তাঁর মামারবাড়ি এই গ্রামে। তিনি জন্মেওছিলেন এখানেই। তাই কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে তাঁর জন্মভিটে সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন কালনা ২ ব্লকের পাতিলপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রবীন্দ্র-নজরুল যুগের কবি যতীন্দ্রনাথের মামারবাড়ি ছিল এই পাতিলপাড়া গ্রামে। ১৮৮৭ সালের ২৬ জুন এখানেই জন্ম হয় তাঁর। তবে তাঁর পৈতৃক বাসস্থান নদিয়ার শান্তিপুরের কাছে হরিপুর গ্রামে। মরীচিকা, মরুশিখা, ত্রিজামা ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ রচনা ছাড়াও শেক্সপিয়ারের অনেক লেখা বাংলায় অনুবাদও করেছেন যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। গ্রামবাসীরা জানান, প্রায়ই মামারবাড়ি আসতেন তিনি। আশপাশের নানা জায়গার প্রভাবও রয়েছেন তাঁর লেখায়। বাসিন্দাদের দাবি, যতীন্দ্রনাথের ‘হাট’ কবিতাটি কাছাকাছি শিঙেরকোন এলাকার একটি হাটকে দেখেই লেখা। গ্রামবাসীর মুখে মুখে ফেরে এই কবিতাটি। |
বরাবরই এই কবিকে নিয়ে বাসিন্দাদের আবেগ রয়েছে। এ বছর তাঁর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালনের জন্য রীতিমতো তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে কমিটি। ১ জুলাই কবির জন্মভিটে ও কালনা ২ ব্লকের একটি সভাগৃহে অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের তরফে কবির নামাঙ্কিত একটি স্মৃতি ফলক ও আবক্ষ মূর্তি স্থাপনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কবির জন্মদিনে যে সমস্ত বিশিষ্ট মানুষজন আসবেন, তাঁদের কাছে কবির স্মৃতিতে তাঁর জন্মভিটে সংরক্ষণ করে একটি সংগ্রহশালা তৈরির আবেদন জানানো হবে। জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির পক্ষে মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মহকুমার বেশির ভাগ মানুষই এ গ্রামের সঙ্গে কবির সম্পর্কের কথা জানেন না। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই স্মৃতি ধরে রাখাও মুশকিল। আশা করছি, দেরিতে হলেও প্রচার পাবেন এই দরদি কবি।” কমিটির সভাপতি তথা হুগলি জেলার প্রাক্তন জেলা স্কুল পরিদশর্ক দিলীপকুমার সেন বলেন, “যতীন্দ্রনাথকে নিয়ে যতটা চর্চা হওয়া উচিত, তা হয় না। আমরা জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করে সাধ্য মতো চেষ্টা করছি।”
তবে গ্রামবাসীরা যে জায়গাটি কবির মামারবাড়ি বলে দাবি করছেন, বর্তমানে সেখানে কোনও নির্মাণ অবশিষ্ট নেই। পুরো জায়গাটি ঘাসে ঢাকা মাঠ। কয়েক জায়গায় ভাঙা ইট পড়ে রয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় ৬৯ বছর আগে এখানে একটি ভাঙাচোরা বাড়ি ছিল। তার গায়ে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের নামে একটি ফলকও ছিল। বিশ্বনাথ মজুমদার নামে এক ব্যক্তি সেখানে থাকতেন। তিনি চলে যাওয়ার পরেই বাড়িটি নষ্ট হয়ে যায়।
কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “ওই গ্রামে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের স্মৃতি জড়িয়ে থাকার কথা জানতাম না। এ ব্যাপারে খোঁজ নেব। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হবে।” |