ধুমধাম করে শিল্পাঞ্চলে পালিত হল রথযাত্রা উৎসব। সকাল থেকেই উৎসবে মাতলেন পুণ্যার্থীরা।
আসানসোল গ্রামের গৌড় মন্দিরের রথযাত্রা প্রায় ৮৫ বছরের পুরনো। গৌড় মন্দির ট্রাস্টি কমিটি ওই মেলা শুরু করে। আগে রথ টেনে নিয়ে যাওয়া হত স্থানীয় গ্যারেজ স্কুলের কাছে। সেখান থেকে জগন্নাথ সুভদ্রা ও বলরামকে নামিয়ে মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হত। কিন্তু ২৫ বছর ধরে গ্যারেজ স্কুলে নয়, রথ ফিরিয়ে আনা হচ্ছে রামসাগর ময়দানে। উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলাও বসেছে একাধিক। ট্রাস্টির সম্পাদক ৯০ বছরের বৃদ্ধ মানিকেশ্বর রায় জানান, গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত সত্যকালী মুখোপাধ্যায় ও তিনকড়ি মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এই উৎসব শুরু হয়।
অন্য দিকে, বারাবনির চরণপুর গ্রামে রথযাত্রা শুরু হয় ১৯১৩ সালে। মেলার দেখভাল করেন স্থানীয় মাজি পরিবারের সদস্যেরা। পারিবারিক তত্ত্বাবধানে থাকলেও ৮০ বছরে এই উৎসব সার্বজনীন চেহারা নিয়েছে। পরিবারের প্রবীণ সদস্য ক্ষুদিরাম মাজি জানান, রথে চাপেন তাঁদের কুলদেবতা রাধাগোবিন্দ। ঠাকুরবাড়ি থেকে তাঁকে রথে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পোস্ট অফিসের কাছে। সে দিনই অবশ্য দেবতাকে ঠাকুরবাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। উল্টো রথের দিন ফের রথে ওঠানো হয় কুলদেবতাকে। সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা হয় মন্দিরে। ক্ষুদিরামবাবু জানান, আপকার কোল কোম্পানি যখন প্রথম এই এলাকায় পা রাখে, গ্রামবাসীদের দাবি অনুযায়ী তাঁরাই তৈরি করে দেন দুর্গা মন্দির, শিব মন্দির ও কাঠের রথটি। রথকে কেন্দ্র করে ৭ দিন ধরে চলে মেলা।
জামুড়িয়ার শ্রীপুর গ্রামে প্রায় ১৮৭ বছর আগে রথযাত্রা উৎসবের সূচনা করেছিল স্থানীয় গোস্বামী পরিবার। রথে চড়েন পরিবারের কুলদেবতা নারায়ণ শিলা। দেড় দশক ধরে তা সার্বজনীন পুজোতে পরিণত হয়েছে। প্রথা মেনে গোস্বামী পরিবারই এখনও সেবাইতের ভূমিকায়। ১৯৯১ সালে কাঠের রথ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামবাসীদের নিয়ে গঠিত স্থানীয় চিত্তরঞ্জন ক্লাব নতুন করে রথের পরিকাঠামো বানানোর উদ্যোগ নেয়। ক্লাবের সম্পাদক সাধন রায় জানান, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ৫ লক্ষ টাকায় লোহা, কাঠ ও পিতল দিয়ে রথ তৈরি করা হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে আবার ঘুরতে শুরু করে রথের চাকা। হরি মন্দির থেকে বেরিয়ে রথ সোজা গিয়ে ওঠে শ্রীপুর বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে। ওই দিনই কুলদেবতাকে ঠাকুরবাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। উল্টো রথের আবার রথে ওঠানো হয় তাঁকে। ফিরিয়ে আনা হয় মন্দিরে। রথের দু’দিন ধরে মেলা হয়। প্রায় হাজার দশেক মানুষের ভিড় হয় ছোট্ট গ্রামের ওই মেলাটিতে।
দোমহানি ফুটবল মাঠের পাশে শিবমন্দিরের রথযাত্রা উৎসবের বয়স অবশ্য মাত্র তিন বছর। মন্দির থেকে জগন্নাথ ত্রয়ীকে রথে করে নিয়ে আসা হয় আদি দুর্গামন্দিরে। সেখানেই পুজো চলে সাত দিন ধরে। উল্টো রথের দিন জগন্নাথ দেবকে ফিরিয়ে আনা হয় মন্দিরে। পুজো কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ বার্নওয়াল জানান, প্রথম বছর প্রবল উৎসাহে শোলা দিয়ে রথ বানানো হলেও পরের বছর থেকেই তাঁরা ফিরে গিয়েছেন কাঠের রথে।
কুলটি ও বরাকরের রথযাত্রা উৎসবে যোগ দিতে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে রাস্তায়। সাতচল্লিশ বছরের পুরনো বরাকরের সিদ্ধেশ্বরী দেবী মন্দিরের রথযাত্রা উৎসব। সাধু সীতারাম বাবা সূচনা করেন এই উৎসবের। বরাকরের বিভিন্ন জায়গায় পরিক্রমা করে এই রথ। কুলটিতে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়েছে হিন্দু মিলন মন্দিরের উদ্যোগে। সংগঠনের পক্ষে সুভাষ দাস জানান, সাত দিন ধরে বিশেষ পুজোর আয়োজন করেছেন তাঁরা। নিয়ামতপুরের বেলরুই গ্রামের শতাব্দী-প্রাচীন রথযাত্রা উৎসব মহা ধুমধামের সঙ্গে এই বারও পালিত হয়েছে। চিত্তরঞ্জনের আমলাদাহিতেও রথ উৎসব উপলক্ষে বসেছে মেলা।
দুর্গাপুর মহকুমার শহর ও গ্রামাঞ্চলেও ছিল উৎসবের ধুম। শহরের মাঝখানে রাজীব গাঁধী ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় শহরের সবচেয়ে বড় রথযাত্রা উৎসব। উদ্যোক্তা, রথযাত্রা উৎসব ও সমাজকল্যাণ সমিতি। জগন্নাথ মন্দির থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় রথ পৌঁছায় রাজীব গাঁধী ময়দানে। রথ টানতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন। উৎসব উপলক্ষে বিশাল মেলা বসেছে। চলবে ৭ দিন। প্রতিদিনই থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান। মামড়া, ডিটিপিএস, সাধুডাঙা এলাকাতেও রথের মেলা বসেছে। ইসকনের রথ পরিক্রমা করেছে বিধাননগর এলাকা। পাশাপাশি কাঁকসার অযোধ্যা, বিরুডিহা, বুদবুদের মানকরেও রথযাত্রা উৎসব পালন করা হয়েছে যথোচিত মর্যাদায়। |