বহুতলে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের পরও কলকাতা যে ‘সতর্ক’ হয়নি, ফের তার প্রমাণ মিলল। শনিবার ভোরে আগুন লাগল স্টিফেন কোর্টের প্রায় ‘সমসাময়িক’ আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোডের করনানি এস্টেটে। দমকলের তৎপরতায় এড়ানো গিয়েছে বড় বিপদ। এ দিন দুপুরেই আগুন লাগে লালবাজারের কাছে মার্কেন্টাইল বিল্ডিং-এও। দমকল দ্রুত তা নিভিয়ে ফেলে।
প্রশাসনিক তথ্য অনুযায়ী, স্টিফেন কোর্ট কাণ্ডের পরে প্রশাসন কলকাতার যে সব বাড়িকে ‘বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত করেছিল, তার তালিকায় ছিল ওই দুটি বহুতলও। বছর দু’য়েক আগে পুলিশ-পুরসভা-বিদ্যুৎ দফতর-সিইএসসি-দমকলের যৌথ পরিদর্শন কমিটি আগুন মোকাবিলায় করনানি এস্টেটের মালিকপক্ষ, বাসিন্দাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ‘নির্দেশ’ দেয়। তারপরও যে ছবিটা বদলায়নি, তা এ দিনের ঘটনায় স্পষ্ট।
আজকের ঘটনার জন্য রক্ষণাবেক্ষণের অভাবকেই দায়ী করছেন করনানি এস্টেটের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁরা জানিয়েছেন, খাতায়-কলমে ওই বহুতলে ২০৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৬৫-৭০ শতাংশই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়। ফ্ল্যাট মালিকদের নির্বাচিত কোনও কমিটিও নেই সেখানে। ফলে, রক্ষণাবেক্ষণের দিকে নজরই দেওয়া হয় না। স্টিফেন কোর্টের ঘটনার পর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বসানোর কাজ শুরু হলেও, মাঝপথে তা থমকে যায়। শুধু তা-ই নয়, প্রায় ৬৫ বছরের পুরনো ওই বহুতলের ছাদে গজিয়ে উঠেছে একটি বেআইনি বস্তিও। প্রায় পাঁচশো লোকের বাস সেখানে। |
ওই বহুতলটির ‘মালিক’ গজেন্দ্র ও মহেশ করনানি পুলিশকে জানিয়েছেন, ৬৫-৭০টি ফ্ল্যাট বাদে বাকি সবগুলিই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এ ভাবেই ওই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের ‘দায়’ও এড়িয়েছেন তাঁরা।
করনানি এস্টেটে আগুন লাগে এ দিন সকাল ৬টায়। দমকল সূত্রের খবর, ওই বহুতলের তিনতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ফলস সিলিং-এ কোনও ভাবে আগুন লেগে গিয়েছিল। ওই বহুতলের পাশেই রয়েছে একটি পেট্রোল-পাম্প। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাই দ্রুত ১১টি ইঞ্জিন পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে।
ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রচণ্ড ধোঁয়ায় তিনতলার অন্য একটি ফ্ল্যাটের কয়েকজন বাসিন্দাকে মই দিয়ে নীচে নামিয়ে আনা হয়। তবে কেউ হতাহত হননি বলে খবর।
বহুতলের প্রবীণ বাসিন্দা রোসেলিন খান্না বলেন, “হঠাৎ কেউ দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললআগুন, আগুন। বেরিয়ে দেখি করিডর ধোঁয়ায় ভর্তি। দ্রুত নীচে নেমে যাই।” ছাদের বস্তির বাসিন্দা বছর সত্তরের আসরম্মা জানান, “ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল চারপাশ। সবাই ভয়ে নীচে নামতে থাকে। আমিও ওঁদের সঙ্গে যাই।”
স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি ফরজানা চৌধুরী বলেন, “বহুতলটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে মেয়রকে নজর দেওয়ার অনুরোধ করব।”
ট্যাংরার পাগলাডাঙা রোডের একটি বস্তিতেও শুক্রবার গভীর রাতে বিধ্বংসী আগুনে প্রায় শ’খানেক ঘর পুড়ে যায়। দমকলের অনুমান, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে আগুন লাগে। ঘণ্টা চারেকের চেষ্টায় দমকলের বারোটি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর নেই।
৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জীবন সাহা জানান, সেচ দফতরের ওই জমি অনেক বছর ধরেই বেদখল। প্লাস্টিকের গোডাউন, দর্মা-বাঁশ-টালির বাড়ি তৈরি হয়েছে সেখানে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভার পরিকাঠামোয় সব জায়গায় নজরদারি সম্ভব নয়। তবে, যেখানেই নজরে আসছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” |