বৃন্দাবনের কৃষ্ণের জীবনের যে সব অনুষ্ঠানের উদ্যাপন হয় নানা বৈষ্ণব উৎসবে, তার সঙ্গে মিল নেই বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপের শ্রেষ্ঠ উৎসবেরই।
রথযাত্রার সঙ্গে বৃন্দাবনের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু বৃন্দাবনে কৃষ্ণের জীবনের কাহিনি নিয়ে গড়ে ওঠা দোল, রাস, জন্মাষ্টমীর মতো উৎসবকে আড়ম্বরে ছাপিয়ে যান দেবতা জগন্নাথ। কৃষ্ণপ্রেমে জগৎ মাতালেন যে নিমাই, তিনিও শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছিলেন জগন্নাথধামে। যেন সেই ধারাতেই জগন্নাথকে কেন্দ্র করে সেই জ্যৈষ্ঠ থেকেই চন্দনযাত্রা, স্নানযাত্রা, রথযাত্রার মতো উৎসব পালিত হয় একের পর এক। সারা ভারতে ছড়ানো বিভিন্ন কাহিনির নায়ক কৃষ্ণের জীবনও যেন এই ভাবেই মিলেও যায় জগন্নাথের কাহিনির সঙ্গে। মহাকাব্যের নায়ক কৃষ্ণের দেবতা হয়ে ওঠার যে যাত্রা, তার সঙ্গেও তাই মিলে যায় এই নানা কাহিনির মিলে যাওয়া।
সামান্য বৃষ্টির পরে দীর্ঘদিনের গরম কেটেছে। তার উপরে রথযাত্রার মতো উৎসব। তাই নবদ্বীপের ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি ফিরেছে। হোটেল ব্যবসায়ী নিখিল কুণ্ডু বলেন, “প্রচণ্ড রোদের তাতে কেউই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন না। তাই গরমের ছুটিতেও সে ভাবে পর্যটক আসেননি। আমরা এক রকম বস বসে মার খেয়েছি। এখন সেই ফাঁকা ঘর অনেকটাই ভরছে। আশা করছি, রথ থেকে উল্টো রথ, এই পুরো সময়টাই পর্যটকের ভিড় থাকবে।” |
নবদ্বীপ জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান অদ্বৈতদাস বলেন, “রথের পরে পরেই জন্মাষ্টমী। তাই এখন নবদ্বীপ ঘিরে বহু পুণ্যার্থীর ভিড় থাকবে। আবার জমজমাট হয়ে উঠবে শহর।” মায়াপুরের দিকে তাকালেও সে কথাই বোঝা যাচ্ছে। ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, “আবহাওয়া অনেকটাই ভাল হয়েছে। ফলে লোক না হওয়ার যে আশঙ্কা হয়েছিল, তা কেটে গিয়েছে।” ইসকনের রথেরও কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কাঠের বদলে রথের পাটাতন করা হচ্ছে ধাতুর।
নবদ্বীপ শহরের বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে প্রায় এক ডজন রথ বেরোয়। তার মধ্যে মণিপুর রাজবাড়ির রথের বয়স তিনশো পার হয়ে গিয়েছে। প্রায় সমসাময়িক মুখোপাধ্যায় বাড়ির রথ। শহরের কার্যত বেশিরভাগ রাস্তাই বৃহস্পতিবার জুড়ে থাকবে ছোট বড় নানা রথই। পোড়া মা তলায় যেহেতু সব রথই এক বার করে আসে, তাই সেখানে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হবে। একই ভাবে মায়াপুর রোডেও বিকেল তিনটের পর থেকে বাস চলাচল নিয়ন্ত্রিত হবে। শুরু হয়েছে রথের মেলার প্রস্তুতি। সেই মেলায় পাওয়া যায় কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির মাটির পুতুল। রথ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই শহরে আসেন বহু লোক। পুরসভা সতর্ক নজর রাখছে, কোনও পুণ্যার্থী যেন বিপাকে না পড়েন। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, সব হোটেল লজগুলিকেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। উৎসবের সময় যাতে কোনও গণ্ডগোল না হয়, সে জন্য শহরে থাকবেন অনেক সাদা পোশাকের পুলিশও। খেয়া ঘাটের উপরেও নজরদারি রাখবে প্রশাসন। |