|
|
|
|
|
|
|
আপনার সাহায্যে ১... |
|
আর বাবা লাগবে না |
ভিকি ডোনার-রা কলকাতাতেই আছেন। আপনাকে কেবল শুক্রাণু অর্ডার
দিতে হবে বাড়ির কাছের স্পার্ম ব্যাঙ্কে। লিখছেন পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় |
‘শোনো অহঙ্কারী পুরুষ, তোমার সঙ্গে না-শুয়ে, তোমাকে স্পর্শ না-করেও এখন আমরা গর্ভজাত সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা রাখি! প্রযুক্তি আমাদের হাতে। সন্তানেরা এখন প্রকৃত অর্থে শুধু তাদের মায়ের’আশির দশকে যখন আমেরিকায় ‘ফেমিনিস্ট উইমেন হেল্থ মুভমেন্ট’ তুঙ্গে, সে দেশের খবরের কাগজ আর ম্যাগাজিনের পাতায় চমকে দেওয়া বিজ্ঞাপনে লেখা থাকত লাইনগুলো। কীসের বিজ্ঞাপন? ‘স্পার্ম ব্যাঙ্ক’-এর! সানফ্রানসিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া, অকল্যান্ড, তখন একের পর এক এই রকম ব্যাঙ্ক খুলছে। তার মধ্যে এক-একটা আবার ঘোষিত ‘ফেমিনিস্ট স্পার্ম ব্যাঙ্ক!’ যেখান থেকে একমাত্র সন্তানকামী অবিবাহিত, ডিভোর্সি বা বিধবারা শুক্রাণু কিনতে পারবেন।
তার পর তিরিশ-বত্রিশটা বছর পেরিয়েছে। প্রযুক্তি, পরিবেশ, মেয়েদের অবস্থান সবকিছুতেই ঢেউ এসেছে। ২০১২ সালে দাঁড়িয়ে তৃতীয় বিশ্বের ভারতবর্ষের দর্শক চেটেপুটে উপভোগ করছেন ‘ভিকি ডোনার,’ যে ছবিতে ষাটোর্ধ্ব বাঙালি বাবা তাঁর জামাইয়ের ‘স্পার্ম ডোনার’ হওয়ার মধ্যে লজ্জার কোনও কারণ দেখেন না। উল্টে তাঁকে সমর্থন করে নিজের মেয়েকেই বোঝানোর চেষ্টা করেন। আবার এই কলকাতাতেই এখন এমন বাঙালি মেয়েরা রয়েছেন, যাঁরা স্পষ্টাস্পষ্টি বাবাকে বলছেন “বিয়েটা চাই না। বড্ড সুপারফিশিয়াল। তার থেকে নিজের বাচ্চায় অনেক বেশি ইন্টারেস্টেড। বিয়ের টাকা থেকে লাখ দু’য়েক টাকা দিয়ে ডোনার স্পার্ম নিয়ে পুরো ব্যাপারটা করে ফেলতে চাই। বাকি যে টাকা পড়ে থাকবে সেটা বাচ্চার জন্য ফিক্সড করে দেওয়া যেতে পারে।” |
|
ছবিটি মডেলের। প্রতীকী প্রয়োজনে ব্যবহৃত। |
নারীবাদের উত্তুঙ্গ শিখরে পৌঁছে যাওয়া একটা কনসেপ্ট। আত্মবিশ্বাসী, স্বনির্ভর, স্বাধীনচেতা মেয়ের জীবনে সন্তান উৎপাদনের জন্য আর কোনও পুরুষের ‘শারীরিক’ উপস্থিতি দরকার নেই। তার দরকার স্রেফ কিছু শুক্রাণু যা নগদ টাকা দিয়ে স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে কেনা যায়। তার পর ডাক্তারি প্রক্রিয়ায় সেই বীর্য ঢুকিয়ে দেওয়া হবে তার শরীরে। নীনা গুপ্তাদের ছকভাঙা মাতৃত্বের জন্য তবু ভিভ রিচার্ডসদের শারীরিক সান্নিধ্য প্রয়োজন হয়েছিল। এখন কিন্তু সেই ভিভদের অস্তিত্ব মুছে, অপরিচিত-অজ্ঞাতকুলশীল কিছু শুক্রাণুর দৌলতে ‘মাসাবা-প্রাপ্তি’ হতে পারে। পরিবার মানেই ‘ব্লাড লাইন অফ দ্য ম্যান’-এর বস্তাপচা ধারণাকে ভেঙে-তুবড়ে দিয়ে তৈরি হবে বাবাহীন মা-সন্তানের সংসার। অচেনা কোনও ভিকি ডোনারের স্পার্ম অপেক্ষা করে আছে বাড়ির কাছেই কোনও স্পার্ম ব্যাঙ্ক বা ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকে। হ্যাঁ, এই শহর, বা আশপাশের কোনও শহরে।
তবে কোনও মেয়ে বা কোনও দম্পতি স্পার্ম ব্যাঙ্কে গেলেন, এক ভায়েল স্পার্ম কিনে আনলেন, আর বাচ্চা হয়ে গেলএমন অবাস্তব বস্তু তো হয় না। এর জন্য একজন ইনফার্টিলিটি চিকিৎসকের সাহায্য নিতেই হবে। তিনিই স্পার্ম ব্যাঙ্কের খোঁজ দেবেন। স্পার্ম আনানোর ব্যবস্থা করবেন। ভায়েল-প্রতি স্পার্মের খরচ মোটামুটি ৫-৬ হাজার টাকা। যদি অন্য কোনও রাজ্যের স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে আনাতে হয় তা হলে যাতায়াতের খরচ যোগ হবে। ইনট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন পদ্ধতিতে শরীরে দিলে খরচ আনুমানিক ১০-১২ হাজার টাকা। আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে খরচ আনুমানিক ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞরাই জানালেন, ‘সিঙ্গল মাদার’ কনসেপ্ট এখন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) স্বীকৃত। কিন্তু ডোনেটেড স্পার্ম নিয়ে যে সব অবিবাহিতা, ডিভোর্সি বা বিধবা মহিলা মা হচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্কে আইসিএমআর-এর আলাদা কোনও গাইডলাইন এখনও নেই। তাই তাঁদেরকেও শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে গর্ভবতী হওয়া ‘সিঙ্গল মাদার’-দের সঙ্গে একটি ক্যাটাগরিতে ধরে নেওয়া হয়। এখানে অবশ্য ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতানৈক্য কাজ করে। নির্দিষ্ট গাইডলাইন না-থাকায় কোনও কোনও চিকিৎসক ডোনার স্পার্ম নিয়ে অবিবাহিতা বা ডিভোর্সিদের সন্তান তৈরির প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব হাতে নেন না। আবার কোনও-কোনও ক্লিনিক খোলাখুলি এই প্রক্রিয়ায় সন্তান উৎপাদনে সাহায্য করেন এবং আলাদা সার্টিফিকেটে ডোনার স্পার্ম নেওয়ার কথা জানিয়েও দেন।
সেই সার্টিফিকেট দেখিয়েই বার্থ সার্টিফিকেট পাওয়া যায় বলে একাধিক ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন। যদিও কলকাতা করপোরেশনের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপঙ্কর দাস বলেছেন, “শুধু ক্লিনিকের সার্টিফিকেটে হবে না। কোনও ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটকে হলফনামা এবং নির্দেশ দিয়ে জানাতে হবে যে মহিলা সিঙ্গল মাদার, এবং ডোনারের স্পার্ম নিয়ে তাঁর সন্তান হয়েছে। তবে আমরা বার্থ সার্টিফিকেট দিয়ে দেব।” স্কুল-কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে, ক্লাবের সদস্য পদ বা পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বত্রই এখন ‘সিঙ্গল মাদার’ স্বীকৃত। উত্তর ভারতের কোনও-কোনও রাজ্যে একাধিক বেসরকারি স্কুল সিঙ্গল মাদারের সন্তানকে ভর্তির ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
ফলে ডোনেটেড স্পার্মের মাধ্যমে জন্মানো সিঙ্গল মাদারের ছেলেমেয়েদের আইনগত সমস্যায় পড়ার কথা নয়। সমস্যা মূলত অন্য জায়গায়। যদি বড় হওয়ার পর সেই ছেলে বা মেয়ে নিজের জন্মবৃত্তান্ত মানতে না-পারে, সেইখানে। নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরাও এই একটা জায়গায় স্বচ্ছন্দ হতে পারছেন না। আসলে এর কোনও তাৎক্ষণিক উত্তর হয় না। পুরোটাই পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিবিশেষের মানসিক গঠনের উপর নির্ভর করবে। একে ভবিষ্যতের উপর ছেড়ে না-দিয়ে উপায় নেই।
যেমন লেক টেম্পল রোডের বাসিন্দা, পাঁচতারা হোটেলের এক্সিকিউটিভ সেই মেয়েটি। সম্পর্কের প্রতি সে বীতশ্রদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু নিজের সন্তান চেয়েছিল। প্রথমে দত্তক সন্তানের জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেখানে হাজারো নিয়মে পদে-পদে হোঁচট খেতে হয়েছে। এত জটিলতা যে বীতশ্রদ্ধ হয়ে দত্তক নেওয়ার প্ল্যানই বাতিল করে দিয়েছিল সে। অভিভাবকের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, চাকরি, পারিবারিক সম্পত্তি, পাড়াপ্রতিবেশী, এই সব পছন্দ হলে তবে দত্তক মিলবে বেসরকারি সংস্থার থেকে। আবার সরকারি জায়গা থেকে দত্তক নিতে গেলে হাজার কাগজপত্র জোগাড় করা, কোর্ট-কাছারি, তিন মাস পর-পর বাচ্চা নিয়ে কোর্টে হাজিরা এত সব ঝামেলার থেকে ডোনারের স্পার্ম নিয়ে নিজের গর্ভজাত বাচ্চাই ভাল। মেয়েটিও তাই করেছিল।
তাঁকে গর্ভবতী করতে ঔরঙ্গাবাদের স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে ফ্লাইটে শুক্রাণু এল! তাঁর ফ্ল্যাটে দেড় বছরের সন্তান এখন তড়তড়িয়ে হামা দিয়ে বেড়ায়। তাকে ঘিরেই এখন মেয়ের যাবতীয় স্বপ্ন, আবার শঙ্কাও। ছকভাঙা সিদ্ধান্ত ছিল তার একার। কিন্তু এই ‘পিতৃপরিচয়হীন স্পার্ম’-এ আপত্তি থাকতে পারে তার সন্তানের। ভবিষ্যতে যদি সে প্রশ্ন করে, কেন তাকে এই ‘অসামাজিকতা’র ভার বইতে হবে? কেন বার বার সমাজের কৌতূহলের সামনে দাঁড়াতে হবে তার মায়ের প্রথাবহির্ভূত সিদ্ধান্তের জন্য? তখন?
বিদেশে এখন স্পার্ম ডোনারের ছবি দেখে পছন্দ করার ব্যাপারটা নিয়মসিদ্ধ। হবু সন্তানের বাবা-র নাক কতটা চোখা চান, মাসল কতটা স্ট্রং হলে ভাল, লম্বা-চওড়া-গায়ের রং সব যাচাই করে স্পার্ম কিনতে পারেন ক্রেতা। ভারত এখনও এতটা উদার হতে পারেনি। তবে এ দেশেও এখন হবু বাবা-মা বা শুধু হবু মায়েরা ইনফার্টিলিটি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আকছার আইআইটিয়ান-দের স্পার্ম চাইছেন! আইআইএম পাশদের স্পার্মের চাহিদাও তুঙ্গে। আরও এক পা এগিয়ে কেউ কেউ আবার জনপ্রিয় বলিউড তারকা এমনকী অল্পবয়সী জনপ্রিয় রাজনীতিকদের স্পার্মের দাবিও জানাচ্ছেন। তার জন্য চোখ কপালে তোলার মতো টাকাও অফার করছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভারতে স্পার্ম ডোনারদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই কলেজছাত্র। তাঁদের মধ্যে এটা এখন অন্যতম জনপ্রিয় ‘সাইড-আর্নিং’-এর পথ। স্পার্ম ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও এঁদেরকেই পছন্দ করেন। বিবাহিতেরা ‘নট অ্যালাউড।’ প্রত্যেক স্পার্ম ব্যাঙ্কে আবার ‘সিওর শট ডোনার’দের আলাদা তালিকা থাকে। এদের চার্জ সব সময় অন্যদের থেকে বেশি। কারণ এদের স্পার্ম নিলে একবারেই বাচ্চা হওয়া গ্যারান্টেড। ঠিক ভিকি ডোনারের মতোই!
সেই পথে হেঁটেছিল পাইকপাড়ার বাসিন্দা বছর ৩৯-এর আরেক মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে আট বছরের বিবাহিত জীবনে অদ্ভুত শীতলতা ছিল। দু’জনেই চাকরি করেন। প্রথম-প্রথম বাচ্চার কথা বললে স্বামী এড়িয়ে যেতেন। তার পর এক সময় প্রসঙ্গটা উত্থাপন করতে আত্মসম্মানে বাধত মেয়ের। মেয়ের কথায়, “এটা তো কোনও জোর ফলানোর ব্যাপার নয়, পারস্পরিক বিশ্বাস-ভালবাসার টানে আপনা থেকেই এই পরিণতি আসার কথা। সেটা যখন আসছে না, তখন ধরে নিতে হবে কোথাও একটা ফাঁক রয়ে গিয়েছে।” শারীরিক সম্পর্কও এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। মেয়েটি বুঝেছিল, এই সম্পর্ক থেকে তার আর কিছু পাওয়ার নেই। জীবন কাটানোর জন্য তার দরকার ছিল নিজের একটি সন্তান। ডিভোর্সের পর ল্যান্সডাউন রোডের একটি ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের শরণাপন্ন হয় সে। সেখানেই ডোনারের স্পার্ম নিয়ে সন্তান হয়। সেখানেও টানাপোড়েন।
যে সিঙ্গল মাদার শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে সন্তান পেয়েছেন, তিনি নিজে অন্তত সন্তানের বাবার নাম জানেন। কিন্তু অবিবাহিতা বা ডিভোর্সি যে মায়ের সন্তান হয়েছে ডোনারের স্পার্ম দিয়ে তিনি নিজেই কোনও দিন জানতে পারেন না গর্ভজাত সন্তানের বাবা কে! সমাজতাত্ত্বিকেরা মূলত এই মেয়েদের কেন্দ্র করেই নারীর যৌন স্বাধীনতা, নিজের চাওয়া অনুযায়ী বাঁচা, নিজের শরীরের উপর অধিকারের মতো অনেক কিছু বলেন। সমাজের আরেকটা অংশ আবার এর মধ্যে উত্তুঙ্গ নারীবাদ দেখে, ফেমিনিস্ট-নার্সিসিজম খোঁজে। কিন্তু কেউ দেখার চেষ্টা করেনি, সেই সন্তানের জন্ম দেওয়ার আগে ও পরে কী কী সমস্যা ও আশঙ্কায় সারাদিন ক্ষতবিক্ষত হতে হয় সেই ‘সিঙ্গল মাদার’কে।
তবে এই ‘নতুন’ কলকাতার মেয়েদের অনেকেই এখন বিশ্বাস করেন, নিজের সন্তানকে এইটুকু মনন এবং বোধশক্তি দিতে পারবেন যাতে সে বড় হয়ে মায়ের ‘স্বাধীনতা’-র ধারণাকে মর্যাদা দেবে। নিজের জন্মের ইতিবৃত্ত নিয়েও যার কোনও ছুঁৎমার্গ বা কুণ্ঠা থাকবে না।
প্রশ্ন যাঁদের তোলার তাঁরা তো তুলবেনই। বলবেন, এতে সমাজ ক্ষয়ে যাচ্ছে, সংসারের ধারণা এলোমেলো হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা জীবনটাকে অন্য ভাবে, নিজের শর্তে বাঁচতে চাইছেন, তাঁরা বলছেন, সবাইকে তো গতভাঙা পথে হাঁটতে বাধ্য করা হচ্ছে না। হাঁটছে গোনাগুনতি কিছু মানুষ। তার পিছনে তাঁদের নিজস্ব দর্শন, প্রয়োজন, ভাবনা, যন্ত্রণা কাজ করছে। সমাজরক্ষার দায়িত্ব বাকিরা নিক না।
|
কী করে কিনবেন |
১ প্রথম কাজ একজন ইনফার্টিলিটি চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। তিনি দেখবেন মহিলার ওভউলেশন হচ্ছে কি না এবং ফ্যালোপাইন টিউব ঠিক আছে কি না।
২ শারীরিক ভাবে স্ত্রীর সব ঠিক থাকলে তার পর স্বামীর শারীরিক পরীক্ষা হয়। যদি দেখা যায় তাঁর স্পার্ম কাউন্ট কম বা একেবারেই নেই অথবা স্পার্মের গতি কম বা স্পার্ম তাড়াতাড়ি মারা যাচ্ছে তখন চিকিৎসক ডোনার স্পার্মের পরামর্শ দেন। সিঙ্গল মাদারের ক্ষেত্রে শুধু মায়ের শারীরিক পরীক্ষাই হবে। মায়ের মানসিক কাউন্সেলিং ও হয় অনেক সময়।
৩ স্বামী ও স্ত্রীকে এ ব্যাপারে লিখিত অনুমতি দিতে হয়। সিঙ্গল মাদারের ক্ষেত্রে শুধু মায়ের অনুমতি লাগে।
৪ এর পর রক্তপরীক্ষা করে এইচআইভি, হেপাটাইটিস, বা যৌনরোগ আছে কি না দেখা হয়। দম্পতির ক্ষেত্রে দু’জনেরই এই পরীক্ষা করা হয়।
৫ তার পর চিকিৎসকই স্পার্ম ব্যাঙ্কের খোঁজ দেন। সেখান থেকে বিধিবদ্ধ পরীক্ষার মাধ্যমে টাকা দিয়ে স্পার্ম কেনা হয়। ভায়েল-প্রতি স্পার্মের খরচ মোটামুটি ৫-৬ হাজার টাকা। যদি অন্য কোনও রাজ্যের স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে আনাতে হয় তা হলে যাতায়াতের খরচ যোগ হবে।
৬ ডোনারের পরিচয় ও ছবি গোপন থাকে। শুধু তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে কিছু তথ্য জানানো হয়।
৭ ওই স্পার্ম ইন্ট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন পদ্ধতিতে মহিলার ইউটেরাইন ক্যাভিটিতে দেওয়া হয়। বা ওই স্পার্মের সাহায্যে আইভিএফ করা হয়।
৮ স্পার্ম ইনট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন পদ্ধতিতে শরীরে দিলে খরচ আনুমানিক ১০-১২ হাজার টাকা। আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে খরচ আনুমানিক ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। |
|
|
বাবা নেই, তো কী |
“শুধু ক্লিনিকের সার্টিফিকেটে হবে না। কোনও ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটকে হলফনামা এবং নির্দেশ দিয়ে জানাতে হবে যে মহিলা সিঙ্গল মাদার, এবং ডোনারের স্পার্ম নিয়ে তাঁর সন্তান হয়েছে। তবে আমরা বার্থ সার্টিফিকেট দিয়ে দেব।”
দীপঙ্কর দাস, কলকাতা করপোরেশনের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক |
“সর্বশিক্ষা নীতিতে প্রত্যেক শিশু স্কুলে পড়ার অধিকারী। তার জন্মবৃত্তান্ত সেখানে অপ্রয়োজনীয়। যদিও এ বিষয়ে এখনও এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে আলাদা কোনও নীতি নেই, তা হলেও বাবার নাম নেই বলে শিশু স্কুলে পড়তে পারবে না, এটা কখনই সম্ভব নয়, কোনও স্কুল সেটা করলে আইন ভাঙবে।”
দিব্যেন মুখোপাধ্যায়, স্কুল এডুকেশন ডিরেক্টর |
বিভিন্ন নামী বেসরকারি সংস্থা ও সরকারের কর্মিবর্গ বিভাগের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, চাকরির ক্ষেত্রে প্রার্থীর বাবা-মায়ের পরিচয় নয়, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতাই বিবেচ্য। |
|
তথ্য সহায়তা ডাঃ গৌতম খাস্তগীর, ডা. রাজীব অগ্রবাল, ডা. সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, ডা. প্রমোদ বাজাজ,
স্পার্ম প্রসেসার (স্পার্ম ক্লিনিক) ঔরঙ্গাবাদ, গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় (ফ্রোজেন স্পার্ম সাপ্লায়ার), শাশ্বতী ঘোষ
(নারী আন্দোলন কর্মী), পারমিতা চক্রবর্তী (অধ্যাপিকা, মানবীবিদ্যা বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) |
|
|
|
|
|