এক দিকে দেরিতে বর্ষা আসার জন্য খেতের জল শুকিয়ে যাওয়া আর অন্য দিকে, ফড়েদের দাপট বাড়ার অভিযোগ। দুইয়ে মিলে কলকাতায় সব্জির বাজার আগুন।
অন্যান্য বার এই সময়ে, অর্থাৎ বর্ষার শুরুতে সব্জি থাকে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। সেখানে এ বার বেশির ভাগ সব্জিই কার্যত সাধ্যের বাইরে। সব্জি-বিক্রেতা থেকে পাইকারি বাজারের আড়তদার সকলেই জানাচ্ছেন, বর্ষা দেরিতে আসায় খেত শুকিয়ে গিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা অবশেষে ঢুকলেও এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কমপক্ষে আরও ১৫ দিন লাগবে। তবে শুধু অনাবৃষ্টি নয়, কৃষি-বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় কার্যত স্বীকার করেছেন, দাম বাড়ার অন্যতম কারণ, ফড়েদের অত্যধিক দাপট। চাষিরা মধ্যস্বত্বভোগীদের যে দামে সব্জি বেচছেন, সেই সব্জি বাজারে বিক্রি হচ্ছে আট-দশ গুণ বেশি দামে। অরূপবাবু বলেন, “এক দিকে যেমন অনাবৃষ্টির জন্য দাম বেড়েছে, তেমনই দাম বেড়েছে ফড়েদের দাপটে।”
দক্ষিণের গড়িয়াহাট বাজারই হোক বা উত্তরের মানিকতলা সর্বত্রই এখন সব্জির আগুন দাম। বেগুন, উচ্ছের মতো সব্জি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কিলো দরে। পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়সের মতো গ্রীষ্মের সব্জির দামও ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কিলো। কোনও কোনও বাজারে লঙ্কার দাম কিলো প্রতি ১০০ টাকাও ছুঁয়েছে। কোলে মার্কেটের আড়তদারদের একাংশ জানাচ্ছেন, সাধারণত বর্ষার শুরুতে পটলের দাম হয় ১২ থেকে ১৫ টাকা প্রতি কিলো। বেগুন বা উচ্ছের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে থাকে। কিন্তু এ বার জুন মাসের মাঝামাঝি সময়েও প্রায় সমস্ত সব্জির দাম চড়া। এর অন্যতম কারণ দীর্ঘ অনাবৃষ্টি। বিশেষত দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলায় বর্ষা দেরিতে আসায় অধিকাংশ জেলার সব্জির খেতই জলশূন্য। পরিস্থিতি এমনই যে, খেতে শ্যালো পাম্পের সাহায্যে জল দেওয়ার অবস্থাও নেই।
কলকাতার বেশির ভাগ বাজারে ঝিঙে থেকে শুরু করে পটল, বেগুন, শসা আসে বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা, বনগাঁ এবং মুর্শিদাবাদ থেকে। চাষিরা জানাচ্ছেন, এই অঞ্চলগুলির খেত এখন কার্যত জলশূন্য। সেই কারণে সব্জির চাহিদা অনুযায়ী জোগান নেই। অবস্থা এমনই যে, ভিন্ রাজ্য থেকে চালানি লঙ্কা আসছে পাইকারি বাজারে।
তবে, অবশেষে বর্ষা ঢুকে পড়ায় সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে জল-সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। ফের সব্জি ফলবে স্বাভাবিক ভাবে। চাহিদা অনুযায়ী জোগানের অভাব হবে না। কিন্তু ফড়েদের দাপট কি কমবে? কৃষি-বিপণন মন্ত্রী জানান, দাম স্বাভাবিক হওয়ার জন্য ফড়েদের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। মন্ত্রীর দাবি, ফড়েদের নিয়ন্ত্রণের জন্য তাঁরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করছেন। তিনি বলেন, “ব্লকে ব্লকে কৃষি-বাজার তৈরির পরিকল্পনা আছে। এর ফলে চাষিরা সরাসরি পাইকারি বিক্রেতাকে ফসল বিক্রি করতে পারবেন। তার জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র ডাকা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, চাষি ও ক্রেতাদের মধ্যে দূরত্ব যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে।” ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, “এই সময়ে সব্জির দাম অনেকটাই বেশি। বাজারে বিক্রেতারা ওজনে কোনও রকম কারচুপি করছেন কি না, সে ব্যাপারে নজরদারি চালাতে আমরা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বাজারে হানা দিচ্ছি।” |