সুদ বাবদ পাঁচ হাজার টাকা সময় মতো শোধ না-করায় ঋণগ্রহীতাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে মহাজনের দুই ছেলের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার চণ্ডীপুরের চাঁচলাপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। ১১ জুন মারধরের ঘটনাটি ঘটে। সোমবার রাতে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি ঋণের ৫০ হাজার টাকা এক মাসের মধ্যে শোধ দিয়েছিলেন।
পুলিশ জানায়, নিহতের নাম রমেশ বর্মন (৫২)। তিনি স্থানীয় নেহেম্বা হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন। সুদের টাকা দেওয়া নিয়ে বচসার জেরে মহাজনের দুই ছেলে বিমল এবং কমল বর্মন গত ১১ জুন তাকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটান বলে অভিযোগ। সোমবার রাতে কলকাতায় রমেশবাবু মারা যান। বুধবার সকালে তাঁর দেহ পৌঁছতে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের লোকজন অভিযুক্তদের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তার আগেই বাড়িতে তালা মেরে পালিয়ে যান অভিযুক্ত সুদের কারবারি কৃষ্ণ বর্মন-সহ সকলেই। অভিযুক্তদের একজন বিমল বর্মন তপন থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে উত্তেজনা কমে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। পলাতক অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চলছে।” এ দিন অভিযুক্ত বিমল বর্মনকে পুলিশ বালুরঘাট আদালতে হাজির করালে বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। বিমল বর্মন তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “চুক্তি মেনেই রমেশবাবু ঋণ নেন। পাওনা টাকা না দেওয়ায় তাঁর সঙ্গে বচসা হয়েছিল মাত্র। তাঁকে মারধরের অভিযোগ মিথ্যা।”
নিহতের আত্মীয় নিত্যগোপাল বর্মন, অনিল সরকার বলেন, ছোট মেয়ে করুণার বিয়ের খরচের জন্য রমেশবাবু এলাকার মহাজন কৃষ্ণ বর্মনের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে তিনি মেয়ের বিয়ে দেন। এক মাস বাদে স্কুলকর্মী রমেশবাবু প্রথমে ৪০ হাজার টাকা এবং পরে ১০ হাজার টাকা শোধ করে দেন। টাকা শোধ করা সত্ত্বেও কী করে এত টাকা সুদ হয়, তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গত সোমবার কথা কাটাকাটি হয়।
সময় মতো সুদের টাকা শোধ না-করার অভিযোগ তুলে সেই সময় রমেশবাবুর উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত মহাজন কৃষ্ণ বর্মনের দুই ছেলে বিমল ও কমল তাঁকে রাস্তায় ফেলে বাঁশ দিয়ে পেটান বলে অভিযোগ। গত ১৩ জুন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্তের স্ত্রী কিরণদেবী। গুরুতর জখম অবস্থায় রমেশবাবুকে প্রথমে তপন ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। কিন্তু জখম রমেশবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মৃতের আত্মীয়দের অভিযোগ, হামলার পর থানায় অভিযোগ করা সত্ত্বেও পুলিশ তৎপরতা দেখায়নি। তপনের তৃণমূল বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা বলেন, “এটা একটা অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা। পুলিশ কর্তৃপক্ষকে এই ঘটনায় অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে এলাকাবাসীর আস্থা ফেরাতে হবে।” |