অযাচিত পরামর্শ বরদাস্ত নয়, বলছে সঙ্ঘ
নীতীশ ক্রমশ দূরত্ব বাড়ালেও নরম হতে রাজি নয় বিজেপি
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার যে ভাবে বিজেপি-র সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে চলছেন, তা নিয়ে অসন্তুষ্ট খোদ জেডিইউ সভাপতি শরদ যাদবও। নীতীশের প্রতি তাঁর পরামর্শ, “তরবারি তখনই বার করা উচিত, যখন যুদ্ধ হচ্ছে। নয়-তো বার কোরো না।” যদিও শরদের এই পরামর্শে যে নীতীশ পিছু হটছেন না, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে নীতীশ-ঘনিষ্ঠ নেতাদের মন্তব্যে, বিজেপি-র প্রতি তাদের আক্রমণে। তবে জোট নিয়ে উদ্বেগ বাড়লেও বিজেপি যে মাথা ঝুঁকিয়ে চলতে রাজি নয়, দলের রাজ্য স্তরের নেতারা আজ তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। রাজ্য স্তরে উভয় পক্ষে বাগ্যুুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে বিজেপি-র মনোবল বাড়িয়েছে আরএসএস। সঙ্ঘের স্পষ্ট বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করা হবে কি না তা নিয়ে নীতীশের কাছ থেকে অযাচিত পরামর্শ নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে ভাঙন দেখা দিয়েছে এনডিএ-ইউপিএ উভয় শিবিরেই। ফাটল দলগুলির অন্দরেও। কিন্তু নীতীশের বিজেপি-বিরোধিতার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব। জেডিইউ-এর মতো শিবসেনাও ইউপিএ-র প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু শিবসেনাকে নিয়ে বিজেপি তেমন চিন্তিত নয়। বরং নীতীশ যে ভাবে মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হওয়ার বিরোধিতা করে বিজেপি-র সঙ্গত্যাগের ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তা কপালে ভাঁজ ফেলেছে বিজেপি নেতৃত্বের।
নীতীশ এখনই তা না করলেও ডিসেম্বরে গুজরাতে বিধানসভা ভোটের পর মোদীকে বিজেপি যদি প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করে, তখন সেই চরম সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন তিনি। বিজেপি-র তরফে নীতীশের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখছেন তাঁরই ‘বন্ধু’ অরুণ জেটলি। কিন্তু তাঁর কাছেও স্পষ্ট নয়, নীতীশ কেন বিজেপি-র সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর কৌশল নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন! এনডিএ-র শরিক হয়েও জেডি(ইউ) তাঁকে সমর্থন করায় প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ ফোনে ধন্যবাদ জানান নীতীশকে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলির অন্দরের ফাটল ও নীতীশের কৌশলের তফাত প্রসঙ্গে বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা আজ উল্লেখ করেন, পূর্ণ সাংমা ইউপিএ শরিক দলের নেতা হয়েও এনসিপি থেকে পদত্যাগ করে বিরোধী দলের সমর্থনে নির্বাচন লড়ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইউপিএ-র প্রার্থীর বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। তাঁর সমস্যা প্রণববাবুকে নিয়ে। ফলে কংগ্রেসের কাছে হয়তো সেটা খুব বেশি সঙ্কটের নয়।
বামেদের মধ্যে ফাটল থাকলেও তা শুধু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কেন্দ্রিক। এটাকে চার বাম দলের জোট ভেঙে যাওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করার কারণ নেই। কারণ, অতীতেও আরএসপি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত ছিল, যখন বাকি শরিকরা ভোট দিয়েছে। এনডিএ শরিক শিবসেনাও গত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ-র প্রার্থী প্রতিভা পাটিলকে ভোট দিয়েছে। জোটে তার প্রভাব পড়েনি। কিন্তু নীতীশ যা করছেন, তা যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের গণ্ডিকেও ছাড়িয়ে যেতে চলেছে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। শরদ যাদবকে দিয়ে নীতীশকে বোঝানোরও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু নীতীশকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না।
বরং আজও নীতীশ তাঁর দলের নেতা শিবানন্দ তিওয়ারিকে দিয়ে বিজেপি-কে আক্রমণ করিয়েছেন। পেট্রোলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশ জুড়ে জেল-ভরো আন্দোলন করছে বিজেপি। কেন্দ্রের ভুল আর্থিক নীতির জন্য আজও অর্থমন্ত্রী প্রণববাবুকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বিহারের বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। এ সবের প্রতিবাদে শিবানন্দ তিওয়ারি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রণববাবুর করণীয় কিছু নেই। অর্থমন্ত্রী হলে রবিশঙ্করও কিছু করে উঠতে পারতেন না।” বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, প্রণববাবুকে সমর্থন করেই ক্ষান্ত হতে চাইছেন না নীতীশ, বরং ধীরে ধীরে জোট ভাঙারই ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন।
এ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও সঙ্ঘ নেতৃত্ব মনে করছেন, ভবিষ্যতে নীতীশ চরম কোনও সিদ্ধান্ত নিলেও, মাথা ঝুঁকিয়ে চলার কোনও অর্থ হয় না। নরেন্দ্র মোদীকে যদি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে হয়, তা উপযুক্ত সময় এলেই করা হবে। তাই বলে নীতীশের কাছ থেকে অযাচিত উপদেশ যে বরদাস্ত করা হবে না, খোদ সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
সঙ্ঘের কড়া অবস্থানের কারণেই সম্ভবত শিবানন্দের জবাব দিতে বিজেপি-র মুখপাত্র তরুণ বিজয় এ দিন বলেন, “অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় দেখিয়ে দিয়েছেন, কী করে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। শিবানন্দের আত্মবিশ্বাসে এত ভাটা পড়ল কেন, যে মনমোহন সরকারের ভুল অর্থনীতিকেও সমর্থন করতে হচ্ছে?” খাস পটনাতেই আজ মোদীর পোস্টার নিয়ে ‘মোদী জিন্দাবাদ’ স্লোগান তুলেছেন বিজেপির কিছু বিক্ষোভকারী। রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল পাণ্ডের বক্তব্য, “বিজেপি-র কিছু অত্যুৎসাহী কর্মী এটা করেছে।” দু’দিন আগেই বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের পশুপালনমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বলেছেন, “ক্ষমতা থাকলে আমাকে মন্ত্রিসভা থেকে তাড়িয়ে দিক।” আজ তিনি বলেন, “বিহারে সরকারে থাকাটা বিজেপি-র বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে না।” এ সম্পর্কে জেডিইউ-এর মুখপাত্র সঞ্জয় সিংহ বলেন, “মোদীর ছবি নিয়ে বিজেপি মিছিল করেছে। এটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত। তবে গিরিরাজ যা বলেছেন, রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে সেটা ঠিক কাজ হয়নি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.