রাস্তা তৈরির কাজে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে কাজিয়া শুরু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে আমতা ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে। এই পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএম শাসিত। রাস্তাও তৈরি করেছে তারাই।
বালিচক গ্রাম পঞ্চায়েতে এই রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২ কিলোমিটার। ভাঙাচোরা রাস্তাটি মোরাম বিছানোর কথা হয়। এর জন্য টাকা দেওয়ার কথা জেলা পরিষদের। বছরখানেক আগেই রাস্তাটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। গত মার্চ মাসে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়ন্ত পোল্যে ব্লক প্রশাসনের কাছে রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে ব্লক প্রশাসন। অভিযোগ, কাজ অত্যন্ত নিম্ন মানের হয়েছে। এমনকী এই কাজের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। জয়ন্তবাবু বলেন, “একটি মাত্র ঠিকাদার সংস্থাকেই দফায় দফায় বরাত দেওয়া হয়েছে।”
গত মার্চ মাসে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আটকে দেওয়া হয় ঠিকাদার সংস্থার পাওনা। এ দিকে কাজটির জন্য জেলা পরিষদ ১০ লক্ষ টাকা পঞ্চায়েত সমিতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেই টাকা পড়ে রয়েছে সমিতির হাতেই। ব্লক প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানান, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না দেখে ঠিকাদার সংস্থাকে পাওনা মেটানো যাবে না বলে পঞ্চায়েত সমিতিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একদিকে যখন গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের একাংশ দুর্নীতির অভিযোগ করেছে। অন্যদিকে এই পঞ্চায়েত সমিতিতেই তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা বিমল পাল ঠিকাদার সংস্থাকে পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন বলে পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে। সমিতি সূত্রের খবর, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পঞ্চায়েত সমিতিতে অর্থ বিষয়ক স্থায়ী সমিতির যে বৈঠক হয় তাতেই ঠিকাদারকে পাওনা মেটানোর প্রসঙ্গটি ওঠে। তখন অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বিমলবাবুও বলেন, “যতটুকু কাজ হয়েছে তা মাপজোক করে ঠিকাদার সংস্থার পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হোক।” সমিতির সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “শুধু বিমলবাবুই নন, অর্থ স্থায়ী সমিতির সব সদস্যই ঠিকাদার সংস্থাকে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কারণ টাকা এসে শুধু শুধু পড়ে রয়েছে।”
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বিমলবাবু অবশ্য বলেন, “আমি জানি, রাস্তা তৈরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে তদন্তও হচ্ছে। আমি অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠকে জানিয়েছিলাম তদন্ত কমিটি তার রিপোর্টে যেভাবে বলবে সেইমতোই যেন ঠিকাদার সংস্থার পাওনা মেটানো হয়। এতে অন্যায় কী আছে?” অন্য দিকে মানবেন্দ্রনাথবাবু আবার বলেন, “ওইদিনের বৈঠকে কাজটিকে কেন্দ্র করে যে তদন্ত কমিটি হয়েছে তা নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। বিডিও নিজেও বৈঠকে হাজির ছিলেন। আমরা সকলেই যখন সরাসরি ঠিকাদারের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলি তিনিও কোনও মন্তব্য করেননি।” বিডিও মঞ্জুশ্রী মণ্ডল অবশ্য বলেন, “তদন্ত কমিটির রিপোর্ট খুব শীঘ্রই জমা পড়বে। তার আগে কোনও পাওনা মেটানো হবে না।”
অন্যদিকে, জয়ন্ত প্যোলের নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা যে ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন তার সমালোচনা করে বিমলবাবু বলেন, “কাজ হয়ে গিয়েছে প্রায় এক বছর আগে। রাস্তাটির অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত কাজ করানোর জন্য একটি ঠিকা সংস্থাকেই বিভিন্ন অংশের কাজ দফায় দফায় করার বরাত দেওয়া হয়। না-হলে টেন্ডার ডাকতে অনেক সময় লাগত। জয়ন্তবাবু নিজেও তো কাজটি হওয়ার সময়ে ছিলেন। এতদিন পরে অভিযোগ করছেন কেন বুঝতে পারছি না।” জয়ন্তবাবু বলেন, “কে কী বলছেন তা নিয়ে মন্তব্য করব না। আমরা জানতে পেরেছি যত টাকার কাজ হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি টাকা ঠিকাদারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা আমরা মানব না।”
মানবেন্দ্রনাথবাবুর দাবি, কাজটিতে কোনও বেনিয়ম হয়নি। তিনি আরও বলেন, “বিমলবাবু-সহ তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের তদারকিতেই কাজটি হয়েছে। এখন তাঁদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ বাধায় সব টাকা আটকে গিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।” |