তারা নিজেরা কোনও সমীক্ষা চালায়নি। সমীক্ষা চালায়নি ‘আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স’ও। যারা সমীক্ষা চালিয়েছিল, সেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। অথচ, বুধবার পুর-অধিবেশনে কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, কলকাতা শহর মোটেই আর্সেনিক-প্রবণ নয়। কীসের ভিত্তিতে পুরসভার এই চূড়ান্ত রায়, তা কিন্তু জানালেন না তাঁরা।
অর্থাৎ, যাদবপুর বিধানসভা এলাকায় আরও গভীর নলকূপ বসানোর যে প্রক্রিয়া পুরসভা শুরু করেছে, তা চালু থাকছে। কিন্তু ভূগর্ভস্থ জলের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পুরসভা নলকূপ ধরে ধরে সমীক্ষা চালাবে কি না, তা-ও জানাননি পুরকর্তারা।
এ দিন পুরসভার অধিবেশনে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানিয়ে দিলেন, কলকাতা আর্সেনিক-প্রবণ এলাকা নয়। তারকবাবুকে সমর্থন করে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বললেন, “কলকাতায় আর্সেনিক নিয়ে কোনও বিতর্ক সৃষ্টি করা উচিত নয়। আতঙ্ক ছড়ানোও ঠিক নয়।”
পুরসভা যাদবপুর এলাকার জলসঙ্কট মেটাতে সম্প্রতি সেখানে বেশ কিছু গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত যে অবৈজ্ঞানিক, তা বোঝাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ’ ওই এলাকার ছ’টি গভীর নলকূপের জল পরীক্ষা করিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, ওই সব নলকূপের জলেই বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। পুরসভা জানিয়ে দিয়েছে, তারা ওই সমীক্ষা-রিপোর্ট মানে না। তারা দেখবে রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স কী বলছে। কী বলছে টাস্ক ফোর্স? আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথ বলেন, “উত্তর ও দক্ষিণ পরগনা দু’টি জেলাই আর্সেনিক-প্রবণ। তার মধ্যে কলকাতা কী ভাবে আর্সেনিকমুক্ত হতে পারে, তা বুঝতে পারছি না! বিশেষ করে যাদবপুর এলাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার মধ্যে বলে সেখানে ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।”
কলকাতার আর্সেনিক-পরিস্থিতি নিয়ে পুর-অধিবেশনে মন্তব্য করার আগে পুর-কর্তৃপক্ষ কেন আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে কোনও কথা বলে নেননি, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী কাউন্সিলরদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, কলকাতা পুরসভা আর্সেনিক দূষণ নিয়ে নিজেদের মতামত দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভূগর্ভের জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল পুরসভার। নিজেদের পরিকাঠামো না থাকলে তারা অন্য কোনও সংস্থার সাহায্য নিতেই পারে।
তারকবাবু ও মেয়র যা-ই বলুন, ২০০০-২০০২ সালে শহরের ভূগর্ভস্থ জলস্তরের মান সম্পর্কে জানতে তখনকার পুরবোর্ড বিভিন্ন সরকারি ভবনের গভীর নলকূপের জল পরীক্ষা করিয়েছিল। তারা জাতীয় গ্রন্থাগার, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, এসএসকেএম হাসপাতাল, টাঁকশাল-সহ বিভিন্ন সরকারি ভবনের গভীর নলকূপের জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক পেয়েছিল। লেক গার্ডেন্স এলাকার কয়েকটি বেসরকারি নলকূপের জলেও পাওয়া গিয়েছিল বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক। ওই সব নলকূপ পুরসভা বন্ধ করে দেয়। ওই সব নলকূপের আশপাশের এলাকার গভীর নলকূপগুলির জল কিন্তু পুরসভা কখনও পরীক্ষা করেনি বলে বিরোধী কাউন্সিলরদের অনেকেই এ দিন মন্তব্য করেছেন। কলকাতা আর্সেনিক-প্রবণ নয় বলে ঘোষণা করলেও বিভ্রান্তি কাটাতে তাঁরা নিজেরা সমীক্ষা চালাবেন কি না, তা পুর-কর্তৃপক্ষ না-জানানোয় ধন্ধ কিন্তু কাটেনি।
রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স কখনও কলকাতার জলে আর্সেনিকের মাত্রা পরিমাপ করেনি বলে কুমারজ্যোতিবাবু জানিয়েছেন। পুরসভা তাঁদের এ ব্যাপারে কখনও অনুরোধও করেনি। কুমারজ্যোতিবাবু বলেন, “রাজ্যের আটটি জেলার ৭৯টি ব্লকে জলের নমুনা সংগ্রহের পরে পরীক্ষা করে দেখে সেগুলি আর্সেনিক-প্রবণ বলে আমরা জানিয়ে দিয়েছি। কলকাতায় আমরা সমীক্ষা করিনি। কলকাতা পুরসভা বললে আমরা পরীক্ষা করতে পারি। যদিও পুরসভার নিজস্ব বিশেষজ্ঞ টিম রয়েছে।” |