|
|
|
|
লালগড়ের রথযাত্রায় ফিরেছে পুরনো ছন্দ |
কিংশুক গুপ্ত • লালগড় |
অশান্তি পেরিয়ে অনেকটাই ছন্দে ফিরেছে লালগড়। তাই আজ, বৃহস্পতিবার, লালগড়-রাজবাড়ির ঐতিহ্যপূর্ণ রথ উপলক্ষে ফের মানুষের ঢল নামবে বলেই আশাবাদী রাজপরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। রথযাত্রা ঘিরে আগের মতোই ফের উৎসবে মেতে উঠবেন লালগড়বাসী, এমন আশা প্রশাসনেরও।
রাজবাড়ির রথে সওয়ার হন রাধামোহন জিউ ও শ্রীমতী। রাধামোহন ও শ্রীমতীর সঙ্গে নিমকাঠে তৈরি জগন্নাথের একটি বিগ্রহকেও অবশ্য রথে চাপানো হয়। তবে লালগড়ে রথের ‘নায়ক’ রাধামোহনই। স্বর্ণসাজে সজ্জিত রাধামোহন ও শ্রীমতীকে দেখার জন্য রথযাত্রার দিনে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়।
যুগ বদলেছে, অস্ত গিয়েছে রাজ পরিবারের সেই সু-দিনও। ভগ্ন রাজবাড়ি ছেড়ে রাজবংশের উত্তরপুরুষ দর্পনারায়ণ সাহস রায় এখন থাকেন মাটির বাড়িতে! |
|
রাধামোহন জিউ ও শ্রীমতি। |
কিন্তু তাঁর মেজাজ রয়েছে রাজার মতোই। দর্পনারায়ণ শোনালেন রথযাত্রার ইতিহাস।
সে প্রায় তিনশো বছর আগের কথা। লালগড়ের রাজা তখন রসিকনারায়ণ সাহস রায়। এক সন্ন্যাসী এলেন রাজদর্শনে। সন্ন্যাসীর সঙ্গে কষ্টিপাথরের একটি কৃষ্ণ-বিগ্রহ ছিল। ‘রাধামোহন জিউ’। রাজার আতিথেয়তায় কয়েকদিন লালগড়ে থাকার পর ফিরে যাওয়ার সময়ে সন্ন্যাসী কৃষ্ণের বিগ্রহটি রসিকনারায়ণকে দান করে যান। সেই থেকেই লালগড়ে রাজ পরিবারের সেবায় রাধামোহন জিউ ও শ্রীমতীর নিত্যপুজো চলেছে। লালগড়বাসীর জীবনচর্যার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছেন রাধামোহন। জনশ্রুতি, শুরুতে একাই ছিলেন রাধামোহন। পরে যোগ হন অষ্টধাতুর শ্রীমতী।
রথযাত্রার দিন মন্দির থেকে রাধামোহন ও শ্রীমতীর বিগ্রহ নিয়ে আসা হয় রথতলায়। কেবলমাত্র এ দিনই রাধামোহন ও শ্রীমতীকে সোনার অলঙ্কারে সাজানো হয়। রথের রশি টানা শুরু হয়। স্থানীয় হাটচালায় মাসির বাড়িতে পৌঁছে যাত্রা শেষ হয়। সেখানে ৮দিন ধরে রথের-মেলা চলে। ওই দিনগুলিতে পালাকীর্তন, রামায়ণগানের আসরও বসে। |
|
লালগড়ের রথ। |
৮দিন সেখানে থাকার পর উল্টোরথে বাবুপাড়ার মন্দিরে রাধামোহন ও শ্রীমতীকে ফিরিয়ে আনা হয়।
দর্পনারায়ণ জানান, আগে ১৮ চাকা-বিশিষ্ট কাঠের বিশাল দোতলা রথ ছিল। সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাইশ বছর আগে আট-চাকার লোহার রথ তৈরি করানো হয়। গত দু’দশক ধরে সেই রথেই চড়েন রাধামোহন ও শ্রীমতী। স্থানীয় লোক-সংস্কৃতি গবেষক পঙ্কজকুমার মণ্ডল বলেন, “আদতে রাজ-পরিবারের উৎসব হলেও কয়েকশো বছর ধরেই লালগড়ের রথযাত্রা সর্বজনীন রূপ পেয়েছে। গত বছর থেকে উৎসব ফের আগের ছন্দও ফিরে পেয়েছে।”
|
ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
|
|
|
|
|