গিলানি সরলেই সমস্যা মিটবে না পাকিস্তানের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইউসুফ রাজা গিলানির অপসারণের পরে নতুন প্রধানমন্ত্রী এলেই যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মিটে যাবে, এমন মনে করছে না ভারত। বরং গিলানিকে কেন্দ্র করে পাক বিচারবিভাগ ও প্রশাসন যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে, তার পিছনে পাক সেনাবাহিনীর ভূমিকাই প্রধান বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কূটনৈতিক ভাবে ভারতের দিক থেকে উদ্বেগের কারণ দেখছে না সাউথ ব্লক।
সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের বিদেশমন্ত্রীরা একাধিক বার বিভিন্ন মঞ্চে জানিয়েছেন, কোনও দেশে যে প্রতিষ্ঠানই ক্ষমতায় থাকবে, তার সঙ্গেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত ভারত। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব আরও বেশি প্রযোজ্য বলে মনে করা হয়। বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “আমরা অবশ্যই গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে বেশি স্বছন্দ বোধ করি। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। কোনও দেশের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যদি সামরিক শক্তি প্রধান ভূমিকা নেয় এবং তারাই যদি প্রশাসনের শীর্ষে থাকে তা হলে আমরা তাদের সঙ্গেই কথা বলব।”
অতীতের উদাহরণ টেনে সাউথ ব্লকের কর্তারা বলছেন, পাকিস্তান যখন সামরিক শাসনের আওতায় ছিল, তখনও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সমঝোতায় কোনও আঁচ পড়েনি। তা ছাড়া পাক প্রশাসনের মাথায় যাঁরাই থাকুন না কেন, আমেরিকা-আফগানিস্তান এবং ভারতের সঙ্গে বিদেশনীতি কী হবে, সেটা পাক সেনাবাহিনীই বকলমে ঠিক করে থাকে। সুতরাং ভবিষ্যতে যদি পাকিস্তান ফের সেনা-শাসনে চলেও যায়, সে ক্ষেত্রেও ভারতের বাড়তি অসুবিধা নেই। বরং পাক সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষমতা নিজের হাতে নিলে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা চালানো যাবে। শান্তিরক্ষার দায়িত্বও পাক সেনা কর্তাদেরই নিতে হবে। তাতে আখেরে ভারতের সুবিধাই হতে পারে বলে কেন্দ্র মনে করছে।
এ কথা ঠিক যে, ২৬/১১-র পর থেকে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা যেখানে রুদ্ধ হয়েছিল, দু’বছর আগে থিম্পুতে সেই আলোচনার পথ আবার খুলেছিল। খুলেছিল গিলানির সঙ্গে মনমোহনের বৈঠকেই। গিলানির সঙ্গে মনমোহনের একটি ব্যক্তিগত সমীকরণও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গিলানির পরিবর্তে যিনিই ক্ষমতায় আসুন, তার সঙ্গে বকেয়া কথা চালিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য সাউথ ব্লকের। আগামী ২৯ জুন নয়াদিল্লিতে দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বসতে চলেছে। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকটি যাতে পূর্ব-নির্ধারিত আলোচ্যসূচি অনুযায়ীই হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট ভারত। ইসলামাবাদের তরফ থেকেও বার্তা এসেছে যে, সে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে ভারতের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় কোনও বাধা পড়বে না।
গিলানির অপসারণের পিছনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর যে পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে, সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ বিদেশ মন্ত্রক। সেই সঙ্গে তাঁরা এটাও মনে রাখছেন যে, গিলানির জায়গায় নতুন কেউ এলেও যে পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে, এমন সম্ভাবনা কম। কারণ, গিলানির জায়গায় যিনিই আসবেন, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির বিরুদ্ধে পুরনো মামলা খোলার জন্য বিচারবিভাগ তাঁকেও ফের চাপ দেবে। কিন্তু পাক সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে রক্ষাকবচ পেয়ে থাকেন। ফলে নতুন প্রধানমন্ত্রীও গিলানির মতো একই রকম সঙ্কটে পড়বেন। তবে কি এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই শেষ পর্যন্ত সামরিক শাসনে উপনীত হতে চলেছে পাকিস্তান? বিদেশ মন্ত্রক আপাতত সে দিকে সতর্ক নজর রেখেছে।
যত দিন না পাকিস্তানে প্রশাসনিক সুস্থিতি ফেরে, সেই সময়টাও ভারতের পক্ষে কিছুটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে। কেননা সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পাকিস্তানে ভারত-বিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে ধারাবাহিক ভাবে সহায়তা এবং আশ্রয় দিয়ে যাওয়ার গতি কিছুটা হলেও শ্লথ হবে। ঘর সামলাতে ব্যস্ত ইসলামাবাদ তখন ভারতের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধের প্রশ্নে আপাতত কিছুটা নরম হবে বলেই মনে করছে কেন্দ্র। |