আজ সেই দিন। সুদ কমার আশায় বাজারে বাজি পোড়ানো শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকেই। ওই দিন এক লাফে সেনসেক্স ওঠে ২৭২ পয়েন্ট। ১৭ হাজার এখন হাতের মুঠোয়। আজ বাজার কতটা উঠবে অথবা গুটিয়ে যাবে, তা নির্ভর করবে তার আশার সঙ্গে তাল রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমায় কি না, এবং কমালে কতটা কমায় তার উপর।
২৫ বেসিস পয়েন্ট থেকে শুরু করে ১০০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ হ্রাসের আশা করা হচ্ছে শিল্প-বাণিজ্য মহল থেকে। শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি তলানিতে এসে ঠেকার পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি তেজ ধরে রাখায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর অবশ্যই চাপ থাকবে সুদ কমানোর। টাকার জোগান বাড়ানোর ব্যাপারেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজারে আজ বেশি সক্রিয় থাকবে ব্যাঙ্ক এবং ঋণ নির্ভর কোম্পানির শেয়ার। প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে গাড়ি এবং নির্মাণ শিল্প শেয়ারেও।
গত কয়েক দিনে বাজার উঠেছে কমবেশি ১০০০ পয়েন্ট। আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বেশ খানিকটা নেমে আসা, সুদ কমার আশা, বিশ্ব বাজারের চাঙ্গা থাকার মতো কয়েকটি জোরালো কারণ ঠেলে তোলে বাজারকে। সেনসেক্স আরও উঠতে পারে, যদি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত বাজারের পছন্দ হয়, নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে গ্রিস নতুন দিশা পায় এবং বর্ষা যদি ঘাটতি পুষিয়ে দেয়।
বিশ্ব বাজারে তেলের দাম অনেকটা নেমে আসায় ভারতেও পেট্রোপণ্যের দাম কমার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তেলের আমদানি-মূল্য ভাল রকম কমায় বড় আকারের ডলার সাশ্রয় হবে। ফলে চাপ কমবে ভারতীয় টাকার উপর। ছোট থেকে মাঝারি মেয়াদে বাজার কোন দিকে যাবে, তার অনেকটাই নির্ভর করবে গোটা দেশে বর্ষা কেমন হয় তার উপর। এখনও পর্যন্ত অনেক এলাকায় ‘প্রায়-খরা’ পরিস্থিতির কারণে ‘আস্কিং রেট’ কিন্তু অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে দিল্লির রাজনীতি যখন তুঙ্গে, তখন বাজারের নজর কিন্তু অন্য দিকে। প্রণববাবুর নতুন ঠিকানা যদি রাষ্ট্রপতি ভবন হয়, প্রশ্ন উঠেছে, তবে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব কে নেবেন। নতুন অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গী কী হবে। প্রণববাবুর অসমাপ্ত কাজের কী হবে। আর্থিক সংস্কার এগোবে না পিছোবে। প্রত্যক্ষ কর বিধি এবং পণ্য-পরিষেবা কর আইন কি বাস্তব রূপ নেবে। কালো টাকা উদ্ধারের জন্য নতুন মন্ত্রী কতটা সক্রিয় হবেন ইত্যাদি।
বিষয়গুলির প্রত্যেকটিরই প্রতিক্রিয়া থাকবে শেয়ার বাজারের উপর। যত দিন নতুন অর্থমন্ত্রী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত পাকা না হয়, তত দিন হয়তো প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং অর্থ মন্ত্রক সামলাবেন। যিনিই অর্থমন্ত্রী হোন, সময়টা কিন্তু আদৌ মন্ত্রিত্ব উপভোগের নয়। কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়তে হবে প্রথম বল থেকেই।
অর্থনীতির রথের চাকায় গতি ফিরিয়ে আনাই এখন সরকারের সামনে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। বাগে রাখতে হবে সুদ ও পণ্যমূল্যকে। শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করতে জোরকদমে নামতে হবে আর্থিক সংস্কারের পথে। রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিলগ্নিকরণের উদ্যোগ করতে হবে বাজার একটু চাঙ্গা হলেই। একই সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে বহু বিষয়ে। ব্যাপারটা আদৌ সহজ নয়।
ভারতীয় বাজারে অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে অর্থনীতির থেকে রাজনীতি বেশি প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ব মন্দার পরে বামেদের সমর্থন ছাড়াই দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার গঠিত হওয়ায় এক ধাক্কায় বাজার উঠেছিল অনেকটা। বাজার আবার ঊর্ধ্বগতি পায় প্রণববাবু অর্থ মন্ত্রকের হাল ধরায়। নতুন অর্থমন্ত্রীকে বাজার কী ভাবে নেয়, সেটিই এখন দেখার।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর তৃণমূলের চাপ কমার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় তৃণমূলের বিরোধিতায় সরকার যে-সব বিল পাশে ব্যর্থ হয়, তা সংসদের অনুমোদন করিয়ে নিতে পারে কি না, তার উপর দৃষ্টি থাকবে বাজারের। দৃশ্যত না-হলেও এই সব বিষয় নিয়ে চাপা উত্তেজনা থাকবে বাজারে এবং তা মাঝেমধ্যে প্রকাশও পাবে সূচকের ওঠা-পড়ার মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরোক্ষ প্রভাব বাজারের উপর বেশ জোরালোই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আবার ফেরা যাক সুদের কথায়। সুদ কমলে বাড়ি ও গাড়ি ঋণ কিছুটা সহজলভ্য হতে পারে। সুদ কমতে পারে শিল্প-ঋণের উপরেও। বাড়তে পারে বন্ডের দাম, যার ফলে বাড়বে ঋণ নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ্। সুদ কমতে পারে ব্যাঙ্ক আমানতের উপরেও। ব্যাঙ্ক জমার আকর্ষণ কমলে কিছুটা লগ্নি প্রবাহিত হতে পারে শেয়ার বাজার ও মিউচুয়াল ফান্ডে।
আগের তুলনায় আকর্ষণ বাড়তে পারে ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পের। টাকার জোগান বাড়লে তা শক্তি জোগাবে শেয়ার বাজারকে। শেয়ার সূচক উঠলে ন্যাভ্ বাড়বে ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পগুলির। সুদ কমতে পারে, এই আশায় এরই মধ্যে বাজার অনেকটা উঠেছে। বাস্তবে যদি সুদ না-কমে, তবে বাজার নতুন করে ধাক্কা খাবে। অর্থাৎ এই সপ্তাহে বাজার থাকবে সুদ ও সূক্ষ্ম রাজনীতির হাতে। |