নীচে নামার পথ বন্ধ। চার দিক ঢেকে গিয়েছে ঘন কালো ধোঁয়ায়। এ দিক-ও দিক যে যার মতো ছুটছেন আগুনের হাত থেকে বাঁচতে। আকুল চিৎকার-বাঁচার আর্তির মধ্যেও পাঁচ জন ভোলেননি ছাদে থাকা জাতীয় পতাকার কথা। জাতীয় পতাকা পুড়ে যাওয়া মানে তো জাতীয় মর্যাদার অবমাননা। প্রাণের তোয়াক্কা না করেই তাঁরা হাতড়ে হাতড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন সচিবালয়ের (মন্ত্রালয়) ছাদে। জাতীয় পতাকা অক্ষত অবস্থায় নামিয়ে আনতে। পতাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। আগুনের গ্রাস থেকে তাঁদেরকেও অক্ষত অবস্থায় নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন দমকলকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার সারা রাত ধরে চেষ্টা করার পর অবশেষে আজ ভোরের দিকে মন্ত্রালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল। তারা জানিয়েছে, আরও দু’দিন সময় লাগবে বাড়িটিকে পুরোপুরি ঠান্ডা করতে। আগুনে পুড়ে বাড়িটির যা অবস্থা, তাতে সেটিকে ‘বিপজ্জনক’ বাড়ি বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। এ ছাড়াও তিনি আজ জানান, আগুন লাগার আসল কারণ জানতে তদন্ত করবে মুম্বই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা। তবে বিজেপি-র জাতীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ী অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের কোনও প্রাক্তন বা বর্তমান বিচারপতির তত্ত্বাবধানে এই অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। |
তেরঙ্গা বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা। ছবি: এ এফ পি |
কাল দু’টি দেহ উদ্ধার হওয়ার পর আজ পুড়ে যাওয়া সচিবালয় থেকে আরও তিনটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ। তবে আজ উদ্ধার হওয়া দেহগুলি এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে তাঁদের শনাক্ত করা যায়নি। আহতদের মধ্যে এক জনের অবস্থা সঙ্কটজনক।
এই প্রসঙ্গে আজ উঠে এসেছে একটি নতুন তথ্য। ২০০৮ সালে হওয়া ‘ফায়ার অডিটে’ জানা গিয়েছিল, ভবনটির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। সেখানে আরও জানানো হয়েছিল, অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রগুলি কাজ করে না, বাজে না অ্যালার্মগুলিও। আবাসনটির ভিতরে অবৈধ নির্মাণ রয়েছে, এই কথাও বলা হয়েছিল রিপোর্টটিতে। তা সত্ত্বেও, কেন বাড়িটিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
আজ ঘটনাস্থলে আসেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার। আগুন লাগা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ্যেই বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেন, পুড়ে যাওয়া সচিবালয় পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব কোনও বেসরকারি সংস্থা নয়, সরকারেরই নেওয়া উচিত। অন্তর্ঘাতের জন্য এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে পওয়ার কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এখন প্রাথমিক কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রশাসনের দৈনন্দিন কাজকর্মে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে আনা।” এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য অবশ্য অন্তর্ঘাতকেই দায়ী করছেন অনেকে। আজ তাঁদের সঙ্গে এই বিষয়ে বৈঠকও করেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রকের কাজ পুরোদমে শুরু না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রীদের সফর বাতিল করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এ দিকে, ঘটনার তদন্তে চারটি দল গঠন করেছে মুম্বই পুলিশ।
অগ্নিকাণ্ডে আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত সব নথি পুড়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল রাজ্য সরকারেরই একাংশ। পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ আজ জানান, মাসখানেক আগেই সিবিআইয়ের হাতে সমস্ত নথি তুলে দেওয়া হয়েছে। কাজেই ওই তদন্তের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত কম্পিউটারগুলির হার্ড ডিস্ক থেকে বিভিন্ন নথি উদ্ধার করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও আজ জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই কাজে ন্যাসকম, সাইবার শাখা প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞের সাহায্যও নেওয়া হবে। এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে আজ দেশের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে মুম্বইয়ে ‘জেল ভরো’ আন্দোলন বন্ধ রাখল বিজেপি। যদিও রাজ্যের অন্যান্য অংশে এই আন্দোলনে সামিল হন বিজেপি সমর্থকরা। |