জঙ্গলমহলের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সীমনায় বাড়ছে মাওবাদী গতিবিধি
এক কোম্পানি বাহিনী সরাতেও নারাজ তৃণমূল
বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রচারে জঙ্গলমহল থেকে ‘যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার’ ছিল তৃণমূলের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। অথচ, পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে শিবির করে থাকা ৩১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে মাত্র এক কোম্পানিকে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে পাঠানোর কথা উঠতেই যেন গেল গেল রব উঠেছে জেলা তৃণমূল শিবিরে।
তার উপরে সোমবার বিনপুরের দহিজুড়িতে দীর্ঘ দিন বাদে যে ভাবে মাওবাদীদের নামে পোস্টার, ব্যানার দেখা গিয়েছে এবং তৃণমূল নেতাদের ‘গণ-আদালতে শাস্তি’র হুমকি দেওয়া হয়েছেতাতে প্রধান শাসকদল সিঁদুরে মেঘ দেখছে। দলেই প্রশ্ন উঠেছে, কিছুটা হলেও স্থানীয় ‘সমর্থন’ না থাকলে এ ভাবে পোস্টার, ব্যানার লাগানো সম্ভব কি না।
দলীয় নেতারা তাই যৌথ বাহিনী সারানোর বিরুদ্ধে দরবার শুরু করেছেন প্রশাসনিক-কর্তাদের কাছে। তৃণমূল সূত্রেরই খবর, গত রবিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বাহিনী সরানোর বিরুদ্ধে সওয়ালও করেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্তও যে দল ছিল জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনীর ‘নিপীড়ন’-এর বিরুদ্ধে সরব, তাদের হলটা কী?
এসপি-র সঙ্গে সাক্ষাৎ নেহাতই ‘সৌজন্যমূলক’ দাবি করেছেন জেলা তৃণমূলের ওই দুই নেতা। পুলিশ সুপারেরও বক্তব্য, “অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলব না।” একান্তে দলীয় একাধিক নেতাই কিন্তু জানাচ্ছেন, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে ফের অশান্তি হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। তাই যেখানে যেমন বাহিনী রয়েছে, তাই থাকাই উচিত। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “জঙ্গলমহলের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সীমানা এলাকায় মাওবাদীরা গতিবিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে খবর। তবে, পুলিশ সতর্ক রয়েছে।”
ঘটনা হল, তাঁর সরকারের অন্যতম ‘সাফল্য’ হিসাবে ‘জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানো’র দাবি প্রায়ই করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মাসে সরকারের বর্ষপূর্তিতে প্রকাশিত ‘প্রত্যাশা থেকে প্রাপ্তি’ পুস্তকেও মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে থাকা স্বরাষ্ট্র দফতরের ‘সাফল্যের খতিয়ান’ অংশে ‘সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি’ হিসাবে ‘জঙ্গলমহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তনে’র কথা বলা হয়েছে। ওই অংশেই দাবি করা হয়েছে ‘মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরানো’র কৃতিত্বও।
শান্তি ফেরার দাবির পাশাপাশি বাহিনী রাখার পক্ষে সওয়াল কি বেমানান নয়? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের এক নেতার ‘যুক্তি’, “জঙ্গলমহলে এখন শান্তি ফিরেছে। কিন্তু একটা ‘ভুল’ সিদ্ধান্তে ফের অশান্ত হতে পারে এলাকা! তাই বাহিনী সরানোর বিরোধিতা করছি।”
পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাংশের আবার ধারণা, কিষেণজি-র মৃত্যু, একাধিক নেতা-নেত্রীর আত্মসমর্পণের ‘ধাক্কা’ সামলে জঙ্গলমহলে নতুন করে সংগঠন গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে মাওবাদীরা। দহিজুড়িতে পোস্টার-ব্যানার টাঙানো সেই কর্মসূচিরই অঙ্গ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বেলপাহাড়ির শিমুলপাল, ওড়িশা লাগোয়া গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রামের জঙ্গলাকীর্ণ গ্রামগুলিতে বাসিন্দাদের নিয়ে রাত-বিরেতে ফের সভাও করছে মাওবাদীরা। যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার ও বন্দিমুক্তির দাবিতে মিছিল করানো হচ্ছে। অনুন্নয়নের জন্য তৃণমূল সরকারকে দায়ী করে এমনও বলা হচ্ছে, ‘ক্ষমতার হাতবদল হলেও শাসকের চরিত্র বদলায়নি’।
পুরুলিয়াতেও মাওবাদী-সক্রিয়তা বাড়ছে বলে সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি অযোধ্যা-পাহাড়ে মাওবাদীদের একটি স্কোয়াড ঢুকেছে এবং তারা নিরাপত্তা-রক্ষীদের শিবিরে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। ‘স্পেশ্যাল অ্যাকশন টিম’ বা ‘স্যাট’ তৈরি করে মাওবাদীরা অতর্কিত হামলা চালাতে পারে, এমনকী শাসকদলের বিধায়কদের অপহরণ করতে পারে বলেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। এর পরেই ওই বিধায়কদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বলরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি-প্রকল্প বিষয়ক মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর পুরুলিয়া মফস্সল এলাকার বাড়িতে, বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোর ঝালদার বাড়িতে তো আস্ত রক্ষী-শিবিরই করা হয়েছে।
শান্তিরামবাবুর বক্তব্য, “মানুষ ওদের খুনের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই আতঙ্কের পরিবেশ ফেরাতে ওরা চোরাগোপ্তা হামলা বা অপহরণের ছক কষতে পারে। আমাদের কর্মীদের সাবধান থাকতে বলেছি।” নেপালবাবু বলেছেন, “মাওবাদীরা অপহরণের ছক কষতে পারে বলে পুলিশ আমাকে জানিয়েছে।”
জয়পুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো, বান্দোয়ানের সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত বেসরার নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে জঙ্গলমহলে জনসংযোগ বাড়াতে ২৩ জুন লালগড়ে ফের ফুটবল-ম্যাচের আয়োজন করছে রাজ্য ক্রীড়া-দফতর। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মেয়েদের নিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের ভাবনা রয়েছে পুলিশেরও।

(প্রতিবেদন: কিংশুক গুপ্ত, বরুণ দে, প্রশান্ত পাল )



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.