|
|
|
|
‘প্রতিবাদ’ হিসাবেই জিটিএ ভোটে অংশ নিতে ভাবনা |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
দলের এক পক্ষ চাইছে, শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশের বিরোধিতা জোরদার করতে জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ভোট বয়কট করা হোক। দলের অন্য শিবির চাইছে, ‘আন্দোলন-ক্লান্ত’ সাধারণ পাহাড়বাসীকে বিপাকে না ফেলে আসন্ন জিটিএ ভোটে যোগ দিয়ে উন্নয়নের বার্তা জোরালো করা হোক।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সূত্রের খবর, সম্প্রতি একাধিক দলীয় বৈঠকে দুই ভিন্ন মতাবলম্বীদের তর্ক-বিতর্কের জেরে জিটিএ ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি শীর্ষ নেতারা। বস্তুত, গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নতুন ‘তথ্য যাচাই কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে এখনও পর্যন্ত মোর্চা নেতারা আন্দোলন প্রত্যাহার কিংবা জিটিএ-ভোটে অংশ নেওয়া নিয়ে ‘স্পষ্ট’ অবস্থান জানাননি। বরং দুই শিবিরের গ্রহণযোগ্য হবে, এমন সমাধানসূত্র খোঁজার উপরেই তাঁরা জোর দিয়েছেন। মোর্চার অন্দরের অবশ্য খবর, শেষ মুহূর্তে কোনও অঘটন না ঘটলে আগামী রবিবার, দার্জিলিং জিমখানা হলে দলের সব স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রস্তাবিত বৈঠকে ‘শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশের প্রতিবাদ’ হিসেবে জিটিএ ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তই কার্যকর হতে চলেছে।
মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের অনেকে ঘরোয়া কথাবার্তায় সে কথা স্বীকারও করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘প্রতিবাদ হিসেবে জিটিএ ভোটে অংশ নেওয়া’র বিষয়টিকে সামনে রাখলে তা ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ হওয়ার ষোলো আনা সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত, এই সিদ্ধান্ত নিলে এক দিকে মোর্চার মধ্যে তৈরি হওয়া বিরোধ আপাতত মিটবে। দ্বিতীয়ত, প্রায় ৪০০টি মৌজা চেয়ে মাত্র ৫টি পেয়ে তরাই-ডুয়ার্সে ইতিমধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মোর্চা-অনুগামী দুই নেতা উইলসন চম্পামারি ও জন বার্লা। বিভিন্ন মহলে সমালোচনার সামনে তাঁরা কিছুটা কোণঠাসাও। জিটিএ ভোটে অংশ নিলে তাঁদেরও কিছুটা ‘মুখরক্ষা’ হবে বলে মোর্চার শীর্ষ নেতাদের ধারণা। তৃতীয়ত, ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে স্বস্তি দিলেও ‘প্রতিবাদ’-এর কথা আগাম বলা থাকায় ভবিষ্যতে জিটিএ-র সব পদ থেকে নির্বাচিত মোর্চা সদস্যদের ইস্তফা দেওয়ার সম্ভাবনা খোলা থাকছে। সর্বোপরি, নবগঠিত তথ্য যাচাই কমিটির রিপোর্ট পেশ না হওয়া পর্যন্ত জিটিএ-র মাধ্যমে পাহাড়বাসীর উন্নয়নের চাহিদা পূরণের রাস্তাটিও খোলা থাকবে।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি অবশ্য এ ব্যাপারে এখনই বিশদ মন্তব্যে নারাজ। তিনি বলেছেন, “২৪ জুন, রবিবার বৈঠকের পরে দলের সভাপতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
তবে ‘ভোট অন প্রোটেস্ট’ অর্থাৎ ‘প্রতিবাদ স্বরূপ ভোট’-এ অংশ নিলে আরও কিছু ব্যাপারে সুবিধা মিলবে বলে মোর্চা নেতাদের অনেকেরই ধারণা। তা হল, পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দলগুলি সেন কমিটির সুপারিশের বিরোধিতাকে হাতিয়ার করে ভোট টানার ক্ষেত্রে ততটা সফল হবে না। উপরন্তু, ভোটে অংশ না নিলে পাহাড়ের সংগঠন বাড়াতে ‘অত্যন্ত সক্রিয়’ তৃণমূল কংগ্রেসকে সামনে রেখে মোর্চা বিরোধীদের একাংশ যে রাজনৈতিক সুবিধা লাভের আশা করছেন, তাতেও জল ঢালতে পারবেন মোর্চা মোর্চা নেতৃত্ব। এমনকী, মোর্চা নেতারা এটাও ভাবছেন, পাহাড়ে শান্তি বজায় রেখে মোর্চা জিটিএ গঠনে মনোযোগী হলে তৃণমূল নেতৃত্বও দার্জিলিঙে সংগঠন বাড়ানোর ব্যাপারে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিতে বাধ্য হবেন।
মোর্চা যে এমন কৌশল নিতে পারে, সে খবর পৌঁছেছে পাহাড়ের মোর্চা-বিরোধী দলের অনেক নেতার কাছেই। পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও বিষয়টি অজানা নয়। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএম, জিএনএলএফের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেরই অভিমত, বিমল গুরুঙ্গ সামনে ‘কট্টরপন্থী’ মনোভাব দেখালেও ‘প্রতিবাদ’ হিসেবে জিটিএ ভোটে অংশ না নিয়ে তাঁর দলের উপায় নেই। জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কথায়, “আমি দীর্ঘদিন বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে দল করেছি। ওঁকে যতদূর বুঝি, তাতে উনি (গুরুঙ্গ) নিজে ভোটে যেতে চাইবেন না। কিন্তু, পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি, সাধারণ মানুষের আন্দোলন-বিমুখতা এবং দলের মধ্যে বিরুদ্ধ মত থাকায় গুরুঙ্গকেও কোনও কৌশলে ভোটে যাওয়ার উপায় খুঁজতে হবে। শেষ পর্যন্ত ‘বিবেক ভোট’-এর কথাও উঠতে পারে। মোর্চা কী করে তা দেখে, আমরা পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব।” মোর্চা-অনুগামী আদিবাসী নেতা জন বার্লার অনুগামীদের একাংশও জানিয়েছেন, শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশের ‘প্রতিবাদ’ হিসেবে ভোটে গেলে তাঁদেরও ‘সুবিধা’ হবে। ভোটের পরে তথ্য যাচাই কমিটি কাজ শুরু করলে তার রিপোর্ট জমা দিতে অনেক সময় লেগে যাবে। সে ক্ষেত্রে তাঁরাও ঘর গুছিয়ে নতুন কৌশল নেওয়ার কথা ভাবার সময় পেয়ে যাবেন। |
|
|
|
|
|