বর্ধমান-আসানসোল রেললাইনের দুই পাড়ে ব্যস্ত জনপদ। কিন্তু উড়ালপুল নেই।
ব্যস্ত ওই লাইনে সারা দিন ধরেই বহু মেল, এক্সপ্রেস, সুপার ফাস্ট ও লোকাল ট্রেনের যাতায়াত। ফলে দিনের অধিকাংশ সময়ে বন্ধ থাকে পানাগড় পশ্চিম কেবিন সংলগ্ন রেলগেট। তার ফলে পানাগড়-সিলামপুর রোডে যানজট লেগেই থাকে। এলাকার মানুষ অবিলম্বে উড়ালপুল তৈরির দাবি জানিয়েছেন।
রেললাইনের এক দিকে পানাগড় ও কাঁকসা। অন্য দিকে রণডিহা, সিলামপুর, ভরতপুর প্রভৃতি গ্রাম। পানাগড়ই এলাকার প্রধান বাজার। পানাগড় ও কাঁকসায় রয়েছে একাধিক ব্যাঙ্ক, স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, থানা, ব্লক অফিস, দমকল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বেসরকারি হাসপাতাল। রণডিহায় রয়েছে সেচ দফতরের কার্যালয় ও বাংলো, হাইস্কুল। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, ব্যাঙ্ক, বাজার রয়েছে সিলামপুর, ভরতপুরে। দুই পাড়ের বাসিন্দাদেরই জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে নিয়মিত রেললাইন পারাপার করতে হয়। কাঁকসা ও গলসি ১ ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশের কয়েক হাজার বাসিন্দা প্রতি দিন ওই রেলগেট ব্যবহার করে থাকেন। |
বর্ধমান-আসানসোল রেললাইন দিয়ে রাজধানী এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেস থেকে শুরু করে অগুনতি মেল, এক্সপ্রেস, সুপার ফাস্ট ট্রেন যাতায়াত করে। পুরুলিয়া ও আসানসোল থেকে বর্ধমানগামী লোকালও চলে নিয়মিত ব্যবধানে। গত কয়েক বছরে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়িয়েছে রেলমন্ত্রক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের অধিকাংশ সময় রেলগেট বন্ধ থাকায় তাঁরা নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেন না। অনেকে আবার বিপদের ঝুঁকি নিয়েই বন্ধ রেলগেটের নীচ দিয়ে গলে রেললাইন পেরোন। যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।
সবচেয়ে বিপাকে পড়েন বয়স্ক, মহিলা ও স্কুলপড়ুয়ারা। স্কুলে যাওয়া-আসার সময়ে রেলগেটে অপেক্ষা করতে দেখা যায় ঝাঁক-ঝাঁক ছেলেমেয়েকে। দীর্ঘ অপেক্ষায় অধৈর্য হয়ে তারা অনেকেই গেটের নীচ দিয়ে গলে রেললাইন পারাপার করে। স্কুলপড়ুয়া বিশাল সাউ, বিনায়ক সাধুদের কথায়, “হয়তো রেলগেট বন্ধ বলে অপেক্ষা করছি, একটা মালগাড়ি চলে গেল। ভাবলাম, এ বার গেট খুলে যাবে। কোথায় কী? আরও মিনিট পাঁচেক অপেক্ষার পরে একটি ট্রেন গেল। ও দিকে ফিরতি ট্রেন আসার সময় হয়ে গিয়েছে। সেটি যাওয়ার পরে তবে রেলগেট খোলে। সব মিলিয়ে প্রায় মিনিট কুড়ি-পঁচিশের ব্যাপার। বাধ্য হয়েই নিয়ম ভাঙি।”
ওই রাস্তা ধরেই স্কুলে যান সিলামপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার পাল। তিনি জানান, কখনও-কখনও আধঘণ্টার উপরে অপেক্ষা করতে হয়। মাঝে-মাঝে খুব যানজটও হয়। স্থানীয় বাসিন্দা অশোক বিশ্বাস, শ্যাম চট্টোপাধ্যায়েরা বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, যানজটে আটকে গিয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সও। সমস্যার সমাধান একটিই। এখানে একটি উড়ালপুল গড়ে তোলা দরকার।”
উড়ালপুলের দাবিতে সরব বাম-ডান সব মহলই। সিপিএম পরিচালিত কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ রচিন মজুমদার বলেন, “এলাকার জনসংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে। ট্রেনের সংখ্যাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। উড়ালপুল হলে তবেই সমস্যা মিটবে।” কাঁকসা ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা বিষয়টি জানাব।” পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের ডিআরএম জগদানন্দ ঝা এলাকার বাসিন্দাদের দাবি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কবে সেই আশ্বাস কাজে বাস্তবায়িত হবে, তা এখনও কারও জানা নেই। |