|
|
|
|
চারশো বছর পরও ঐতিহ্যে অমলিন বাসুদেবপুরের রথ |
অমিত কর মহাপাত্র • এগরা |
আড়ম্বর তুলনায় কম হলেও ঐতিহ্যে আজও অমলিন প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন বাসুদেবপুরের রথযাত্রা।
এগরা থানা এলাকার বাসুদেবপুর গ্রামে আজও অন্যতম আকর্ষণ অশ্বত্থ বটের শিকড়ে জরাজীর্ণ জগন্নাথ মন্দিরটি। উচ্চতা ১০০ ফুট, দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট ও প্রস্থ ৪০ ফুট। পূর্বমুখী এই মন্দিরের দক্ষিণ দিকে রয়েছে তুলনায় ছোট রাম মন্দির ও উত্তরদিকে প্রশস্ত স্নান-বেদি। আংশিক ভগ্ন মন্দিরটিতে রয়েছে ওড়িশি রীতির রথাকৃতি চারচালা শিখর দেউল এবং শীর্ষে তিনটি কলস। মেদিনীপুরের অন্যতম প্রাচীন এই মন্দির দ্বারের পর প্রশস্ত জগমোহন, গর্ভগৃহও বৃহদায়তন। বিরাট বেদিতে আসীন ৬ ফুট উচ্চতার জগন্নাথ ও বলরাম এবং ৪ ফুট উচ্চতার সুভদ্রা। ওজন ও আয়তনের কারণে রথে এই ত্রিমূর্তিকে বসানো হয় না। বসানো হয় রাম মন্দিরে রক্ষিত তুলনায় ছোট মূর্তিকে। |
|
প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির। |
কথিত আছে, প্রায় চারশো বছর আগে ওড়িশা রাজার দেওয়ান ছিলেন বিভীষণ মহাপাত্র। বর্তমান মেদিনীপুরের একাংশ তাঁর ক্ষমতাধীন ছিল। মোগল আক্রমণ থেকে এলাকা রক্ষা করার জন্য প্রতিবেশী মুসলমান রাজা হিজলির মসনদ আলির সঙ্গে পরস্পরকে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। বিষয়টি ওড়িশার রাজা জানতে পেরে পুরীর মন্দিরে তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। অপমানের শোধ নিতে ও জগন্নাথের প্রতি ভক্তি অবিচল রাখতে নিজের রাজ্যে ফিরে বাসুদেবপুরে মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন বিভীষণ মহাপাত্র। নিত্য পূজা ও রাজসিক ভোগের জন্য চোদ্দো হাজার মহাল দান করেন ও পূজারী কৃষ্ণ পণ্ডাকে নিয়োগ করেন। প্রয়াণের আগে কৃষ্ণ পণ্ডাকে দেবতা ও দেব সম্পত্তির ভার অর্পণ করেন তিনি। এই কৃষ্ণ পণ্ডাই গড়বাসুদেবপুর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। পরে এঁরা ‘রায়’ উপাধি পান। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক তথা ‘এগরার ইতিহাস’ গ্রন্থ প্রণেতা শিশুতোষ ধাওয়া বলেন, ‘‘বিশাল জগন্নাথ মন্দির, বিরাটাকার বিগ্রহ এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত গড় বাসুদেবপুরের ‘রায়’ পদবির ব্রাহ্মণ রাজবংশ ও জগন্নাথের নিত্য পূজা-অচর্না উৎসব অতি প্রাচীন।” |
|
চলছে রথ সাজানোর কাজ। |
এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছর আগে পর্যন্ত রাজ পরিবারের তরফেই রথ উৎসব পরিচালনা করা হত। এখন উৎসব পরিচালনা করেন ‘বাসুদেবপুর জগন্নাথ মন্দির উন্নয়ন পরিষদ।’ পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক রামপদ রথ ও বিমলচন্দ্র সাউ বলেন, “মন্দিরের নথি থেকে জানা যায় আগে বিশাল আকৃতির রথ ছিল। ১২৮২ বঙ্গাব্দের ঝড়ে তা ভেঙে যায়। পরে নতুন রথ নির্মিত হয়।” রথের মেলা অবশ্য কখনওই বন্ধ হয়নি। আগে দশ দিন ধরে মেলা হত। এখন তিন দিনের মেলা বসে। মন্দির উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি পার্থসারথি দাস ও সহ-সভাপতি জ্যোতির্ময় রায় বলেন “পুরীর রীতি মেনে এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। ঐতিহ্য মেনে হয় পালাকীর্তন। বর্তমানে এই উৎসবের সঙ্গে রথ প্রতিযোগিতা, ফুটবল খেলারও আয়োজন করা হয়েছে।” পাশাপাশি তাঁরা জানান, বাসুদেবপুরের দুই ভূমিপুত্র কাঁথির সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশির অধিকারী এবং এগরার বিধায়ক সমরেশ দাস এই মন্দির সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে এই নিয়ে বিশেষ আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা।
|
ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
|
|
|
|
|