কে বলবে সময়টা সকাল ১০টা!
কলকাতা হাইকোর্টের তিন তলার ঘরটার দরজা ঠেলে ঢুকতেই দেখা গেল তখনই ‘ঠাঁই নাই’ অবস্থা। আইনজীবী, তাঁদের সহকারী এবং বেশ কিছু উৎসাহী সাধারণ মানুষের ভিড় ঠেলে এজলাসের কাছে পৌঁছতে রীতিমতো কসরত করতে হল। সিঙ্গুর মামলার রায় কী হয় তা জানতে, বিচারপতির নিজের মুখ থেকে সেই রায় শুনতে সাতসকালেই মানুষ ভেঙে পড়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের ১৩ নম্বর ঘরে।
এত সকালে কলকাতা হাইকোর্টের ঘুম ভাঙা সচরাচর দেখেননি, বলছিলেন আইনজীবীরাই। এজলাসে পাছে জায়গা না পাওয়া যায়, তাই সকাল ন’টা থেকেই উৎসুকদের ভিড় হাইকোর্টের সামনে। এজলাস খুলতেই ভিড়টা ঢুকে পড়ল সেখানে। ১০টার আগেই ভিড়ে ঠাসা ঘর। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেও হাঁসফাঁস অবস্থা। বাধ্য হয়েই এক সময় দরজা খুলে দিতে হয়। ঘরের বাইরেও কালো কোট আর মানুষের ভিড়। |
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জটলা।
বেলা সওয়া ১০টায় এজলাসে ঢুকলেন টাটা মোটরসের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। কিছু ক্ষণ পরেই আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় এসে ঢোকেন। এজলাসের বাইরে ভিড় সামলাতে মোতায়েন করতে হয় জনা ২০ পুলিশ। পুরো হাইকোর্টেই এ দিন অনেক বেশি পুলিশ ছিল। আসলে দিনটাই যে আলাদা! সকলের মধ্যেই এক আলোচনা, কী হবে রায়!
তার পর অপেক্ষা। নির্ধারিত সাড়ে ১০টার ঘর পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে যায়। উৎসাহীরা অনেকেই উসখুস করছেন। পৌনে ১১টা নাগাদ ১৩ নম্বর এজলাসের ইলেকট্রনিক বোর্ডে লাল আলো জ্বলে উঠল। এজলাসের বাইরের ভিড়টা দরজার কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। বোঝা গেল, বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরী এজলাসে বসেছেন। এর পর কয়েক মিনিটের নিস্তব্ধতা। সাড়ে তিন মিনিটের অপেক্ষা। ভিড় এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে এল বাইরে। প্রতি কানে মোবাইল। ছড়িয়ে পড়ছে একটাই খবর, মামলায় হেরে গিয়েছে রাজ্য সরকার!
প্রায় এক বছর ধরে মামলার শুনানির সময়ে আইনজীবীরা একে অপরের বিরুদ্ধে টিপ্পনি কেটেছেন। ‘জুনিয়র’ আইনজীবীর মন্তব্যে ‘সিনিয়র’ আইনজীবী আহত হয়েছেন। দু’পক্ষে তর্ক হয়েছে বিস্তর। এ দিন সে সব কিছুই কিন্তু শোনা গেল না। রায় দানের পরেও নয়। রায় দিয়েই বিচারপতি ঘোষ ঢুকে গেলেন তাঁর চেম্বারে। এজলাসটা নিমেষের মধ্যে ফাঁকা হয়ে গেল। ওই এজলাসে সোমবার থেকে আর বসবেন না বিচারপতি পিনাকী ঘোষ। কে বসবেন তা জানা যাবে সোমবারেই। |
