শহর সাফাই করাই তাঁদের কাজ অথচ তাঁদের ঘরের পাশে জমে থাকে জঞ্জালের স্তুপ। রান্না, খাওয়া থেকে ঘুম সবটাই সারতে হয় ওই দুর্গন্ধে। এই দশা কালনা শহরের সাফাইকর্মীদের। দীর্ঘদিন নোংরায় বাস করতে করতে রোগেও ভুগছেন তাঁদের অনেকে। অভিযোগ, পুরসভায় বারবার আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। জবাবে পুরপ্রধান তথা কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু জানান, সমস্যার সমাধানে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে পুরসভা।
সকাল থেকে পুরভবন-সহ সারা শহরের রাস্তা, নর্দমা পরিষ্কার করেন এই সাফাইকর্মীরা। আর সেই নোংরা জড়ো করেন নিজেদের পাড়ায়। কারণ শহর জুড়ে আর কোনও আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। ফলে পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড জুড়ে এখন শুধুই নোংরার স্তুপ। প্রতিদিন বাড়তে বাড়তে তা ছাড়িয়ে যাচ্ছে কংক্রিটের দেওয়ালকেও। আর এই ওয়ার্ডেই সপরিবারে থাকেন পুরসভার ৪২ জন স্থায়ী ও প্রায় ৪০ জন অস্থায়ী কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে শহরের যাবতীয় নোংরা ফেলা হয় এই ওয়ার্ডে। ফলে সারাদিনই দুর্গন্ধের মধ্যে বাস করতে হয়। এছাড়া কুকুর,শুঁয়োরের মুখে মুখেও নোংরা ছড়িয়ে যায়। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। নোংরার স্তুপ থেকে প্রচুর নোংরা উড়ে ঢুকে পড়ে পাড়ায়। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এই পরিবেশে বাস করতে করতে নানান রোগের শিকার হচ্ছেন তারা। |
জঞ্জাল পরিষ্কার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সাফাইকর্মীরা। তরুণ রাজবংশী নামে এক সাফাইকর্মী বলেন, “বাইরে জঞ্জাল সাফা করে ঘরে ফিরেও শান্তি নেই। এখানেই সবসময় দুর্গন্ধ। রোগে ভুগছি আমরা।” গোবিন্দ রাজবংশী, চন্দন হাঁড়িরাও বলেন, “দিনভর দুর্গন্ধ থাকায় পরিচিতেরা আমাদের এলাকায় আসতে চাননা।”
কালনা মহকুমা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে শহরের দুটো জায়গায় আবর্জনা ফেলা হত। কিন্তু এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে একটাতে। কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের জিউধারা এলাকায় শহরের আবর্জনার একটা বড় অংশ ফেলা হত। কিন্তু আগের পুরবোর্ড সেখানে পার্ক গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সব নোংরায় ফেলা হতে থাকে ২ নম্বর ওয়ার্ডের পুকুর লাগোয়া ওই এলাকায়। পার্ক তৈরির পরে পুরসভার তরফে কল্যাণপুর এলাকাতেই বিঘে ছয়েক জমি কেনা হয় জঞ্জাল ফেলার জন্য। তবে সেটি নীচু এলাকা হওয়ায় এবং স্থানীয় লোকজনের আপত্তিতে পিছু হটে বর্তমান পুরবোর্ড। এমনকী জমি বিক্রিও করে দেওয়া হয়।
সমস্যার কথা অজানা নয় পুরসভারও। উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, “ওই ওয়ার্ডে জমে থাকা জঞ্জালের স্তুপ থেকেই সাফাইকর্মীদের অসুস্থতা বেড়েছে। কিন্তু বিকল্প কোনও জায়গার খোঁজ না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই ওখানেই আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে। তবে এই অবস্থা থেকে দ্রুত বেরোনোর চেষ্টা চালাচ্ছে পুরসভা।” |