন্য
প্রয়োজন আর্থিক সাক্ষরতা
ন্যান্য বিষয়ের তুলনায় সাহিত্য, সঙ্গীত, ফুটবল ও রাজনীতিকে অনেক বেশি এগিয়ে রেখেছে বাঙালি। ভোজনের ব্যাপারেও হয়তো টেক্কা দেবে অনেক প্রদেশের মানুষকে। বিজ্ঞাপন ও শপিং মলের দৌলতে পারদর্শী হয়েছে খরচের ব্যাপারেও। সঞ্চয়ের ধাত থাকলেও হয়তো ততটা পটু হয়ে উঠতে পারেনি লগ্নির ব্যাপারে। আসলে অর্থ সংস্কৃতিকে বাঙালি কোনও দিনই তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এখন কিন্তু দিতে হচ্ছে। দিনকাল পাল্টেছে। জীবন এখন অনেক বেশি জটিল। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন বাড়ছে অতিরিক্ত অর্থের। ব্যাঙ্ক ডাকঘরের বাইরে বেরিয়ে কমবেশি ঝুঁকি নিয়ে এই অতিরিক্ত আয়ের সন্ধানে নামতে হচ্ছে অনেককেই। জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না-থাকার কারণে ঠকছেনও অনেকে। সুরক্ষিত সরকারি লগ্নির জায়গা কমছে অথবা আকর্ষণ হারাচ্ছে। ফলে বেসরকারি প্রকল্পে ঝুঁকতে হচ্ছে মানুষকে। অর্থাৎ মানুষকে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং খবরাখবর রাখতে হবে।
বড় শহরে বিনিয়োগের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়ার সুযোগ থাকলেও ছোট শহর এবং গ্রামাঞ্চলে তা আছে যৎসামান্য। অর্থকড়ির ব্যাপারে বহু মানুষ এখনও বেশ কাঁচা। এঁদের অজ্ঞতা এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে লোক ঠকানোর কাজে নেমেছে এমন সংস্থার সংখ্যা এখন কম নয়। নিজের অর্থকরী ব্যাপার নিজেই পরিচালনা এবং ঝুঁকি সামলে লগ্নির জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আর্থিক সাক্ষরতার। অর্থ বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান এখন প্রত্যেক মানুষের অবশ্য প্রয়োজন। সমাজে এমনও অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ আছেন, আর্থিক ব্যাপারে যাঁরা বেশ কাঁচা। কিন্তু আর্থিক সাক্ষরতার প্রয়োজন শিক্ষিত এবং সাধারণ স্তরের সব পুরুষ ও মহিলারই।
অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ মানুষের যা যা জানা থাকা প্রয়োজন, তা মোটামুটি এই রকম:
(১) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং তা পরিচালনার ব্যাপারে জ্ঞান।
(২) কোনও প্রকল্পের ভাল মন্দ বিচারের ন্যূনতম ক্ষমতা।
(৩) আয়কর সংক্রান্ত ন্যূনতম জ্ঞান।
(৪) নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বিচার করা।
(৫) আয় অনু -যায়ী ব্যয় এবং সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করা।
(৬) ব্যাঙ্কিং বিনিয়োগ এবং বিমা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান।
অর্থ বিষয়ে মোটামুটি জ্ঞান থাকলে যে-সব সুবিধা হয়, তা এক কথায়:
• টাকা পয়সা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিজেই নেওয়া যায়।
• ভুল বুঝে ভুল প্রকল্পে লগ্নির সম্ভাবনা কমে।
• লোক ঠকানো সংস্থার ফাঁদ এড়ানো সম্ভব হয়।
• নিজের সঞ্চয়, বিমা এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনার অনেকটাই নিজের পক্ষে করা সম্ভব হয়।
•পরিবারের কর্তা চাকরি সূত্রে হঠাৎ বদলি হলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে আর্থিক সাক্ষর মহিলারা অর্থকরী ব্যাপার সামাল দিতে পারেন।
• অনেক সূত্র থেকে নিজের পাওনা-গণ্ডা বুঝে নেওয়া যায়।
• স্কুল পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য শহরে যেতে হলে পড়ুয়াদের আর্থিক সাক্ষরতা অবশ্য প্রয়োজন।
• এ ধরনের সাক্ষরতা মানুষকে কষ্টের টাকা সংরক্ষণ, সঞ্চয় এবং ভবিষ্যতের জন্য লগ্নি করতে শেখায়। অপ- ব্যয় কমে। প্রয়োজনে পরি- কল্পিত সূত্র থেকে টাকার সংস্থান করা সম্ভব হয়।
• পরিকল্পনা মাফিক চললে অর্থ সঙ্কট এড়িয়ে প্রবীণ নাগরিকেরা শেষ জীবন বেশ স্বচ্ছন্দেই কাটাতে পারেন।
• মহিলারা আর্থিক সাক্ষর হলে পরনির্ভরতা কমে।
আর্থিক সাক্ষরতা প্রসারিত করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন অনেকে। এর জন্য যেহেতু আলাদা স্কুল বা কলেজ নেই, সেই কারণে সাধারণ স্কুল এবং কলেজের পাঠ্যক্রমের মধ্যে বিষয়টি রাখা যেতে পারে। ছোট শহর এবং গ্রামে-গঞ্জে কর্মশালার আয়োজনও করা যায়। এই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারে স্থানীয় ক্লাব এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। উদ্যোগী হতে পারে মিউচুয়াল ফান্ড, আর্থিক সংস্থা ব্যাঙ্ক ও বিমা কোম্পানিগুলি। বড় ভূমিকা পালন করতে পারে সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলি। দুর্গাপুজো, রক্তদান শিবির, থ্যালাসেমিয়া এবং পোলিও ক্যাম্পের পাশাপাশি আয়োজন করা যেতে পারে আর্থিক সাক্ষরতা উৎসাহদান কেন্দ্র।
এই আর্থিক সাক্ষরতা প্রসারে এগিয়ে আসতে পারে মুম্বই, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ এবং কলকাতা শেয়ার বাজারও। ইনভেস্টর্স এডুকেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন ফান্ডে সরকারের হাতে আছে যথেষ্ট টাকা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি আবেদন করে এই তহবিল থেকে কর্মশালা আয়োজনের অর্থ পেতে পারে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের সংস্থাগুলি আর্থিক সাক্ষরতা শিবির আয়োজন করতে পারে নিজের নিজের বিদ্যালয়ে। এতেই বড় কাজ হতে পারে। কর্মশালার সুযোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ফুটবল এবং ক্রিকেট চর্চার পাশাপাশি আর্থিক সাক্ষরতাকেও যদি সমান গুরুত্ব দেওয়া যায়, তবে উপকার হবে গোটা সমাজের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.