রথযাত্রায় বহমান শিল্পাঞ্চলের ঐতিহ্য
ক দিকে জমিদার বাড়ির শতাব্দী-প্রাচীন পুজো। অন্য দিকে, প্রবাসী উৎকল সমাজের রথযাত্রা উৎসব। ঐতিহ্য ও ভিনদেশি সংস্কৃতির মিশেল শিল্পাঞ্চলের রথযাত্রা উৎসবে। পুজোর প্রাচীন রীতি, আচার অনুষ্ঠানে শিল্পাঞ্চলের জমিদার পরিবারগুলির সাবেক বনেদিয়ানার ছাপ। তবে দিন পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে সাবেকিয়ানার সেই রঙ খানিক ফিকে হয়েছে বৈ কি!
অন্ডালের উখড়া, রানিগঞ্জের সিহারশোল এবং কুলটির বেলরুই। এই তিন জায়গার জমিদার পরিবারের উদ্যোগে শুরু হওয়া রথযাত্রা উৎসবের বয়স প্রায় একশো বছরেরও পুরনো। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা নন, রথে অধিষ্ঠান করেন তিন পরিবারের কুলদেবতা।
উখড়ার প্রাচীন জমিদার পরিবার হান্ডাবাড়ির রথ শুরু হয়েছিল ১২৫৭ বঙ্গাব্দে। পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁদের কুলদেবতা গোপীনাথজী। তাঁর মন্দির স্থানীয়দের কাছে ঠাকুরবাড়ি নামেই পরিচিত। প্রথমে ছিল কাঠের রথ। পরবর্তীকালে তা পিতলের করা হয়। শুধু তাই নয়, রথ টানে ট্রাক্টর। পরিবারের প্রবীণ সদস্য প্রিয়শঙ্করলাল সিংহ হান্ডা জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষ শম্ভুনাথ সিংহ হান্ডাই প্রথম রথযাত্রা শুরু করেছিলেন। ধুমধাম করে ৭দিন ধরে চলত মেলা। তাঁর কথায়, “এখন শুধুই রথ ও উল্টোরথের দিন মেলা বসে।”
রানিগঞ্জের রাজবাড়িতে সাজছে রথ। বুধবার ছবিটি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।
পরিবারের সদস্য তথা উখড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান শোভন পাল সিংহ জানান, আগে ঠাকুরবাড়ি থেকে গোপীনাথজিকে কাঁধে করে আনা হত চাঁদনি বাড়িতে (যে বাড়িতে জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো হত)। সেখান থেকে রথে করে নিয়ে যাওয়া হত সার্কাস ময়দানের গোষ্ঠবেড়া মন্দিরে। কিন্তু ‘৪০য়ের দশকে ময়দানে সেনা ছাউনি হওয়ায় সেখানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তিনি জানান, ১৯৪২ সাল থেকে গোপীনাথজিকে ঠাকুরবাড়ি থেকে বাজপেয়ী মোড় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পর চাঁদনি বাড়িতে ৭ দিন রাখা হত। শোভনবাবু বলেন, “লোকবল নেই বলে এখন আর গোপীনাথজীকে চাঁদনি বাড়িতে রাখা হয় না। ঠাকুরবাড়িতেই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।” তিনি আরও জানান, আগে দড়ি টানার জন্য প্রচুর ভক্তের ভিড় হত। দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছিল। তাই ৮ বছর ধরে ট্রাক্টর দিয়েই রথ টানা হয়।”
কুলটির বেলরুইয়ের জমিদার রায়দের অবশ্য কাঠের রথ। সেখানে কুলদেবতা লক্ষ্মী জনার্দনের অধিষ্ঠান। যাত্রার আগে পিতলের গম্বুজ, পিতলের ঘোড়া ও পিতলের সারথি স্থাপন করা হয় রথে। পরিবারের সদস্য তথা কুলটি পুরসভার ভাইসচেয়ারম্যান বাচ্চু রায় জানান, আগে রথের দু’দিন টেলিফোন বিভাগের কর্মীরা উপস্থিত থাকতেন। বিশাল ওই রথ যাওয়ার সময়ে খুঁটির টেলিফোনের তার কেটে ফের জুড়তেন তাঁরা। তিনি বলেন, “উৎসব উপলক্ষে আগে সীতারামপুর পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করত রেল। তবে এখন উৎসব অনেক ছোট হয়ে গিয়েছে। ঠাকুরবাড়ি থেকে বের হয়ে বাউড়িপাড়ার হরি ও কালী মন্দিরের সামনে ৭ দিন রথটিকে রাখা হয়। উল্টোরথের দিন ফের রথ ফিরে আসে ঠাকুরবাড়িতে। বাচ্চুবাবু জানান, উৎসবের দায়িত্ব এখন তাঁদের আত্মীয় শরদিন্দুদের পরিবারের।
জনশ্রুতি, হান্ডাপরিবারের রথযাত্রার ধুমধাম দেখেই না কি রানিগঞ্জের সিহারশোলের জমিদার গোবিন্দপ্রসাদ পণ্ডিত শুরু করেছিলেন রথযাত্রা উৎসব। এখানে রথে চড়েন কুলদেবতা দামোদর চন্দ্র। প্রথমে কাঠের ছিল রথটি। কোনও কারণে সেটি পুড়ে যাওয়ায় ১৯৩৩ সালে গোবিন্দপ্রসাদের মেয়ে হরসুন্দরী দেবী মাহেশের রথের অনুকরণে তৈরি করান পিতলের রথটি। রথের দিন নতুন জমিদার বাড়ি থেকে কুলদেবতাকে নিয়ে যাওয়া হয় পুরনো জমিদার বাড়িতে। ৯ দিনের দিন ফের নতুন বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে। মেলা বসে ৭ দিন ধরে। ১৯৯৫ সাল থেকে মেলার দায়িত্বে রয়েছে সিহারশোল স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন।
পাশাপাশি রয়েছে বার্নপুরের উৎকল সাংস্কৃতিক পরিষদের রথ। বার্নপুরের বিভিন্ন কারখানায় উড়িষ্যা থেকে কাজ করতে আসা ৪৬টি পরিবার ১৯৭৮ সালে শুরু করেছিল এই পুজো। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২০। সংস্থার সদস্য গৌতম নায়েক জানান, ১৮ ফুট দীর্ঘ লোহার রথটি শহর পরিক্রমার পর ফিরে আসে জগন্নাথ মন্দিরে। তবে সে দিন বড় মন্দিরে রাখা হয় না জগন্নাথ দেবকে। মন্দির সংলগ্ন মাটির ছোট মন্দিরেই রাখা হয় তাঁকে। তিনি বলেন, “এলাকার সব মানুষই আমাদের এই উৎসবে যোগ দেন।” ডিসেরগড়ের নদীঘাটের রথযাত্রা উৎসবও প্রায় ত্রিশ বছরের পুরনো। উদ্যোক্তারা জানান, ঝালাবাগান মিলন মঠে নিয়ে যাওয়া হয় জগন্নাথ দেবকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.