|
|
|
|
উদ্যোগী হয়েছে সেচ দফতর, তবু খাল সংস্কারে পুরসভা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দ্বারিবাঁধ খাল সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে সেচ-দফতর। তা সত্ত্বেও তড়িঘড়ি খাল-সংস্কারের কাজ শুরু করে দিল মেদিনীপুর পুরসভা। প্রাথমিক ভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ লক্ষ টাকা। প্রয়োজনীয় অর্থ আসবে এমপ্লয়েমেন্ট জেনারেশন স্কিম থেকে। কাজ হবে দু’ভাগে। একটি এজেন্সি কাঁসাই নদী থেকে নান্নুরচক পর্যন্ত খাল সংস্কারের কাজ করবে। আরেকটি এজেন্সি নান্নুরচক থেকে রেললাইন পর্যন্ত কাজ করবে। চলতি মাসের মধ্যেই খাল সংস্কারের কাজ শেষ হবে যাবে বলে জানিয়েছেন মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু। তিনি বলেন, “ভারী বর্ষার আগে খাল সংস্কার না- হলে সমস্যা হবে। অনেক জায়গায় জল জমে যেতে পারে। তাই সব দিক খতিয়ে দেখেই খাল সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে।” এ ক্ষেত্রে সেচ-দফতরও তো উদ্যোগী হয়েছে? তা হলে? পুরপ্রধানের বক্তব্য, “সেচ দফতর খাল-সংস্কারের পরিকল্পনা করেছে ঠিকই। কিন্তু সেটা সময়-সাপেক্ষ ব্যাপার। এখন যেখানে যেখানে আবর্জনা পড়ে মজে গিয়েছে, সেই জায়গাগুলি পরিষ্কার করা হচ্ছে। এর ফলে জল আর দাঁড়িয়ে থাকবে না। সেচ-দফতর যদি কালভার্ট সংস্কার করে, গার্ডওয়াল সংস্কার করে, তা হলে ভালই। সমস্যার কিছু নেই।” |
|
চলছে দ্বারিবাঁধ খাল সংস্কারের কাজ। —নিজস্ব চিত্র। |
দ্বারিবাঁধ মেদিনীপুর শহরের প্রধান নিকাশি খাল। এই খালটি শহরের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু, দীর্ঘদিন সংস্কার না-হওয়ায় খালটি মজে গিয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পালবাড়ি, মহাতাবপুর, সুজাগঞ্জ, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিমতলাচক, হরিজন-বস্তি, স্কুলবাজার, তাম্বুলিপাড়া, মুচিপাড়া, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিজন-বস্তি, নন্দীপুকুর, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বক্সীবাজারের মতো বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। খাল উপচে বসতি এলাকায় জল ঢুকে পড়ে। বছর পাঁচেক আগে এক বার খালটির সংস্কার হয়েছিল। কিন্তু, তার পর বিভিন্ন জায়গায় ফের আবর্জনা জমেছে। ফলে জল পারাপারের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। খালটি খয়রুল্লাচকের ফুলপাহাড়ি মৌজা থেকে শুরু হয়ে কাঁসাই নদীতে পড়েছে। প্রায় ৬ কিলোমিটার বিস্তৃত খালটি বিভিন্ন সময়ে অবৈজ্ঞানিক ভাবে সংস্কার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। সংস্কারের পর খাল থেকে তোলা কাদা-মাটি ও আবর্জনা রাখা হয়েছিল খালের পাড়েই। ফলে বর্ষায় ফের সেই সমস্ত মাটি-কাদা ও আবর্জনা খালেই পড়ে। কেবল অর্থ ব্যয় হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে সেচ-দফতর যখন খাল সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে, তখন পুরসভা তড়িঘড়ি ৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে খাল-সংস্কারের কাজ শুরু করল কেন? স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে ‘চাপে’ রাখতে চাইছে তৃণমূল। কয়েক দিন আগে দ্বারিবাঁধ খাল-সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল কংগ্রেস। সেচ-দফতরের পাশাপাশি সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার কাছেও শহরের এই প্রধান নিকাশি খাল সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছিল। দাবি খতিয়ে দেখে খাল সংস্কারে উদ্যোগীও হন সেচমন্ত্রী। কংগ্রেসের দাবি, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য মন্ত্রী তাঁর দফতরকে নির্দেশও দেন। দ্রুত সমীক্ষার কাজ শেষ করে প্রকল্প-রিপোর্ট পাঠাতে বলেন। এ জন্য একটি কমিটিও তৈরি করে সেচ-দফতর। যে কমিটিতে পুরপ্রধানও রয়েছেন। বিষয়টি জানার পরেই নড়েচড়ে বসে পুরসভা। মেদিনীপুর পুরসভা জোটের দখলে রয়েছে। পুরপ্রধান পদে রয়েছেন তৃণমূলের প্রণব বসু। উপ- পুরপ্রধান পদে রয়েছেন কংগ্রেসের এরশাদ আলি। আগামী বছরই পুরসভা নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে সেচ-দফতরের উদ্যোগে খাল-সংস্কারের কাজ হলে তার ‘সাফল্যে’ ভাগ বসাতে পারে কংগ্রেস, তৃণমূলের একাংশ কাউন্সিলর এমনটা মনে করেই দ্রুত খাল-সংস্কারের ব্যাপারে তদারকি শুরু করেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। খোদ পুরপ্রধানও বলেন, “অনেকের ধারণা হয়েছে, এখন সেচ-দফতরের উদ্যোগে খাল সংস্কার হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। কাজ করছে পুরসভাই।” |
|
|
|
|
|