বাট বা বিস্কুট নয়। লুকিয়ে সোনা আনার জন্য তিনি কিনেছিলেন একগাদা চেন। গলায় পরে নয়। সেগুলো পরেছিলেন হাঁটুতে! অর্থাৎ অভিনব উপায়ে তৈরি ‘নি-ক্যাপ’-এ ছিল তিন কিলোগ্রাম ৩৬৭ গ্রাম সোনার চেন।
শেষরক্ষা হল না। ধরা পড়ে গেলেন কলকাতা বিমানবন্দরে ওই বিমানযাত্রী। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৩টে তিনি দোহা থেকে কাতার বিমান সংস্থার উড়ানে কলকাতায় নামেন। আগে থেকেই খবর ছিল শুল্ক দফতরের গোয়েন্দাদের কাছে। দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নীলেশ রাউতকরের নেতৃত্বে ওত পেতে বসে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের জালেই ধরা পড়েন আব্দুল সালাম চামুন্ডি নামে ওই বিমানযাত্রী। কর্নাটকের ভাটকাল গ্রামে তাঁর বাড়ি। আজ, শুক্রবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে। শুল্ক দফতরের খবর, তাঁর কাছে পাওয়া সোনার দাম প্রায় এক কোটি টাকা।
শুল্ক দফতরের কমিশনার গুরদীপ সিংহ জানান, ধৃতের কাছে পাওয়া সোনা এ দিনই প্যাকেটে ভরে সিল করে দেওয়া হয়েছে। প্যাকেটগুলি আদালতে পেশ করা হবে। শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্নাটকের বাসিন্দা হলেও আব্দুল ইদানীং মুম্বইয়ে থাকতেন। বছরের অনেকটা সময় তিনি কাটাতেন দুবাইয়েও। ১২ জুন তিনি গোয়া থেকে দুবাই যান। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুল্ক অফিসারদের একটানা জেরায় আব্দুল জানান, সোনার চেনগুলি তিনি দুবাই থেকেই কিনেছিলেন। |
কী ভাবে পাচারের ছক কষেছিলেন আব্দুল?
জেরায় আব্দুল জানান, দুবাই থেকে তিনি দোহা যান। কলকাতায় আসার আগে সোনার চেনগুলি ছ’টি প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরেন। দুই হাঁটুর জন্য বিশেষ ধরনের ‘নি-ক্যাপ’ বানানো ছিল আগে থেকেই। ছ’টি প্যাকেট দুই হাঁটুর নি-ক্যাপের ভিতরে ঢুকিয়ে নেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভোরে কলকাতায় নেমে গটগট করে হেঁটে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন আব্দুল। সঙ্গে ছিল দু’টি হাতব্যাগ। শুল্ক গোয়েন্দারা তাঁর পথ আটকালে তিনি ব্যাগ দেখিয়ে দেন। ব্যাগে সন্দেহজনক কিছুই ছিল না। কিন্তু দেহ তল্লাশ করতেই হাঁটুর ভাঁজ থেকে বেরিয়ে পড়ে সোনা।
শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, নিয়ম অনুযায়ী কোনও পুরুষ যাত্রী ১০ হাজার এবং মহিলা যাত্রী ২০ হাজার টাকার গয়না পরে আসতেই পারেন। সেটা তাঁর আভরণের গয়না বলেই ধরে নেওয়া হয়। মুক্ত অর্থনীতির যুগে সোনা আমদানি করাও বেআইনি নয়। কিন্তু তার জন্য যাত্রীকে ন্যূনতম ছ’মাস বিদেশে থাকতেই হবে। গয়না বা সোনা নিয়ে এলে তা শুল্ক অফিসারদের জানাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কর দিতে হবে। আব্দুল যে-সোনা এনেছেন, তার কর বেশ কয়েক লক্ষ টাকা হবে বলেও শুল্ক অফিসারদের হিসেব। এক অফিসারের কথায়, “প্রথমত দুবাইয়ে খাঁটি সোনা পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, সেখানে সোনার উপরে সরকারি কর কম হওয়ায় গ্রাহককে ভারতের তুলনায় কম টাকা দিয়ে কিনতে হয়। সম্ভবত সেই কারণেই আব্দুল সেখান থেকে সোনা কিনেছিলেন।” তবে আব্দুলের বক্তব্য, তিনি সোনার ব্যবসায়ী নন। দুবাইয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়ে ওই সোনা মুম্বইয়ের এক ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। |