|
|
|
|
রথযাত্রার অপেক্ষায় বছর কাটে মহিষাদলে |
দেবমাল্য বাগচি • মহিষাদল |
সেই ১৭৭৬ সালে পথ চলা শুরু। দু’শো বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পরেও মহিষাদল রাজবাড়ির রথযাত্রাকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাঁটা পড়েনি এতটুকু। বহু স্মৃতি বিজড়িত ২৩৬ বছরের পুরনো রথকে ঘিরে এখনও মেলা বসে। লক্ষাধিক জনতার ভিড় ঠেলে ধীরে-ধীরে এগিয়ে যায় রথ। কাঁঠাল, তেলেভাজার গন্ধ মিলেমিশে একাকার তখন।
কথিত আছে, পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের স্ত্রী রানি জানকী এই রথযাত্রার সূচনা করেন। ১৭ চূড়া বিশিষ্ট এই রথের উচ্চতা কমে অনেক আগেই ১৩ চূড়ার হয়েছে। আড়ম্বরও হয়তো কমেছে। কিন্তু ঐতিহ্যের সঙ্গে আপস করা হয়নি কখনও। এখানে রাজবাড়ির কুলদেবতা মদনমোহন জিউকে রথে তোলা হয়। নেই বলরাম, সুভদ্রা। রাজবাড়ির মন্দিরেই সকালে স্নানযাত্রা ও আচার মেনে রথে তোলা হয় কুলদেবতাকে। আজ, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টের সময় রথযাত্রার সূচনা করবেন রাজ পরিবারের অন্যতম সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ। তিনি বলেন, “আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রেখে এখনও এই উৎসব পালন হয়। এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা।” |
|
সেজে উঠেছে মহিষাদলের রথ। ছবি: আরিফ ইকবাল খান |
রথ সারা বছর থাকে শহিদস্তম্ভের কাছে। মাসির বাড়ি প্রায় এক কিলোমিটার দূর। প্রায় ৬০ ফুট উচ্চতার এই রথকে এতটা পথ টানতে রশি এসেছে রাজবাড়ি থেকেই। এ বারের রথের সারথি প্রাক্তন রাজ পুরোহিতের নাতি সনৎ চক্রবর্তী বলেন, “দাদুর সময় থেকেই আমরা এই রাজবাড়ি ও রথযাত্রার সঙ্গে যুক্ত। আগে আমার কাকা সারথি হতেন। এই বছরই আমি প্রথম দায়িত্ব পেয়েছি। খুব ভাল লাগছে।”
রথের প্রস্তুতি অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। নতুন রঙ লেগেছে রথে। বছরভর রথের দেখভাল রাজ পরিবার করলেও রথযাত্রাকে ঘিরে মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের খরচ এবং পরিচালনার দায়িত্ব বহন করে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। এ বার বাজেট প্রায় ৫ লাখ টাকা। পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, “অতি প্রাচীন এই রথই মহিষাদলের বড় উৎসব। পুরনো দিনের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে করণীয় সমস্ত কিছুই করে পঞ্চায়েত সমিতি।” রথের দিন সকাল থেকে মহিষাদলের অধিকাংশ রাস্তা জুড়ে মেলা বসে যায়। কাঁঠাল, বেতের সামগ্রী, মনোহারি জিনিসপত্রের পশরা নিয়ে বসে যান দোকানদারেরা। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০০টি স্টল বসছে এ বার। ২৯ জুন পর্যন্ত মেলা চলবে। স্থানীয় বাসিন্দা বটকৃষ্ণ দাসের কথায়, “ছোট থেকেই এই রথ দেখে আসছি। একটা আত্মার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। বছরভর এই দিনটার অপেক্ষায় থাকি আমরা।” |
|
|
|
|
|