|
|
|
|
|
এলাচের এলাহি সংসার |
রান্নাঘরের বিশ্বস্ত বন্ধু। আবার স্বাস্থ্যরক্ষাতেও বদ্যিমশাই।
এ দেশে জন্মেই তার এমন বিশ্ববিজয়। মসালা ম্যাজিক-এ এলাচ অধ্যায় |
যে কোনও রান্না জানত না, তাকে আগে সমবয়সীরা লুকিয়ে পরামর্শ দিতেন। অভিজ্ঞতায় কয়েক মাসের প্রাচীনরা বলতেন, ‘যে কোনও রান্নায় চোখ বুজে এলাচ দিয়ে দিবি। মন্দ রান্নাও ভাল হয়ে যাবে। শুধু শুক্তো, অম্বলে দিস না। তা হলেই ধরা পড়ে যাবি।’ এই এলাচ যে যুগে যুগে শ্বশুরবাড়িতে কত মেয়েকে অক্লেশে পার করেছে!
কোথায় পাওয়া যায়
• নেপাল, ভুটান, ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, এমন অনেক দেশে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এলাচ মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সম্পত্তি। এই দেশগুলি ছাড়া গুয়াতেমালা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বীপগুলিতেও পাওয়া যায়।
• অ্যামোমাম, ইলেটেরিয়া গোষ্ঠী থেকে এলাচ এসেছে। এলাচ আদা জাতীয় বংশের আর একটি ফলন। অর্থাৎ আদা এবং এলাচ একই বংশজাত। এটি পৃথিবীর তৃতীয় মূল্যবান মশলা। দামের দিক দিয়ে জাফরান ও ভ্যানিলার পরেই এর স্থান।
• ‘কার্ডামম’ শব্দটি ল্যাটিন ভাষা থেকে এসেছে। উদ্ভিদবিদ্যার গুরু গ্রিসের থিয়োফ্র্যাস্টাস-এর মতে, এটি গ্রিসেই প্রথম পাওয়া যায়। কিন্তু বেশির ভাগ তথ্যাদি প্রমাণ করে, ভারতই এলাচের প্রকৃত জন্মস্থান।
এলাচের প্রকারভেদ
• মালাবার বা কেরল: এই অঞ্চলে গাছগুলি মাটি থেকে সোজাসুজি ওপরের দিকে ওঠে।
• মহীশূর বা কর্নাটক: এখানকার গাছগুলি পাশাপাশি ও ওপরের দিকে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে।
• বিশাখাপত্তনম: কেরল ও কর্নাটকের মিলিত প্রভাব বিশাখাপত্তনমের এলাচের মধ্যে দেখা যায়। দক্ষিণ ভারতীয় এক ফাদার, সেন্ট সেবাস্টিয়ান কেরলে সাদা ফুল সমেত এলাচের চাষ প্রথম করেন এবং এই ধরনটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। যে সব অঞ্চলে জল দীর্ঘ দিন জমে থাকে, সেখানে এলাচ চাষ খুব ভাল হয়। ভাইজাগের সবুজ এলাচ খুব বিখ্যাত।
ব্যবহার (সবুজ বা কালো)
এলাচের নিজস্ব একটি অপূর্ব স্বাদ আছে। এটি অ্যারোমা-র জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ। অর্থাৎ অ্যারোমা সমৃদ্ধ দ্রব্য যে সব গুণাগুণের জন্য বিখ্যাত, এলাচও সেই সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। পুদিনার যেমন ঠান্ডা রাখার ক্ষমতা আছে, এলাচেরও সেই এক গুণই আছে। সবুজ এলাচ আবার অত্যন্ত দামি মশলা। কিন্তু এটিকে খোলা রেখে দিলে গন্ধ দ্রুত চলে যায়। আমাদের দেশে বিভিন্ন রান্না, চা, কফি প্রভৃতি বিভিন্ন পানীয়তে এলাচ ব্যবহারের রেওয়াজ আছে। কেক তৈরির সময় বেকিং-এ এলাচের ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের বিখ্যাত জুলেকেক তৈরি করতে এলাচের ব্যবহার দীর্ঘ দিন ধরে প্রচলিত। বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের লজেন্স, চুয়িংগাম-এ এলাচের গন্ধ দেওয়া থাকে। ভারতের বিভিন্ন মিষ্টিও এলাচের গন্ধ ছাড়া অচল।
ওষুধ হিসেবে ব্যবহার
সবুজ দারচিনি দক্ষিণ এশিয়ায় দাঁত এবং মাড়ির সমস্যায় ব্যবহার করা হয়। গলা, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, হজমের গণ্ডগোলে এলাচকে বিভিন্ন রকম উপায়ে ব্যবহার করা হয়। মূত্রস্থলীতে পাথর হলে এলাচের সাহায্য নেওয়া হয়। যক্ষ্মার মতো অসুখের ওষুধে এলাচের ব্যবহার থাকে। সাপ ও বিছের কামড়ের প্রতিষেধক হল এলাচ। চিন, পাকিস্তান, কোরিয়া, ভিয়েতনামের আয়ুর্বেদশাস্ত্রে এলাচের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। চিনে কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যায় এলাচ থেকে তৈরি বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহৃত হত প্রাচীন কাল থেকে। পৃথিবীর যে কোনও দেশে হজম এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যায় এলাচ থেকে প্রস্তুত ওষুধকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে।
শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন টক্সিনকে নির্গত করতে এলাচ প্রধান ভূমিকা পালন করে। ভারতে এটি গরম মশলা হিসেবে অধিক পরিচিত, এবং এই গরম মশলা শরীরের টক্সিনকে বার করে দেয় ও রক্তসঞ্চালনে বিশেষ সুবিধে করে দেয়। খুব অল্প পরিমাণ এলাচ গুঁড়ো অ্যাজমা এবং ব্রঙ্কাইটিস-এর ওষুধের সঙ্গে ব্যবহৃত হত আয়ুর্বেদিক ওষুধগুলিতে। ক্ষুধামান্দ্যতে এলাচের সাহায্য নেওয়া হয়। খাওয়ার আগে অল্প এলাচ গুঁড়ো জল দিয়ে খেলে একটু পরেই অত্যন্ত খিদে পায়। হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, কয়েকটি দশার দ্বারা আমাদের শরীর নিয়ন্ত্রিত হয়, যেমন বাত, পিত্ত ও কফ। তাদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে এলাচ।
পুষ্টিগত গুণ
এলাচের মধ্যে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস প্রভৃতি বিভিন্ন মাত্রায় বর্তমান। সুতরাং এলাচ আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য।
|
|
|
|
|
|