ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি ও মিথমামা
দি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, সারা দিনের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সময়টুকু কোনটা, অধিকাংশ মানুষই উত্তর দেবেন, ঘুমের সময়টা। নিজের বিছানায়, পাশবালিশটাকে আঁকড়ে ছয়-সাত ঘণ্টার জন্য সব ভুলে ঘুমের মধ্যে তলিয়ে যাওয়া। ঘুম যদি ঠিকঠাক না হয়, তা হলে দিনের বাকি সময়টুকু বরবাদ হতে বেশি সময় লাগে না। ঘুমের সঙ্গে যে খাওয়াদাওয়ার গভীর সম্পর্ক আছে, এটা আলাদা করে আর বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ঘুমের জন্য কী খাওয়া উচিত বা কোনটা খেলে চোখের পাতা থেকে ঘুম পালিয়ে যায় তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা আছে। আসুন, এগুলো কাটিয়ে ফেলা যাক।
রাতে ঘুমের আগে টুকটাক মুখ চালানো আপনার বহু দিনের অভ্যেস। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় জিনিস দেখলে তো আর নিজেকে সামলাতেই পারেন না, আর সচেতন ভাবেই আপনি সামলাতেও চান না। কারণ আপনার বহু দিনের ধারণা, ঘুমের আগে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার ঘুমে সাহায্য করবে। আসল ঘটনাটা কিন্তু এক্কেবারে উল্টো। খাবারে যদি চিনির পরিমাণ বেশি হয়, তা হলে ব্লাড শুগার-এর মাত্রা বেশি ওঠা-নামা করতে থাকে। শরীরে একটা অস্বস্তি থাকে বলে ঘুমটাও গাঢ় হতে পারে না। তা ছাড়া বেশি পরিমাণে চিনি পেটে ঢুকলে পলিইউরিনেশন-এর সমস্যা দেখা যায়। বার বার টয়লেটে দৌড়তে হলে ঘুম আর ভাল হবে কী করে? হালকা স্ন্যাক খাওয়ার অভ্যেস থাকলে সরল কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ চিনি মেশানো খাবার না খেয়ে বিস্কুট খেতে পারেন। ভাল হয় যদি এতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং সামান্য ক্যালশিয়ম তিনটিই থাকে। আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষের জন্য যে দশটি অ্যামিনো অ্যাসিড ব্যবহার করে, তার মধ্যে অন্যতম ট্রিপটোফ্যান। মস্তিষ্ক ট্রিপটোফ্যান ব্যবহার করে তৈরি করে মেলাটোনিন। শরীরের সারকাডিয়ান রিদম বা নিদ্রা-জাগরণের আবর্তটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এই মেলাটোনিন। যে হেতু এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে সাহায্য করে ক্যালশিয়ম, তাই রাতের খাবারে ক্যালশিয়ম থাকা উচিত।
রাতে ডিনার শেষে কোল্ড ড্রিঙ্ক-এর গ্লাসে অল্প অল্প চুমুক। নিমেষে গায়েব পেট আইঢাই, অম্বলের ভাব। ভাবলেন, কেল্লা ফতে। টেনে একটা ঘুম দেবেন। ভুল ভাবছেন কিন্তু। নিউট্রিশনিস্ট রেশমি রায়চৌধুরী জানালেন, কোল্ড ড্রিঙ্কে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাসকে নির্দিষ্ট চাপে তরল অবস্থায় রাখা থাকে, যা খাওয়ার পর গ্যাস বা অম্বলের ভাবকে সাময়িক ভাবে তাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষণ পর পাকস্থলীতে ঢুকে এই তরল আবার কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি করে। ফলে পেটে তৈরি হয় গ্যাস, আনচান করে শরীর, স্বস্তির বদলে বাড়ে অস্বস্তি। আবার, রাতে অনেকেরই কোল্ড কফি খাওয়ার অভ্যেস আছে। এতেও কিন্তু ঘুম ভাল হয় না। কারণ, কফিতে থাকা ক্যাফিন আমাদের নার্ভাস সিস্টেম-কে অবশ করে ঘুম আনার বদলে উত্তেজিত করে তোলে। ঠিক এই কারণেই সকালে উঠে কোকো বা কফি খেয়ে আমরা তরতাজা হয়ে উঠি। ক্যাফিন-এর প্রভাব থাকে অন্তত ছয় ঘণ্টা। চেষ্টা করুন, রাতে ক্যাফিন যুক্ত যে কোনও পানীয় থেকেই দূরে থাকতে।
কেউ যদি বলেন, আমি রোজ টিভির সামনে বসেই তো ঘুমোই, তা হলে তাঁর কথা খুব ভাল করে যাচাই করা দরকার। কারণ, আমাদের ঘুমে সাহায্য করে মেলাটোনিন নামে এক ধরনের হরমোন। এর ক্ষরণ অন্ধকারে বৃদ্ধি পায়। টিভি, কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনের স্ক্রিন থেকে যে কৃত্রিম আলো বেরোয়, তা এই মেলাটোনিন তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে ঘুম আসতে চায় না। কৃত্রিম আলো আমাদের সারকাডিয়ান রিদম বা নিদ্রা-জাগরণের আবর্তটিতেও ব্যাঘাত ঘটায়। অনেক সময় টিভি বা কম্পিউটার আমাদের মুড ভাল করে দেয়। এই ফুরফুরে মানসিক ভাব থেকে ঘুমের একটা আমেজ আসতে পারে, কিন্তু গভীর ঘুম একেবারেই নয়।
অনেকেরই ধারণা, গরম দুধ খেলেই রাতে একখানা নিশ্চিন্ত ঘুম হয়, আর তাতেই মগজ একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়। আসলে, দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান। এটি সেরোটোনিন নামে এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি করে। সেরোটোনিন আমাদের স্ট্রেস কমিয়ে এক ধরনের ফুরফুরে ভাব নিয়ে আসে। ফলে একটা ঘুম ঘুম ভাব আপনা থেকেই চলে আসে। তবে সম্প্রতি দুধ নিয়ে গবেষণায় একটা নতুন দিকও উঠে আসছে। দেখা গিয়েছে যে, দুধ ঘুমের ধরনকে তেমন প্রভাবিত করতে পারে না। কারণ, বিশুদ্ধ ট্রিপটোফ্যান খেলে যতটা আচ্ছন্ন ভাব তৈরি হয়, দুধের মতো ট্রিপটোফ্যান যুক্ত খাবার সম্ভবত অতটা আচ্ছন্ন ভাব তৈরি করতে পারে না। তাই দুধ খেলাম, আর সঙ্গে সঙ্গে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম এটা ঠিক ধারণা নয়। বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা চলছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.