রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল কাজিয়ায় পকেটে টান পড়তে পারে সমস্ত বাতানুকূল শ্রেণির সাধারণ যাত্রীদের। ইতিমধ্যেই এক দফা পণ্যমাসুল বাড়িয়েছে রেল। নতুন পরিস্থিতিতে আরও বাড়তে পারে রেলে পণ্য পরিবহণের খরচ।
গত দু’বছর ধরে রেলকে পরিষেবা করে ছাড় দিয়ে আসছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রতি তিন মাস অন্তর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে আসছিল অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু গত কাল অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পরিষেবা করের আওতা-মুক্ত যে তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে, এ বার আর তাতে রেল মন্ত্রকের নাম নেই। এর অর্থ, চলতি অর্থ বছরে রেলকে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা পরিষেবা কর দিতে হতে পারে সরকারি কোষাগারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এর ফলে ১ জুলাই থেকে বাতানুকূল সমস্ত শ্রেণির টিকিটে দামের উপর বাড়তি অন্তত ৩.৬ শতাংশ পরিষেবা কর গুনতে হবে যাত্রিদের। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে স্লিপার ও সাধারণ দ্বিতীয় শ্রেণির ভাড়ায় প্রভাব পড়বে না। কারণ শুধু বাতানুকূল শ্রেণিতেই এই পরিষেবা কর নেওয়া হয়। তবে খরচ বাড়তে পারে রেলে পণ্য পরিবহণে। এ মাসেই পার্সেল ও লাগেজ ভাড়া ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছে রেল। এখন পণ্য পরিবহণে যদি ফের অতিরিক্ত পরিষেবা কর দিতে হয়, তা হলে আগামী দিনে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে।
যদিও তৃণমূল সূত্রের দাবি, ওই কর ছাড়ের বিষয়ে সরকারের সর্ব্বোচ্চ স্তরে আবেদন করা হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেস-তৃণমূলে যা সম্পর্ক, তাতে ওই আবেদনে আদৌ কাজ হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে রেল কর্তাদের। এ যাবৎ প্রণববাবু রেলকে পরিষেবা কর থেকে ছাড় দিয়ে এসেছেন। ৩০ জুন ওই ছাড়ের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। জুলাই থেকে ফের কর ছাড় চেয়ে রেল মন্ত্রক আবেদন জানালে অর্থ মন্ত্রক তা খারিজ করে দিয়েছে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণববাবুকে সমর্থন না জানানোর কারণেই এই ‘কড়া’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। রেল মন্ত্রক মনে করছে, তৃণমূল প্রণববাবুকে সমর্থন জানালে অন্তত আগামী তিন মাস পরিষেবা করে ছাড় পেতে সমস্যা হত না। প্রণববাবুর মন্ত্রক অবশ্য এই বিরোধের তত্ত্বকে খারিজ করে দিয়ে বলছে, চলতি বছরে তারা পরিষেবা কর থেকে ১৮,৬০০ কোটি টাকা তুলতে বদ্ধপরিকর।
চলতি বাজেটে সমস্ত শ্রেণিতে যাত্রিভাড়া বাড়িয়েছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। যার জন্য মমতার কোপে পড়ে মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয় তাঁকে। পরে দায়িত্ব পেয়ে নেত্রীর নির্দেশে এসি ফার্স্ট ক্লাস ও এসি টু টিয়ার ছাড়া সমস্ত শ্রেণিতে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে নেন মুকুল রায়। কিন্তু আগামী মাস থেকে রেলকে পরিষেবা কর দিতে হলে এসি ফার্স্ট ক্লাস ও এসি টু টিয়ার শ্রেণির ভাড়া আরও বাড়তে পারে। বাড়তে পারে এসি থ্রি টিয়ার ও চেয়ার কারের ভাড়াও। বছরের পর বছর ভাড়া না বাড়ানোয় রেলের কোষাগারে এমনিতেই হাড়ির হাল। তাই মন্ত্রক চাইছে বাড়তি ভাড়া যাত্রীরাই বহন করুক।
কিন্তু যারা ইতিমধ্যেই টিকিট কেটে ফেলেছেন? মন্ত্রক জানিয়েছে, যাত্রীদের কাছ থেকে পরিষেবা কর বাবদ অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে, অগ্রিম টিকিট কেটেও বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে। যাত্রার সময়ে টিকিট পরীক্ষক ওই বাড়তি ভাড়া নিয়ে নেবেন। তবে মন্ত্রকের একাংশ আশা করছে, শেষ পর্যন্ত একটি সমাধান সূত্র নিশ্চয়ই মিলবে। প্রণববাবু আগামী সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। তার পরে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার কথা মনমোহন সিংহের। বিষয়টি নিয়ে তাঁর কাছে দরবার করে সিদ্ধান্ত পাল্টানো যাবে, রেল মন্ত্রকের অনেকে এমনটা আশা করছেন। মন্ত্রকের কিছু কর্তার আশঙ্কা, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন না পেলে জনমোহিনী পথে হেঁটে শেষ পর্যন্ত রেলমন্ত্রী মুকুল রায় ওই অর্থ রেলের কোষাগার থেকেই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রেল কোন খাত থেকে ওই অর্থ দেবে, সে বিষয়ে কোনও ধারণাই নেই মন্ত্রকের। কর্তাদের বক্তব্য, সিনেমা দেখা থেকে হোটেলে খাওয়া, সব ক্ষেত্রেই যখন কর দিতে হয়, তখন রেলের বাতানুকূল টিকিটের ক্ষেত্রেও এই বাড়তি ভাড়া বহন করুন যাত্রীরাই। |