বাস্তবে দাম বাড়ছে সব জিনিসের। অথচ রাজ্য সরকারের নীতি, সরকারি দুধের দাম বাড়ানো হবে না। সেই নীতি বাঁচিয়ে লোকসানের বোঝা কমাতে মাদার ডেয়ারির পথেই এ বার শুধু দামি দুধ বাজারে বিক্রি করার কৌশল নিল হরিণঘাটা। ঘুরপথে বিদ্যুতের মাসুল যে-ভাবে দফায় দফায় বেড়েছে, বাঁকা পথে যে-ভাবে বাড়ানো হয়েছে সরকারি বাস-ট্রামের ভাড়া, সেই পন্থাতেই দামি দুধ বেশি পরিমাণে বাজারে সরবরাহ করছে তারা।
মাগ্গিগণ্ডার বাজারে সাধারণ মানুষের উপরে বোঝা আর বাড়াতে রাজি নয় রাজ্যের নতুন সরকার। সেই জন্যই সরকারি দুধের দাম না-বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। লোকসানে চলতে থাকা মাদার ডেয়ারি সেই নীতির জেরে আরও বেশি আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে যায়। ক্রমাগত লোকসান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে তারা শেষ পর্যন্ত ‘মা শক্তি’ ব্র্যান্ডের দামি দুধ বাজারে নিয়ে এসেছে। কম দামের আমজনতার দুগ্ধ উৎপাদন অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই সংস্থায়।
সরকারি নীতির প্যাঁচ থেকে বাঁচতে হরিণঘাটা একই ভাবে মাদার ডেয়ারির অনুসরণ তো করছেই। একটি ক্ষেত্রে তারা মাদার ডেয়ারিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। মাদার ডেয়ারি কম দামের দুধ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল মাত্র। আর হরিণঘাটা কম দামের জনতা ব্র্যান্ডের দুধের উৎপাদন ও বিক্রয় সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে তুলনামূলক ভাবে দামি দুধ বাজারে বেচতে শুরু করেছে। হরিণঘাটার গোদুগ্ধের নতুন দাম দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা প্রতি লিটার। প্রায় এক সপ্তাহ আগে, গত ১৬ জুন থেকে বাজারে নতুন দামে হরিণঘাটার দুধ বিক্রি শুরু হয়েছে। কর্মীদের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে এই দুধের দামই ছিল ২৩ টাকা লিটার। অর্থাৎ হরিণঘাটার দুধের দাম প্রতি লিটারে বেড়ে গিয়েছে সাত টাকা।
৩১ মে দোহ বিকাশ অধিকার একটি নির্দেশিকায় নতুন হারে দুধের দাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পুনরায় নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত ‘জনতা দুধ’-এর উৎপাদন ও বিক্রয় বন্ধ থাকবে। এই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন।
ক্ষমতায় এসেই বিদ্যুতের মাসুল বাড়ানো হবে না বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও সরকারি বাস-ট্রামের ভাড়া বাড়ানো হবে না বলেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে সরকার। কিন্তু লোকসানের বোঝা ক্রমশ পাহাড়-প্রমাণ হয়ে উঠতে থাকায় দু’টি ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত সরকারকে বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিতে হয়েছে। সরাসরি না-হলেও গত কয়েক মাসে ঘুরপথে অন্তত চার বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। আর সরকারি বাস-ট্রামের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে খুচরোর আকালের কারণ দেখিয়ে। বিদ্যুৎ-মাসুল ও সরকারি বাসের ভাড়ার মতো দুধের ক্ষেত্রেও বিপদ বুঝে সরকার যে দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে, হরিণঘাটার কর্তাদের একাংশ তা মেনে নিয়েছেন। |