প্রতারণার অভিযোগে সিপিএমের এক জোনাল কমিটির সম্পাদককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বুধবার কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুলিশ ওই সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করে। ধৃত নেতার নাম কামিনীকান্ত রায়। তিনি দলের কোচবিহার দক্ষিণ জোনাল কমিটির সম্পাদক। অভিযোগ, কামিনীকান্তবাবু চাকরি দেওয়ার নাম করে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি কাছে মোটা টাকা ঘুষ নিয়েছেন। কিন্তু চাকরি না হলেও টাকা ফেরত দেননি। ওই ঘটনায় জেলার রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “চাকরি দেওয়ার নাম করে একাধিক ব্যাক্তির থেকে টাকা নিলেও কেউ চাকরি পায়নি। টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি ওই অভিযোগে কামিনীকান্ত রায় নামে ওই ব্যাক্তি জনরোষের মুখে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে প্রতারণার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” অভিযুক্ত সিপিএম নেতা কামিনীবাবু প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ। মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় পরিকল্পিতভাবে থামিয়ে তৃণমূলের লোকজন আমাকে মারধর করে। পরে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে মিথ্যা মামলা রুজু করে আমাকে গ্রেফতার করা হয়।” দলের নেতা গ্রেফতারের ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন কোচবিহার জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁরাও ঘটনার পিছনে তৃণমূলের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। কামিনীকান্তবাবু গ্রেফতারের খবর পেয়ে এ দিন থানায় ছুটে যান দলের জেলা সম্পাদক তারিণী রায়, জেলা কমিটির সদস্য পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত, যুব নেতা মহানন্দ সাহ। পরে তারিণীবাবু বলেন, “দলের কাজে জোনাল সম্পাদক সকালে বাড়ি থেকে বার হয়েছিলেন। তৃণমূলের সমর্থকরা তাঁর বাইক থামিয়ে ছিনিয়ে নেয়। মোবাইল ফোন কেড়ে মারধোরও করে। পরে নজর ঘোরাতে মিথ্যা অভিযোগ সাজানো হয়।” যদিও কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সিপিএম নেতৃত্বের ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে। ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।” পুলিশ জানায়, কামিনীবাবুর বাড়ি কোচবিহারের বড় নলঙ্গিবাড়ি গ্রামে। এদিন সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে পাটছড়া এলাকায় যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে স্থানীয় একদল বাসিন্দার বচসা শুরু হয়। কামিনীবাবু বামফ্রন্টের শাসনকালে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেরত দেননি বলে অভিযোগ ওঠে। বাসিন্দারা টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও জানায়। ওই সময় কামিনীবাবুকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে কামিনীবাবু এলাকার এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। উত্তেজিত জনতা ওই বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনার পরে পরেশচন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তি কামিনীকান্তবাবুর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি পুলিশকে জানান, পাঁচ বছর আগে তাঁর স্ত্রীকে অঙ্গনওয়াড়ির সহায়িকা পদে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কামিনীবাবু ৪০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু চাকরি হয়নি। টাকাও ফেরত দেননি। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে দুপুরে সিপিএমের ওই জোনাল সম্পাদককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কামিনীকান্ত রায় পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক। বামফ্রন্টের শাসনকালে ভয়ে কেউ কেউ তাঁর কাছে টাকা ফেরত চাওয়ার কথা ভাবতে পারে নি। রাজ্যে পালা বদলের পরে শুরু হয় তদ্বির। পাটছড়ার বাসিন্দা পরেশচন্দ্র রায় বলেন, “বাম জমানায় কামিনীবাবু ছিলেন এলাকার শেষ কথা। ২০০৫ সালে আমার স্ত্রী নমিতা দেবীকে অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৪০ হাজার নেন। চাকরি হয়নি। টাকা ফেরত দিতেও টালবাহানা শুরু করেন। এ দিন টাকা ফেরত চাইলে তিনি গোলমাল শুরু করেন।” এলাকার আমিনুল হকের অভিযোগ, তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বিবিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে ওই সিপিএম নেতা ৫৫ হাজার টাকা নেন। চাকরি হয়নি। টাকা ফেরত দেননি। |