নতুন প্রজন্মের মুখোমুখি শান্তির দুই দূত
দু’জনেই পেয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার। দু’জনেরই নিবিড় টান ভারতের সঙ্গে। দু’জনকেই সম্প্রতি দেখা গেল লন্ডনের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে। দলাই লামা এবং আউং সান সু চি।
এক জন ভারতে গত ৫৩ বছর ধরে নির্বাসিত। আর এক জন কিছু দিন আগে পর্যন্তও নিজ দেশে গৃহবন্দি ছিলেন। এক জন রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়েছেন ধর্মকে। আর এক জনকে বলা হচ্ছে নতুন নেলসন ম্যান্ডেলা।
আজ লন্ডনে এক ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি হন শান্তির এই দুই দূত। পরে তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইটে দলাই লামা লিখেছেন, “আমি সু চিকে অভিনন্দন জানিয়েছি। বলেছি, তিনি মানবজাতির উন্নতিসাধনে অসাধারণ ভূমিকা পালন করছেন। আশা করি, ভবিষ্যতে আবার তাঁর সঙ্গে দেখা হবে।”
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে এক প্রার্থনা সভায় দলাই লামা।
আজ দু’টি পৃথক অনুষ্ঠানে লন্ডনে উপস্থিত ছিলেন দু’জনই। লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকস্-এ হাজার খানেক ছাত্রছাত্রীর উৎসাহী ভিড় অপেক্ষা করছিল শুধু সু চি-র কথা শোনার জন্য। প্রথম তিরিশ মিনিট ধার্য ছিল পাঁচ জন অধ্যাপকের জন্য। অধ্যাপকদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরে ঠিক ১০ মিনিট বললেন মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী। আর ওইটুকুতেই মন জয় করলেন।
চব্বিশ বছর আগে ছেড়ে গিয়েছিলেন। আপাতত তিন দিনের জন্য ফের পা রেখেছেন ব্রিটেনে। তাঁর স্মৃতির ভাঁড়ারে অনেকটা জায়গা জুড়েই এই দেশ। স্বামী মাইকেল অ্যারিসের সঙ্গে অক্সফোর্ডে পড়াশোনা, দুই ছেলে আলেকজান্ডার আর কিমের জন্ম। স্বামীর মৃত্যুর সময়েও দেখতে আসতে পারেননি। ১৯৮৮-তে মরণাপন্ন মাকে দেখতে মায়ানমারে সেই যে গিয়েছিলেন, আর ফেরা হয়নি। ভয় ছিল ব্রিটেনে ফিরলে আর যদি দেশে ঢুকতে না দেয় সামরিক সরকার। তাই ব্রিটেনের এই সফর তাঁর কাছে অন্য রকম।
গত কাল ছিল ৬৭ তম জন্মদিন। ১৯৪৭-এর লন্ডনে তোলা তাঁর বাবার একটি বাঁধানো ছবি উপহার পেলেন ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সংগ্রহ থেকে।
আজ প্রথমে বললেন নিজের দেশের কথা। “যত দিন না ন্যায় ফিরছে, তত দিন আমরা প্রকৃত সংস্কারের কথা ভাবতে পারব না। আইনের শাসনের মাধ্যমে আমরা হয়তো গণতন্ত্রের পথে এগোতে পারব।” কিন্তু কোথায় পেলেন লড়াইয়ের এত শক্তি? প্রথমে ধন্যবাদ জানালেন গণতন্ত্রকামী সেই মানুষদের, যাঁরা তাঁর পাশে থেকেছেন। মুক্তির পর থেকে তাইল্যান্ড, সুইৎজারল্যান্ড, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই তাঁকে আপন করে নিয়েছেন সবাই। সেটাই শক্তি সু চি-র কাছে। চওড়া হেসে তার পর বলেন, “মনে হয় আমার ভিতরে একটা জেদি ভাব রয়েছে।”
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডিগ্রি পাওয়ার পর সু চি।
গৃহবন্দি থাকাকালীন প্রায় ১৫ বছর বিবিসি-র ডেভ লি ট্রাভেসের বিশেষ গানের অনুষ্ঠান ছিল তাঁর বেঁচে থাকার অন্যতম রসদ। তাই সেই উপস্থাপকের সঙ্গে দেখা করতেও ভোলেননি সু চি। ট্রাভেসকে বলেছেন, ওই অনুষ্ঠান তাঁকে আরও পূর্ণ করে তুলেছে। রাজনীতি, দর্শন আর অথর্নীতির পাঠ নিয়েছেন যেখানে, সেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পেয়েছিলেন ১৯৬৭ সালে। আর আজ পেলেন এখানকার সাম্মানিক ডিগ্রি। কাল দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে।
সু চি-র শ্রোতাদের চেয়ে অল্প দূরে ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট্ট হল-এ দু’শো পড়ুয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন দলাই লামা। ১০ দিনের সফরে এসেছেন ব্রিটেনে। বললেন, “ভারতের কাছে শেখা উচিত চিনের। ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতির বৈচিত্র ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে।” তাঁর মতে, চিনের সঙ্গে থাকলে তিব্বত অর্থনৈতিক দিক থেকে উপকৃত হবে ঠিকই, কিন্তু যে দেশের সরকার গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, ন্যায়ের অর্থ বোঝে না, সেই সরকারের সমালোচনা না করে উপায় নেই। তাই তাঁর সাফ কথা, “চিন গোটা বিশ্বে সম্মানজনক এবং বিশ্বাসযোগ্য জায়গা অর্জন করতে পারলে তবেই ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারবে।” ব্রিটেনের তিব্বতিদের সঙ্গেও দেখা করার পরিকল্পনা আছে তাঁর।

ছবি: এপি, রয়টার্স



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.