এ বার বিদেশি পর্যটক টানতে কোমর বাঁধছে পশ্চিমবঙ্গ।
তাঁদের আরও বেশি রাজ্যমুখী করতে দ্বিমুখী কৌশল নিচ্ছে পর্যটন শিল্প। এক, পড়শি দেশ ও রাজ্যের পর্যটন সংস্থাগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা। দুই, বিশ্ব মানচিত্রে বেড়ানোর গন্তব্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গকে নতুন ভাবে তুলে ধরতে কয়েকটি প্রথম সারির আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় যোগ দেওয়া। ওই সমস্ত মেলায় ‘ভিজিট বেঙ্গল-২০১৩’ নাম দিয়ে বিশেষ প্রচার চালাবে ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটর্স কাউন্সিল (আইটিওসি)। এই জোড়া কৌশল কার্যকর হলে, ২০১৩-এর মধ্যে রাজ্যে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা এবং তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া ব্যবসা দুই-ই অন্তত ৭% বাড়বে বলে আইটিওসি-র দাবি।
বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিকাঠামো ও বিপণনের অভাবে রাজ্য যে যথেষ্ট সংখ্যায় বিদেশি পর্যটক টানতে ব্যর্থ, এই অভিযোগ বহু দিনের। সমস্যা মেনে নিচ্ছে রাজ্যে বিদেশি পর্যটক আনার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির সংগঠন আইটিওসি-ও। |
দার্জিলিং জমজমাট। ভিড় কি আরও বাড়বে?-ফাইল চিত্র |
সম্প্রতি এক সাংবাদিক বৈঠকে ওই সংগঠনের কর্তারা জানান, ভিন্ দেশি পর্যটকদের একটা বড় অংশ দিল্লিকে কেন্দ্র করে রাজস্থান ও তার সংলগ্ন এলাকা ভ্রমণ করেন। কেরল-সহ দক্ষিণ ভারতেও বেড়াতে আসেন অনেকে। কিন্তু আগে যেমন ওই পর্যটকদের মধ্যে কলকাতা হয়ে বুদ্ধগয়া যাওয়ার চল ছিল, তা এখন কমেছে অনেকটা। বরং সরাসরিই তাঁরা চলে যাচ্ছেন বিহারের ওই পর্যটন কেন্দ্রে। একই ভাবে পর্যটক টানছে উত্তর-পূর্ব ভারতও। মাঝখান থেকে ব্যবসা হারাচ্ছে রাজ্য। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক উড়ানের সংখ্যা কমে যাওয়াও এই সমস্যার অন্যতম কারণ, অভিযোগ তাঁদের।
এই সব সমস্যার জট কাটিয়ে রাজ্যে বিদেশি পর্যটক টানতেই আপাতত পাঁচটি শহরের পর্যটন সংস্থার সঙ্গে হাত মেলানোর পথে এগোচ্ছে আই টি ও সি। শহরগুলি হল বারাণসী, ঢাকা, ব্যাঙ্কক, থিম্পু এবং কাঠমাণ্ডু। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে বারাণসী বা ঢাকায় আসা পর্যটকদের কাছে পশ্চিমবঙ্গকেও তুলে ধরবে সেখানকার পর্যটন সংস্থাগুলি। একই ভাবে চেষ্টা করা হবে থিম্পু, ব্যাঙ্কক বা কাঠমাণ্ডুতে পা রাখা পর্যটকদের বেড়ানোর পরিকল্পনায় এ রাজ্যকে জুড়ে দেওয়ার। পাশাপাশি, আগামী অগস্ট থেকেই লন্ডন, বার্লিন এবং এশিয়ার বিভিন্ন শহরে আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলাগুলিতে চলবে ভিজিট বেঙ্গল-২০১৩ শীর্ষক প্রচার। চেষ্টা হবে রাজ্যের পর্যটনকে স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরার।
আইটিওসি-র মতে, সব সময় কোনও এলাকা শুধু ঘুরে দেখার জন্যই যে বিদেশি পর্যটকেরা আসেন, তা নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সার্বিক ভাবে সেখানকার সঙ্গে পরিচিত হতে চান তাঁরা। জানতে চান তার ইতিহাস, এলাকার বিশেষত্ব ও অবশ্যই সংস্কৃতি। অনেক ক্ষেত্রে পরিচিত হতে চান স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার সঙ্গেও। তাই এ বার থেকে পর্যটনের প্রসারে এ সব কথা গোড়া থেকেই মাথায় রাখতে চায় তারা। খতিয়ে দেখতে চায়, কোন দেশ থেকে কী ধরনের পর্যটক ভারতে আসেন, তাঁদের চাহিদাই বা কেমন ইত্যাদি। তার পর সেই অনুসারে প্রচার কৌশল স্থির করতে চায় আইটিওসি। একই সঙ্গে, এলাকার সাধারণ মানুষও যাতে এই পর্যটন ব্যবসার অংশীদার হিসেবে সুফল পান, তা নিশ্চিত করতে চায় তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে রাজ্যে পা রেখেছিলেন ১১ লক্ষ ৯২ হাজার ভিন্ দেশি পর্যটক। আর তার দৌলতে প্রায় ৯৫ কোটি ডলার আয় করেছিল রাজ্য। যার একটা বড় অংশ এসেছে চিকিৎসা বা ব্যবসায়িক কারণে রাজ্যে পা রাখা ভিন্ দেশিদের কাছ থেকে। কিন্তু আইটিওসি-র মতে, রাজ্যে পর্যটনে যে পরিমাণ সম্ভাবনা রয়েছে, তার তুলনায় এই অঙ্ক নস্যি। তাই জোড়া উদ্যোগ ফলপ্রসূ হলে, রাজ্যে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে বলেই তাদের দাবি। |