রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইন করে মোটরবাইক-সহ ব্যক্তিগত গাড়ির কর বাড়াতে চলেছে রাজ্য সরকার। যাত্রী পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত, এমন গাড়ির করের হারে অবশ্য কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। বুধবার মহাকরণে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ হয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে। চলতি অধিবেশনেই এটি বিল আকারে পেশ হওয়ার কথা। প্রস্তাবিত ওই বিলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোটর ভেহিকল ট্যাক্স অ্যাক্ট অ্যামেন্ডমেন্ট ২০১২’। তবে নতুন করের হার কত হবে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা চূড়ান্ত হয়নি। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “বিল আকারে প্রস্তাবটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে করের হারও ঠিক করে ফেলা হবে।”
সাধারণ মানুষের উপরে বোঝা চাপবে, এই নীতি মেনে এত দিন পর্যন্ত যাত্রীভাড়া বাড়ায়নি পরিবহণ দফতর। কিন্তু সরকারের আর্থিক বেহাল দশা ঘোচাতে আয় বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। সেই কারণে, যাত্রিবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে কর না বাড়ালেও ব্যক্তিগত গাড়ির করের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে সরকার কার্যত বাধ্য হল।
বর্তমানে গাড়ির ইঞ্জিনের অশ্বশক্তির ক্ষমতার উপরে কর নির্ধারণ করে পরিবহণ দফতর। নতুন আইনে কর বসবে গাড়ির শো-রুম দামের উপরে। এখন কর দিতে হয় প্রথমে দু’বার পাঁচ বছর অন্তর, তার পরে প্রতি বছর। পাশাপাশি ১৫ বছরে এককালীন কর দেওয়ারও সংস্থান রয়েছে সরকারি বিধিতে। নতুন আইনে গাড়ি কেনার সময়ে জীবনে এক বারই কর দিতে হবে। তবে গাড়ির মালিকদের সুবিধে দিতে ওই কর পাঁচ বছর অন্তর কিস্তিতে দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকছে। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, নতুন আইন কার্যকর হওয়ার হবে এখন যাঁদের গাড়ি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও। ওই কর্তার কথায়, “এখনকার গাড়ির মালিকরা কর দিতে গেলে তাঁদের নতুন নিয়মের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সে ক্ষেত্রে তিনি নতুন নিয়মের দেয় কর এককালীন দিতে পারেন। অথবা, পাঁচ বছর অন্তর কিস্তিতেও দিতে পারবেন।”
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “এখন রোড ট্যাক্স, স্পেশ্যাল ট্যাক্স, ডিলার ট্যাক্স এবং অডিও-ভিডিও ট্যাক্স সমেত বিভিন্ন কর দিতে হয় মালিককে। নতুন আইনে ওই সব কর আর না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সরকার। এমনকী, গাড়ি কেনার সময়ে এককালীন কর দেওয়া থাকলে মালিকানা বদল হলেও আর নতুন করে কর দিতে হবে না।” ওই কর্তা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত মোটরবাইক এবং যে কোনও গাড়ির ক্ষেত্রে নতুন এই আইন কার্যকর হচ্ছে। নতুন আইনে কর নেওয়ার তালিকায় থাকছে ট্যুরিস্ট ট্যাক্সি, ওমনি বাস, লাক্সারি ট্যাক্সি এবং ১৪ আসন বিশিষ্ট চুক্তি পরিবহণে যুক্ত যাত্রিবাহী গাড়িও। অন্য সব যাত্রিবাহী কোনও গাড়িই অবশ্য ওই তালিকায় থাকছে না। পরিবহণ দফতরের ওই কর্তা জানিয়েছেন, লাক্সারি ট্যাক্সি-সহ ওই সব যাত্রীবাহী গাড়ির মালিকেরা ব্যক্তিগত ব্যবহারের নাম করে গাড়ি কিনে তা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করে। সে কারণেই ওই সব গাড়িকে নতুন করের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
সাধারণ ভাবে পেট্রোলের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে গাড়িশিল্পে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যেই কয়েকটি নামী গাড়ি প্রতিষ্ঠান তাদের গাড়ি উৎপাদনও কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের নতুন করের প্রস্তাবে গাড়িশিল্পে মন্দা আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা। ছোটগাড়ির করের হার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই মাস্টি-অ্যাক্সেল গুড্স ক্যারেজ বা ট্রেলার (বড় ট্রাক)-এর কর কমানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে এ দিনের মন্ত্রিসভায়। পরিবহণ দফতরের ব্যাখ্যা, এ রাজ্যে ট্রেলারের করের হার অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় অনেক বেশি ছিল। সে কারণে এ রাজ্যের মালিকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্য রাজ্য থেকে ট্রেলার কিনে এনে এ রাজ্যে মাল পরিবহণের কাজে লাগাত। এ রাজ্যে বিক্রি বাড়ানোর জন্যই নতুন আইনে ট্রেলারের করে হারে সামঞ্জস্য আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। |