দায়িত্ব ভাগ করে নেবেন প্রণব, আশায় পিএমও |
শঙ্খদীপ দাস • লস কাবোস (মেক্সিকো) |
মেক্সিকোর দক্ষিণতম বিন্দু ছেড়ে এ বার অতলান্তিকের উপকূলে। বাজা ক্যালিফোর্নিয়ার লস কাবোস থেকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এ বার ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো-র উদ্দেশে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের আহ্বানে প্রথম আর্থ শীর্ষ সম্মেলনের কুড়ি বছর পরে আজই রিও ডি জেনেইরো শহরে শুরু হল দু’দিনের রিও ২০ সম্মেলন। পরিবেশ রক্ষা করে শিল্প ও পরিকাঠামো উন্নয়ন তথা সবুজ অর্থনীতি নিয়ে সেখানে নীতি নির্ধারণ করবেন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের রাষ্ট্রনেতারা। ভারতের লক্ষ্য হবে, উন্নয়নের গতি যাতে রুদ্ধ না হয় সে দিকে লক্ষ রেখে পরিবেশ নীতির রূপায়ণ। জি ২০ থেকে রিও ২০, দায়িত্বে মনমোহনই।
জি ২০-তে ছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও। তিনি কিন্তু রিও-তে যাচ্ছেন না। লস কাবোস ছেড়ে তাঁর বিমান আজ সোজা পাড়ি দিয়েছে বেজিংয়ের পথে। রিও সম্মেলনে যোগ দিতে চিন থেকে উড়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও। মঙ্গলবারই তিনি বেজিং থেকে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন।
কে কোথায় যাবেন, কূটনীতির কোন দায়িত্বটা কে সামলাবেন এ ভাবেই সেটা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন চিনের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী।
নয়াদিল্লি এমনটা করতে পারে না কেন? দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রসারে ভারতীয় রাষ্ট্রপতিও বিদেশ সফরে যান। কিন্তু শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়া বা বড় কোনও কূটনৈতিক দৌত্যের ভূমিকায় সাম্প্রতিক অতীতে কোনও ভারতীয় রাষ্ট্রপতিকে বিশেষ দেখা যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ বার হয়তো বেজিংয়ের পথেই হাঁটতে পারে দিল্লি। প্রণব মুখোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নিলে কূটনৈতিক দৌত্যের দায়িত্ব তাঁর সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে প্রণবের নাম উঠে আসার পর থেকেই কংগ্রেসের বহু নেতা ঘরোয়া আলোচনায় এ কথাটা বলতে শুরু করেছিলেন। দিগ্বিজয় সিংহ, বি কে হরিপ্রসাদের মতো নেতাদের মতে, প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হলে বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষায় তাঁর ভূমিকা কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তারাও একমত। মনমোহনের সচিবালয়ের প্রথম সারির এক কর্তা বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বা বিদেশসচিব বা মন্ত্রকের অন্য সচিবরা সাধারণত দ্বিপাক্ষিক সফরে রাষ্ট্রপতিকে সাহায্য করেন। তাঁর সঙ্গে সফরও করেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের ক্ষেত্রে সমস্যা হল, তিনি কখনও কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন না। কূটনীতির সব জটিলতা তাঁর পক্ষে ঝটিতি বুঝে ফেলা সহজ ছিল না। কিন্তু প্রণববাবুর সব হোমওয়ার্কই করা রয়েছে।
ইউপিএ জমানার গত আট বছরে প্রতিরক্ষা, বিদেশ এবং অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন প্রণববাবু। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি, পরমাণু দায়বদ্ধতা বিল, পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে দৌত্য থেকে শুরু করে ফ্রান্স, আমেরিকা, রাশিয়া, জার্মানির মতো দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের খুঁটিনাটি কার্যত গুলে খেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী হিসাবে গত সাড়ে তিন বছরে জি ২০ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলির সঙ্গে ধারাবাহিক দৌত্যও চালিয়েছেন। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিরও অন্যতম সদস্য তিনি। ফলে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক ও সর্বশেষ অবস্থানের ব্যাপারে তিনি অবগত। আবার প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ বা ভুটানের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গেও তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল। এমনকী প্রণববাবু এক বার প্যারিসে রয়েছেন খবর পেয়ে প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সটান তাঁর হোটেলে এসে দেখা করে গিয়েছিলেন। বিদেশ মন্ত্রকে এখন যে শীর্ষ কর্তারা রয়েছেন, প্রণববাবু বিদেশমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁরা তাঁর সঙ্গেই কাজ করেছেন। বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন সে সময় ছিলেন বিদেশসচিব।
সনিয়া গাঁধী তাঁর নাম রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করার পরেই দিগ্বিজয়-হরিপ্রসাদদের কথার প্রসঙ্গে প্রণববাবুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, “আগে নির্বাচন তো হোক!” তাঁর সঙ্গে অতীতে কাজ করেছেন এমন এক কূটনীতিক আজ বললেন, “এমনি এমনি বিদেশ সফরে যাওয়ায় অনীহা রয়েছে প্রণববাবুর। কিন্তু কূটনৈতিক দৌত্যের বড় দায়িত্ব আর কাজের গন্ধ পেলে তিনি আশা করি ‘না’ বলবেন না।” |