মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পরে পরিস্থিতিকে কার্যত ‘বিপর্যয়’ বলেই আখ্যা দিলেন বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়। পাশাপাশি গ্রামবাসীদেরই এগিয়ে এসে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতা করার আহ্বানও জানালেন মহকুমাশাসক।
বস্তুত, শুক্রবার এলাকা পরিদর্শনের পরে মহকুমাশাসকের প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট, পরিস্থিতি বেশ ঘোরালো। অরিন্দমবাবুর কথায়, “এটা কঠিন পরিস্থিতি। এক প্রকার বিপর্যয়। ইতিমধ্যেই বহু চাষ জমি ছাইয়ের তলায়। জোড়বাঁধ ও জোড়বাঁধের খালগুলিতে ছাই জমে গভীরতা নষ্ট করেছে। অন্য দিকে বৃষ্টিতে জল বাড়লে তা জোড়বাঁধ ও খাল থেকে উপচে গ্রামে ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। আরও বহু চাষ জমি ছাই চাপা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”
মহকুমাশাসক জানান, যত দ্রুত সম্ভব জোড়বাঁধ ও খাল থেকে এই ছাই তুলে ফেলতে হবে। এই কাজে গ্রামবাসীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ দিন সকালে মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে অরিন্দমবাবু জামগাড়ি জোড়বাঁধ, বাঁকদহ কালভার্ট এবং ছাই-চাপা কৃষিজমি ঘুরে দেখেন। পরে নিত্যানন্দপুর পঞ্চায়েতের হলঘরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও গ্রামবাসীকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। |
মহকুমাশাসক ও চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে কাছে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের বাসিন্দারা। লটিয়াবনি অঞ্চলের ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা নিমাই মহান্তি বলেন, “আমার বেশ কয়েক বিঘা চাষ জমি ছাই চাপা পড়েছে। অবিলম্বে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দেওয়া হোক। জমি থেকে ছাই সরিয়ে জমি চাষযোগ্য করে দেওয়া হোক।” তাঁর সঙ্গে একই দাবিতে গলা মেলান রাধাকৃষ্ণপুরের শক্তিপদ মন্ডল, অবিনাশ গরাইয়ের মত বহু গ্রামবাসী। নিত্যানন্দপুরের দেথোলি গ্রামের বাসিন্দা গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “গুঁড়ো ছাইয়ের ধুলো গোটা গ্রামে উড়ে বেড়াচ্ছে। মালিয়াড়া জোড়বাঁধে ছাই ঢুকতে শুরু করায় ওই জলের মাছ আর খাওয়া যাচ্ছে না। এমনকী স্নানও করতে পারছি না।”
দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে মালিয়াড়া জোড়বাঁধকে পুরোপুরি দূষিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার বিষয়ে উপযুক্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি তোলেন গ্রামবাসীরা। সারঙ্গপুরের বিদ্যুৎ ঘোষাল বলেন, “জোড়বাঁধের খালের ধারে দু’টি শ্মশানই ছাই গ্রাস করেছে। এটা খুব চিন্তার বিষয়।”
সমস্যার কথা এ দিন মন দিয়ে শোনেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র। তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই ঘটনার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। জোড়বাঁধ ও খালগুলি থেকে ছাই তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কিন্তু সেখানে কিছু বাধা আসছে। যেমন ওই এলাকার রাস্তা অতিরিক্ত সঙ্কীর্ণ হওয়ায় সেখানে ডাম্পার ঢুকছে না। এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের সহযোগিতা আশা করছি।” বৈঠক শেষে মহকুমাশাসক গ্রামবাসীদের উদ্দেশে আবেদন করেন, “আপনারা অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে সহযোগিতা করুন। ডাম্পার না ঢুকতে পারায় বাঁধ থেকে ছাই তুলেও তা অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। সেগুলি বাঁধের পাড়েই রাখতে হচ্ছে। এর ফলে কারও জমি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু ছাই রাখার জায়গা দেবেন।”
চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে ছাইপুকুরের পাশে বাঁশ গাছ ও কাশফুলের গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে মহকুমাশাসক বলেন, “এর ফলে পাড়ের মাটি শক্ত হবে।” চিফ ইঞ্জিনিয়ার জানান, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান জানতে আইআইটি (চেন্নাই)-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আপাতত ছাইপুকুর থেকে যে জল বের হচ্ছে, তাতে ছাই নেই। ছাইপুকুরের দেওয়ালে বিশেষ ধরনের পাইপ লাগানোয় তার মাধ্যমে ছাই আটকে ‘ফিল্টার’ হয়ে শুধু জল বের হচ্ছে বলেও দেবাশিসবাবুর দাবি। |