বিলম্ব কেন, ব্যাখ্যা নেই রাজ্যের
জমি-বিল অনিশ্চিত চলতি অধিবেশনেও
কোনও সরকারি ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু বিধানসভার চলতি অধিবেশনেও রাজ্যের জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিল পেশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই-ই।
গত মার্চে ভূমিসংস্কার আইনের ১৪ ওয়াই ধারা সংশোধন করে বেশ কিছু শিল্পক্ষেত্রকে জমির ঊর্ধ্বসীমা-ছাড়ের আওতায় এনে বিল এনেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু দলীয় ইস্তাহার মেনে ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যের নতুন জমি-নীতি তৈরি করতে যে তৎপরতা দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (তিনিই আবার রাজ্যের ভূমিসংস্কারমন্ত্রী), এক বছর পরে তা অনেকটাই স্তিমিত। প্রস্তাবিত বিল কবে বিধানসভায় পেশ হবে, তা সঠিক ভাবে জানেন না রাজ্যের প্রথম সারির মন্ত্রীরাও। তাঁদের বক্তব্য, “একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন।”
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন, রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসেট্লমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১১’ বিলটি বিধানসভায় পেশ হওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরের শীতকালীন অধিবেশনে। সেই মতো তখন বিল ছাপানো হয়েছিল, যার প্রতিলিপি কয়েক জন বিধায়কের হাতেও চলে যায়। কিন্তু বিলে রাজ্যপালের সই না-থাকার কারণ দেখিয়ে সে বার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিধানসভায় বিল পেশ করেনি রাজ্য। কথা ছিল, এপ্রিলের অধিবেশনে বিল আসবে। মুখ্যমন্ত্রী রাজি না-হওয়ায় সে বারও তা ঠান্ডা ঘরে চলে যায়।
এই অধিবেশনেও বিল পেশ নিয়ে সংশয় কেন?
কারণ হিসেবে ‘বেসরকারি’ ভাবে দু’টো মত পাওয়া যাচ্ছে প্রশাসনিক মহল থেকে। এক অংশের বক্তব্য: ডিসেম্বরে বিলি হয়ে যাওয়া খসড়া বিলে কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে। পরিমার্জনের কাজ চলছে। তাই চলতি অধিবেশনে বিল পেশের সম্ভাবনা ক্ষীণ। অন্য অংশের মতে, কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার নতুন জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিল এখনও সংসদে পেশ করেনি। এই অবস্থায় রাজ্য নতুন আইন প্রণয়ন করলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই কেন্দ্রীয় বিল পেশের জন্য অপেক্ষা করা হবে।
বস্তুত কেন্দ্র নতুন আইন তৈরির আগেই রাজ্য তা করে ফেললে যে সমস্যা খাড়া হতে পারে, তা প্রথম বলেছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) অনিন্দ্য মিত্র। গত ডিসেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাবিত বিলের খসড়া বানিয়ে যখন এজি-কে পাঠানো হয়েছিল, তিনি তখনই তাঁর আপত্তির কথা জানিয়ে দেন। অনিন্দ্যবাবুর বক্তব্য ছিল: ১৮৯৪-এর জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধনী বিল সংসদে পেশ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিধানসভায় নতুন বিল আনা সঙ্গত হবে না, কারণ তাতে সংঘাত থেকে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। রাজ্য প্রশাসনের অনেকেও মনে করছেন, ১৮৯৪ সালের কেন্দ্রীয় আইনটি বলবৎ থাকাকালীন জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে রাজ্যের নতুন আইন কার্যকর করা মুশকিল। তাই অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
প্রশাসনিক-সূত্রের খবর: বিধানসভায় পেশের জন্য যে খসড়া বিল তৈরি হয়েছিল, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাকে আরও ‘বাস্তবসম্মত’ করে তোলার কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ব ঘোষণা মেনেই প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, বেসরকারি প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে না, এমনকী সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কোনও প্রকল্প হলেও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। তবে ‘বিশেষ প্রয়োজনে’ কিছু সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হলে জমিদাতাদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ বাবদ বিপুল পরিমাণ সরকারি সাহায্যের কথা বিলে বলা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, • অধিগ্রহণের সময়ে বাজার দর অনুযায়ী জমির দাম (গ্রামাঞ্চলে দ্বিগুণ) মেটানো • ১০০% সোলেসিয়াম • জমিদাতা পরিবারের এক জনকে গ্রুপ ডি’র চাকরি অথবা এককালীন ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা • এক বছর ধরে মাসিক ভিত্তিতে টাকা • অধিগৃহীত এলাকায় বাড়ি থাকলে বিকল্প বাড়ি বানিয়ে দেওয়া কিংবা নগদে ক্ষতিপূরণ • অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা ও পরিবহণ খরচ বাবদ অর্থ। উপরন্তু তফসিলি জাতি-উপজাতি ও বিভিন্ন ছোট পেশায় যুক্ত পরিবারগুলির ক্ষতিপূরণ-পুর্বাসনে আরও কিছু অর্থসাহায্যের প্রস্তাব রয়েছে।
এবং সরকারি সূত্রের দাবি, এর অনেক কিছুই এখন পাল্টানো হচ্ছে। কী রকম? যেমন, জমিদাতা পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়া মানে সেই চাকরি সরকারি না-ও হতে পারে। চুক্তি-ভিত্তিক কাজও হতে পারে। আবার প্রস্তাবিত নিয়মে একই এলাকায় পাশাপাশি দু’টি জমির একটি বেসরকারি মালিক কিনলে তার মালিক জমির দাম-সহ যে সুযোগ-সুবিধা পাবেন, সরকারি প্রকল্পের জন্য অপর জমিটি অধিগ্রহণ করা হলে তার মালিক অনেক বেশি দাম ও সুবিধা পাবেন। দেখা হচ্ছে, এই ‘বৈষম্য’ কী ভাবে দূর করা যায়। অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রেও ‘আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা’ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। “খসড়ায় অনেক কথা রয়েছে, যার অন্য ব্যাখ্যা হতে পারে। সে সব ঠিক করা হচ্ছে।” মন্তব্য করেন এক সরকারি মুখপাত্র। তবে সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রকল্পে (পিপিপি) জমি অধিগ্রহণের কোনও পরিকল্পনা এখনও রাজ্যের নেই। মুখ্যমন্ত্রী এখনও এ বিষয়ে অনড় বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
কারণ যা-ই হোক, এক বছরেও বিল পেশ না-হওয়ায় পুরনো কেন্দ্রীয় আইনেই রাজ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ভূমি দফতরের তথ্য বলছে, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় মিলিয়ে কয়েকশো প্রকল্পের জন্য পুরনো আইনেই অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে নতুন সরকার। নতুন আইন কার্যকর না-হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই চলবে।
সেটা কত দিন, তা অবশ্য কেউ জানে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.