আবার জটিল অস্ত্রোপচার হল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। মধ্য ত্রিশের এক যুবকের পেটে প্রায় সাত ইঞ্চি ছুরির আঘাতে ক্ষুদ্রান্ত্র বেরিয়ে এসেছিল। রক্তপাতও অনেকখানি হয়েছিল। আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় শল্য চিকিৎসক পবণ মণ্ডল ও আশিস কপাট বুধবার বরাবাজারের সিন্দরি গ্রামের নিতাই পরামানিকের পেট থেকে ছুরিটি বের করেন।
পবনবাবু বলেন, “এখন রোগী স্থিতিশীল। তবে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাবে না।” গত মাস দেড়েকের মধ্যে লোহার রড ও ছুরি বিঁধে যাওয়ার মতো তিনটি জটিল অস্ত্রোপচার হল এই হাসপাতালে। হাসপাতাল সুপার স্বপন সরকার বলেন, “এটা ‘টিম-ওয়ার্কের’ ফল। আগের থেকে এখন কিছু অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এসেছে। আমি চিকিৎসক ও যাঁরা সাহায্য করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” |
কী ভাবে ছুরিকাহত হলেন নিতাই? তাঁর চুনারাম পরামানিকের অভিযোগ, “গরমের জন্য আমাদের বাড়ির সকলে বারান্দায় শোয়। মঙ্গলবার রাত দুটো নাগাদ হঠাৎ ছেলের চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখি আমার ওকে পড়শি প্রভাত মাহাতো জাপটে ধরেছে আর রঞ্জিত মাহাতো বুকে ছুরি বসিয়ে দিচ্ছে। আমরাও চিৎকার করে উঠি। প্রভাত, রঞ্জিত পালিয়ে যায়। আলো জ্বেলে দেখি নিতাইয়ের পেটে ছুরি গেঁথে রয়েছে।”
তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করেই বিঁধে থাকা ছুরি নিয়েই আত্মীয়দের সঙ্গে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল তিনি আসেন। ভোর সাড়ে পাঁচটায় হাসপাতালের ওই দুই শল্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করা শুরু করেন। কতটা জটিল ছিল অস্ত্রোপচার? পবণবাবু বলেন, “পেটের একেবারে ডানদিকে কোমর ও পাঁজরের মাঝখানে সাত ইঞ্চির ধারাল ছুরিটির পুরোটা ঢুকেছিল। ছুরির ডগা মেরুদণ্ডে গেঁথে গিয়েছিল। ক্ষুদ্রান্ত বাইরে বেরিয়ে এসেছিল আর নিম্ন মহাধমনীর কিছুটা অংশ কেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রোগীর যা অবস্থা ছিল তাতে দ্রুত অস্ত্রোপচার না করে উপায় ছিল না।” তাঁর জ্যাঠামশাই বলেন, “নিতাই একটা দোকানে কাজ করে সামান্য রোজগার করে। এখানে ওর অস্ত্রোপচার হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম।” সিন্দরি পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের বিভূতি মাহাতো বলেন, “পরামানিক পরিবারের সঙ্গে একটি গাছের দখল নিয়ে ওই পাড়ার কয়েক জনের ঝগড়া হয়েছিল। ঘটনার নিষ্পত্তি করতে ওঁরা পঞ্চায়েতে দরখাস্ত জমা দেন। নিতাইকে ছুরি মারার ঘটনা জানি।” পড়শি প্রভাত ও রঞ্জিতের বিরুদ্ধে বরাবাজার থানায় অভিযোগ করেছে নিতাইয়ের পরিবার। অভিযুক্তেরা পলাতক বলে পুলিশের দাবি। |