|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
‘ক্ষুধার্ত ছেলেদের বিদ্রোহলক্ষণ’ |
যাঁরা হাংরি জেনারেশন আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে শৈলেশ্বর ঘোষ ছাড়া ছিলেন বাসুদেব দাশগুপ্ত সুভাষ ঘোষ প্রদীপ চৌধুরী সুবো আচার্য। তাঁরা যে ‘ক্ষুধার্ত’ পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তা জীবন সম্পর্কে নতুন বোধ, নতুন চিন্তা এবং নতুন সাহিত্যভাষা তৈরি করেছিল বলেই তাঁদের বিশ্বাস। এ নিয়ে বহু আলোড়ন, তর্ক-বিতর্ক, ক্রোধ ও বিস্ময় উত্থাপিত হয় ওই পত্রিকাকে ঘিরে। “অনেকের কাছে ‘ক্ষুধার্ত’ আজও ভয়ের। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার বাহকরা প্রতিষ্ঠানের সেবায় নিয়োজিত। আর ক্ষুধার্ত সম্প্রদায় বা হাংরি কবি লেখকরা প্রাতিষ্ঠানিক চিন্তাকে সমূলে বিনাশ করে নিয়ে আসতে চেয়েছে মুক্ত বোধ।” —মন্তব্য শৈলেশ্বর ঘোষের। তাঁরই সম্পাদনায় বেরিয়েছে ‘ক্ষুধার্ত’র সাতটি প্রতিষ্ঠানবিরোধী সংখ্যার সমাহার— হাংরি জেনারেশন স্রষ্টাদের ক্ষুধার্ত সংকলন (দে’জ, ৫০০.০০)। সেই সব বিতর্কিত কবিতা গল্প নাটক উপন্যাস প্রবন্ধ ধরা রইল এ-সংকলনে, যেগুলিকে অশ্লীল এবং রাষ্ট্রবিরোধী মনে করে পুলিশ সে সবের স্রষ্টাদের গ্রেফতার করেছিল। ১৯৬৩-’৬৪-তে শুরু হওয়া এই আন্দোলন নিয়ে ’৭২-’৭৩-এ প্রকাশিত ‘ক্ষুধার্ত’র দ্বিতীয় সংকলনে শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন ‘যেমন অতিবামপন্থী বিপ্লবী রাজনীতিকে ধিক্কার দেবার মুহূর্তে ভেবে দেখতে হয় কোন্ অনিবার্য চাপে এর উদ্ভব হলো, যেমন এর বহিঃপ্রকাশগুলি ধরিয়ে দেয় যে সামাজিক পচন কোন্ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, কীসের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ,— তেমনি ক্ষুধার্ত ছেলেদের বিদ্রোহলক্ষণকেও বুঝে নেওয়া চাই তার ঐতিহাসিক তাৎপর্যে।’ ওই সংকলনের আর-একটি রচনায় দেবেশ রায় লিখছেন ‘হাংরিদের উত্তেজনা ছড়াবার চেষ্টার সেইদিন বছরগুলি পেরিয়ে আজ তাঁদের রচনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে যখন, তখন, আমি নিজেকে খানিকটা দায়ী না-ভেবে পারি না। কেন আমি সেদিনই হাংরি নামধেয় হলেও সাহিত্যের পক্ষে দাঁড়াবার মতো ওয়াকিবহাল ছিলাম না? তাই এটি আমার বিলম্বিত সওয়াল, শারীরিকভাবে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সাহিত্যের পক্ষে।’
‘হুগলিতে হল ছাপার কাজ। এই মুদ্রাযন্ত্রের প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার প্রথম সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট-এর প্রকাশ ঘটল ১৮৭০ সালের ২৯ জানুয়ারি। জেমস অগাস্টাস হিকি সম্পাদিত এই সংবাদপত্রটি হিকির গেজেট নামেই পরিচিত। এটি যদিও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত তবু এই সংবাদপত্রটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি এদেশের প্রথম সংবাদপত্র। দ্বিতীয়ত, জাতীয় জীবনে যে পরিবর্তন এনেছিল ইংরেজ পরাধীন ভারতে তার প্রতিক্রিয়া উদ্ভাসিত হল এই কাগজে। তৃতীয়ত, জো হুজুর বা খয়ের খাঁ হয়ে থাকেনি ‘বেঙ্গল গেজেট’। শুধুমাত্র সংবাদ ছাপানো নয়, এই কাগজে সমালোচনাও প্রকাশ পেত যার ফলে কাগজটি কোম্পানির হোমরাচোমরাদের বিষনজরে পড়েছিল।’— বাংলা সাময়িকপত্রের সূচনাপর্ব নিয়ে লিখেছেন সন্দীপ দত্ত। তাঁর বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিবৃত্ত/ ১৮১৮১৮৯৯-এ (গাঙচিল, ১৫০.০০) প্রকাশ পেয়েছে উনিশ শতকের ওই সময়পর্বের সাময়িক পত্রপত্রিকার ইতিহাস। এতে বিধৃত হয়েছে ওই পত্রিকাগুলির গড়ে ওঠা, পথ চলা ও আনুষঙ্গিক নানা তথ্য এবং নির্বাচিত পত্রিকা থেকে আহরিত গদ্য, চিঠিপত্র, রচনা, সম্পাদকীয়, প্রচ্ছদচিত্র ও পাঠ্যাংশের প্রতিলিপি।
ঋত্বিক ঘটকের গল্প ‘রাজা’ ছাপা হয়েছিল ‘রূপসা’ পত্রিকায়। গীতা মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় পত্রিকাটির আত্মপ্রকাশ ’৭২-’৭৩ সাল নাগাদ। জন্মলগ্ন থেকেই অভিভাবকের মতো সহায়তা করতেন সুধীররঞ্জন মুখোপাধ্যায় সন্তোষকুমার ঘোষ। প্রচ্ছদ এঁকে দিতেন পূর্ণেন্দু পত্রী। এমনকী অন্নদা মুন্সী রামকিঙ্কর বেইজের অলঙ্করণও ছিল। লিখতেন সুনীল, শক্তি, মতি নন্দী, রমাপদ চৌধুরী, শ্রীপান্থ-র মতো বিশিষ্ট লেখকরা। কয়েক দশকের আয়ু-সম্পন্ন এই পত্রিকাটির সংকলন সেরা রূপসা ১ (এন ই পাবলিশার্স, ১৫০.০০) বার করলেন সম্পাদক।
মূলত প্রবন্ধের মাসিক পত্র ‘নব্যভারত’ ১২৯০ বঙ্গাব্দে দেবীপ্রসন্ন রায়চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশ পায়, ১৩৩২ অবধি দীর্ঘ ৪৩ বছর চলেছিল পত্রিকাটি। দেবীপ্রসন্ন প্রয়াত হওয়ার পর তাঁর পুত্র প্রভাতকুসুম সম্পাদক হন ১৩২৭-এ। আবার সে বছরই তাঁর মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী ফুল্লনলিনী সম্পাদনা করেন শেষ পর্বটুকু, ১৩২৮-১৩৩২। দুষ্প্রাপ্য এ-পত্রিকা থেকে কিছু প্রবন্ধ নিয়ে নব্যভারত নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন (৩৫০.০০) প্রকাশ করেছে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ। সম্পাদক সুবিমল মিশ্র জানিয়েছেন, পত্রিকাটির চোখে পড়ার মতো বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল ইংরেজ শাসনের প্রতি আস্থা, কংগ্রেসের কার্যাবলির প্রশংসা, নারীজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন, ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনা, ইতিহাস-বিজ্ঞান-সাহিত্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত চর্চা। ফলে উনিশ-বিশ শতকে তথ্য ও চিন্তানিষ্ঠ সব প্রবন্ধ বেরত এ-পত্রিকায়। তিব্বতের পথ, কয়লার খনি, নেপালের পুরাতত্ত্ব, বুয়র যুদ্ধ, ভারতে দুর্ভিক্ষ, বৌদ্ধযুগের নারীর স্থান, গ্রিক দর্শন, কাঙাল হরিনাথের স্মৃতিলিপি ইত্যাদি বিচিত্র বিষয় নিয়ে প্রচুর প্রবন্ধ। |
|
|
|
|
|